বাবা-মা দু’জনেই দিনমজুর। কাজের জন্য দু’জনেই বাড়ির বাইরে ছিলেন। সেই সময়ে ঘরে আগুন লেগে মৃত্যু হয়েছে ৬ ভাইবোনের। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে মিরিক থানার লোয়ার জিম্বাগাঁও এলাকায়। দুর্গম ওই এলাকা থেকে শুক্রবার সকালে থানায় খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম অসিত তামাং (১২), স্নেহা তামাং (১০), কবীর তামাং (৯), শচীন তামাং (৮), ভাইচুং তামাং (৭) এবং নেহা তামাং (২)।
দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “মৃত শিশুদের পরিবারের লোকজনকে যথাসাধ্য সাহায্য করা হবে।” দার্জিলিংয়ের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রাজা বলেন, “রান্নাঘর থেকে আগুন লেগেছে বলে মনে হচ্ছে। ময়না-তদন্তের জন্য দেহগুলি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিশুদের বাবা অর্জুন বৃহস্পতিবার সকালে কাজের জন্য মিরিক যান। তাঁর স্ত্রী শোভা পাশের গ্রামের একটি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে রান্নার কাজ করেন। সন্ধ্যায় ওই কাজের জন্য টাকা নিতে তিনিও বার হন। তার আগে রাতের রান্না করেন তিনি। শিশুদের ঘরে বসে টিভি দেখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বাইরে যান।
প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে, রান্নার আগুন পুরোপুরি নিভে না যাওয়ায় ওই ঘটনা ঘটেছে। রান্নাঘরটি মুলি বাঁশের বেড়া এবং ত্রিপল দিয়ে তৈরি। পাশের থাকার ঘরটি কাঠের তৈরি। ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
শিশুদের মন টেলিভিশনের দিকে থাকায় তারা ঘর থেকে বেরোতে পারেনি।
ওই গ্রামে ছাড়া আরও দু’টি পরিবার থাকে। প্রায় ৩০০ মিটার দূরে আরও কিছু বাড়ি রয়েছে। ওই এলাকার দু’টি পরিবারের লোক আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও কোনও লাভ হয়নি। রাতে শিশুদের বাবা-মা ফিরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। রাতে আর পুলিশকে খবর দেওয়া হয়নি। বাসিন্দারা জানান, মিরিক থানা থেকে ছয় কিলোমিটার গাড়িতে যাওয়ার পর আরও অন্তত ২ ঘণ্টা হাঁটা পথে ওই বাড়িতে যেতে হয়। স্বাভাবিক ভাবেই রাতে গ্রামের বাসিন্দারা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারেননি। এ দিন সকালে গ্রামের এক বাসিন্দা মিরিক থানায় গিয়ে ঘটনাটি জানান। পরে সেখানে পুলিশ যায়। কার্শিয়াংয়ের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নিমা নরবু ভুটিয়া বলেন, “শিশুদের শরীরের বেশিরভাগ অংশই পুড়ে গিয়েছে। শরীর দেখে চিহ্নিত করতে হয়েছে।”
কার্শিয়াংয়ের মোর্চা বিধায়ক রোহিত শর্মাও ঘটনাস্থলে যান। তিনি জানান, বাবা-মা দু’জনেই ভেঙে পড়েছেন। তাঁরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান, সেটা দেখা হবে। |