ট্রেন আটকে ‘প্রতিবাদ’, মানে হয়রানি। ট্রেন রুখে ‘প্রতিরোধের’ অর্থ, ভোগান্তি। এই যুক্তিতেই রেললাইনে নেমে ফের অবরোধ তুললেন বসিরহাটের নিত্যযাত্রীরা। সরিয়ে দিলেন লাইনের উপরে ডাঁই করে রাখা সব্জির ঝুড়ি, ডিমের বাক্স।
শুক্রবার সকালের এই ঘটনা উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট স্টেশনে নতুন নয়। আগেও বার দু’য়েক এই স্টেশনে রাজনৈতিক দলের রেল অবরোধ তুলে দিয়েছিলেন যাত্রীরা। আগে একই ভাবে ট্রেন অবরোধের বিরোধিতা দেখা গিয়েছে কোচবিহারে, অশোকনগরে, যার শুরুটা হয়েছিল বছর দু’য়েক আগে উত্তর ২৪ পরগনার বামুনগাছি থেকে।
বারাসত ও সন্ডালিয়ার মধ্যে ডাবল লাইনের প্রায় শেষ মুহূর্তের কাজ চলেছে। আগামী দু’মাসের মধ্যে ওই লাইনে পুরোদমে ট্রেন চালু করতে চান পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। তাই প্রায় দেড় বছর ধরে ওই লাইনে সব ট্রেনই দেরিতে চলছে। তারই প্রতিবাদে এ দিনের অবরোধ। পূর্ব রেলের এক অফিসার বলেন, “ডাবল লাইনের কাজের জন্য যে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে, সে কথা বারেবারে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হচ্ছে। মাইকেও প্রচার করা হচ্ছে।”
অথচ, ট্রেন দেরিতে চলায় তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন এবং সময়মতো সব্জি, ডিম নিয়ে শিয়ালদহে যেতে পারছেন নাএই অভিযোগে এ দিন ভোর ৫টা থেকে অবরোধ শুরু করেন বিক্রেতারা। বহু মহিলাও ভোরের ট্রেনে বসিরহাট থেকে কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করতে যান। তাঁরাও অবরোধে সামিল হন। এর মধ্যে ৫টা ২০ মিনিটের শিয়ালদহগামী ট্রেন বাতিল হওয়ায় বিক্ষোভ বাড়ে।
অবরোধের জেরে কয়েকটি ট্রেন বাতিল হয়। সমস্যায় পড়েন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং অফিসযাত্রীরা। এ নিয়ে অবরোধকারীদের সঙ্গে তাঁদের বচসাও বাধে। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, রেল পুলিশ এবং বসিরহাট থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী এলেও অবরোধ তুলতে ‘তৎপর’ হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা অবরোধকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করে বিফল হন। রেল কর্তৃপক্ষ সময়মতো ট্রেন চালানোর আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ তোলা হবে না, এই দাবিতে অনড় থাকেন বিক্ষোভকারীরা। এই পরিস্থিতিতে অতিষ্ঠ হয়ে কিছু যাত্রী প্রথমে জোড়হাতে বিক্ষোভকারীদের কাছে অবরোধ তোলার অনুরোধ জানান। তাতে বরফ গলেনি। শেষে যাত্রীদের একাংশ লাইনে নেমে সব্জি ও ডিম বিক্রেতাদের ঝুড়ি-বাক্স সরিয়ে দেন। মারমুখী যাত্রীদের দেখে বিক্ষোভকারীরা সরে পড়েন। ৯টা থেকে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অবরোধে আটকে পড়া যাত্রী সুকুমার সরকারের বক্তব্য, “অবরোধে মানুষের হয়রানি ছাড়া হয়টা কী?” কলকাতায় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পথে অবরোধে আটকে পড়া বসিরহাটের বৃদ্ধ মনোরঞ্জন ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “এখানকার মানুষ বিচিত্র। সুবিধার জন্য ডাবল লাইন, স্টেশনের উন্নতি চাইবেন। অথচ, সেই কাজের জন্য যদি ট্রেন সময়ে না চলে, তা হলে বহু যাত্রীর অসুবিধা করে অবরোধ করবেন!” |