খেলাধূলায় স্কুলের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল সঠিক ভূমিকা না নিলে কী পরিণাম হয় তা সম্প্রতি দেখা গেল হুগলির আরামবাগ মহকুমায়। সুব্রত কাপ ফুটবলের ব্লকস্তরের খেলায় আরামবাগ মহকুমার স্কুলগুলির অংশগ্রহণের বহর দেখে সকলের চোখ কপালে। হতাশ প্রশাসন।
বস্তুত, আরামবাগ মহকুমার স্কুলগুলিতে খেলাধূলার চর্চা যে ক্রমশই কমে আসছে সুব্রত কাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে গেল। অথচ, ফুটবল খেলাকে জনপ্রিয় করে তুলতে মহকুমা প্রশাসনের নানা চেষ্টা করছে সেখানে। এ বছরই প্রথম জাতীয় স্তরে স্কুল ছাত্রদের ফুটবল প্রতিযোগিতা সুব্রত কাপ ব্লক স্তর পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকের মধ্যে আরামবাগ, খানাকুল ১ এবং পুড়শুড়া ব্লকে খেলা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু স্কুলগুলির অংশগ্রহণের চিত্র আদৌ আশাব্যঞ্জক নয়।
সম্প্রতি আরামবাগ ব্লকের দু’টি বিভাগেই খেলা হয়ে গেল। অনূর্ধ ১৪ বছর বিভাগে একটি মাত্র স্কুল নাম দেয়। অগত্যা অংশগ্রহণকারী বালি উচ্চ বিদ্যালয়কেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। অনূধ্বর্র্ ১৭ বছর বিভাগে অংশগ্রহণকারী স্কুলের সংখ্যা ২টি। পারুল উচ্চ বিদ্যালয় এবং বালি উচ্চ বিদ্যালয়। পারুল উচ্চ বিদ্যালয় টাইব্রেকারে সাডেন ডেথ-এ জেতে। অনূর্ধ ১৪ বিভাগে একমাত্র মলয়পুর উচ্চ বিদ্যালয় অংশগ্রহণ করে। অনূর্ধ ১৭ বিভাগে মলয়পুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং প্রতাপনগর উচ্চ বিদ্যালয় নাম দেয়। ওই খেলায় মলয়পুর ৩-০ গোলে প্রতাপনগরকে হারায়। খেলাটি হয় জয়রাম মাঠে।
প্রায় একই চিত্র খানাকুল ১ নম্বর ব্লকে। খানাকুল ফুটবল মাঠে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অনূর্ধ ১৪ বিভাগে একটি মাত্র স্কুল অংশগ্রহণ করে। অনূর্ধ ১৭ বিভাগে অংশগ্রহণ করে ৩টি স্কুল। কে কে জ্ঞানদা উচ্চ বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়। পুড়শুড়া ব্লকে অনূর্ধ ১৪ বিভাগে মাত্র দু’টি স্কুল অংশগ্রহণ করে। অনূর্ধ ১৭ বিভাগে নাম দেয় ৪টি স্কুল। দু’টি বিভাগেই সোদপুর উচ্চ বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়।
অর্থাৎ তিনটি ব্লক মিলিয়ে দু’টি বিভাগে ১৬টি দল (এর মধ্যে একই স্কুল ২টি বিভাগে যোগ দিয়েছে, এমনও আছে) প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়। অথচ ৩টি ব্লকে উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮৬ (আরামবাগে ৩৮টি, খানাকুল ১ ব্লকে ২৯টি এবং পুড়শুড়ায় ১৯টি)।
খেলায় অংশগ্রহণের এই হাল কেন?
আরামবাগের বিডিও মৃণালকান্তি গুঁই, খানাকুল ১ নম্বর ব্লকের বিডিও সুপ্রভীত চট্টোপাধ্যায় এবং পুড়শুড়ার বিডিও সম্রাট মণ্ডলদের বক্তব্যের সুর একই ফুটবল খেলা নিয়ে স্কুলগুলি উদাসিন। অন্য দিকে, স্কুল কর্তৃপক্ষগুলি কেউ অপারগতা স্বীকার করেছেন। কেউ আবার গরম এবং পরীক্ষাকে এ জন্য দায়ী করছেন। অনেকেরই অবশ্য দাবি, প্রতিযোগিতার কথা তাঁরা জানতেনই না। যেমন আরামবাগ বয়েজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অশোক বৈরাগ্য, জয়রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ মণ্ডল, ঘরগোয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমিত সরকাররা বলেছেন, “প্রতিযোগিতার ব্যাপারে কোনও চিঠি দেওয়া হয়নি। মৌখিক ভাবেও কিছু জানানো হয়নি।”
পুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনন্দমোহন কুণ্ডুর আবার বক্তব্য, “বিষয়টি জেনেছিলাম। কিন্তু প্রস্তুতি ছিল না। খেলার সরঞ্জামও ছিল না।” দলগঠন এবং প্রস্তুতির অভাবের কথা বলেছেন নৈসরাই উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদুর, কাপসিট প্রভৃতি অন্তত ২০টি স্কুলের কর্তৃপক্ষ। ডোঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিভাস মুখোপাধ্যায় ছেলেদের ফুটবল অনীহার জন্য সার্বিক পরিকাঠামোকে দায়ি করেছেন। তাঁর কথায়, “গ্রামে-গঞ্জে ফুটবল খেলা, শরীরচর্চার পাঠ চুকে গিয়েছে। ক্রিকেট নিয়ে তবু উৎসাহ দেখা যায়। ফুটবলে একটুও নয়। অভিভাবকরাও ফুটবল খেলায় ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দেন না।” সুব্রত কাপ প্রতিযোগিতায় বুট পড়ে খেলা বাধ্যতামূলক। সেই সরঞ্জামের অভাবের কথাও বলছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “যোগাযোগের অভাবে অনেক স্কুল জানতে পারেনি, এটা সত্যি। কোনও তহবিল না থাকায় প্রচারের অসুবিধা হয়েছে। পরবর্তীকালে এই সমস্যা কাটানোর চেষ্টা করা হবে।” |