এলাকার মানুষ জমি দান করতে রাজি হওয়ায় গাইঘাটার ঠাকুরনগরে প্রস্তাবিত কলেজ তৈরির ক্ষেত্রে জমি-জট কাটতে চলেছে। কলেজ তৈরির জন্য প্রাথমিক ভাবে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর থেকে মিলেছিল ৩.৯৯ একর জমি। অথচ প্রয়োজন ৫ একর বা ১৫ বিঘা। স্থানীয় কয়েকজন জমি মালিক সাড়ে ৫ বিঘা করে জমি দান করতে রাজি হওয়ায় জমির সমস্যা মিটতে চলেছে।
সম্প্রতি রাজ্য সরকার গাইঘাটায় কলেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। রাজ্য বাজেটেও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র কলেজ তৈরির ঘোষণা করেন। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “বড়মার (মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণি ঠাকুর) ইচ্ছা, প্রস্তাবিত কলেজটি ঠাকুরনগরে তৈরি হোক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই প্রস্তাবের মর্যাদা দিয়ে ঠাকুরনগরে কলেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” বাজেটের পর জ্যোতিপ্রিয়বাবু, গাইঘাটার বিধায়ক ও ত্রাণমন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর, বনগাঁ দক্ষিণকেন্দ্রের বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাস জমি চিহ্নিত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন ঠাকুরনগরের জন্য জমি খুঁজতে। এই মাসে ওই তিন জন এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের উপস্থিতিতে ঠাকুরনগর চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশের একটি সরকারি জমি দেখা হয়। ঠিক হয়, ওই জায়গায় কলেজ তৈরি হবে।
প্রস্তাবিত কলেজের জন্য চিহ্নিত জমির কাছে একটি পুকুর আছে। পুকুর ছাড়া জমির পরিমাণ ৩.৯৯ একর। কিন্তু কলেজ তৈরি করতে ৫ একর বা ১৫ বিঘে জমি প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষা দফতরের প্রতিনিধিরা ওই এলাকা দেখে সে কথা জানিয়েও দেন। ফলে জমি নিয়ে জটিলতা হয়। সমস্যা মেটাতে মঞ্জুলবাবু, সুরজিতবাবু ছাড়াও পঞ্চায়েত প্রধান এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে সোমবার ঠাকুরবাড়িতে বৈঠক হয়। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে জমির সমস্যা মিটে গিয়েছে জানিয়ে সুরজিৎবাবু বলেন, “ওই পুকুরের পশ্চিম পাড়ে যাদের জমি রয়েছে তাদেরও বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। সাড়ে ৫ বিঘা করে জমি, জমি মালিকেরা কলেজকে দান করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
বৈঠকে স্থির হয়েছে, জমি দান করলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে কিছু টাকা সংগ্রহ করে জমি মালিকদের দেওয়া হবে। জমি দেওয়া পরিবারের এক সদস্যকে চাকরি দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে জানিয়ে সুরজিৎবাবু বলেন, “আগামী সোমবারের মধ্যে উচ্চশিক্ষা দফতরের পক্ষে জেলাশাসককে জমির দানপত্র দেওয়া হবে।” জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রী ওই কলেজের শিলান্যাস করবেন। মঞ্জুলবাবু বলেন, “কলেজের নাম আমার বাবা প্রয়াত প্রমথরঞ্জন ঠাকুর মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট কলেজ করার প্রস্তাব উচ্চশিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। বাবার ইচ্ছা ছিল এলাকায় একটি কলেজ তৈরি হবে। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এ ব্যাপারে তিনি আফসোস করে গিয়েছেন।”
এ দিকে, পুকুরের পাড়গুলো টিনের বেড়া দিয়ে বাঁধানোর কাজ শুরু হয়েছে। যা নিয়ে স্থানীয় কিছু মানুষ আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁদের কথায়, “পুকুরের পাড় বাঁধানো হলেও জলাজমি কিছুটা ভরাট হয়ে যাবে।” মঞ্জুলবাবু বলেন, “পুকুরের পাড়গুলো সব ভেঙে গিয়েছে বলে ঠিক করা হচ্ছে। পুকুর ভরাটের প্রশ্নই ওঠে না। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে পুকুর সংস্কার হবে।” অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিডিও-র কাছ থেকে জেনেছি পুকুরের পাড় বাঁধানো হচ্ছে। পুকুর ভরাট হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।” সঞ্জয়বাবু জানান, ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের অধীনে থাকা জমি উচ্চশিক্ষা দফতরকে হস্তান্তর করতে বিএলএলআরওকে নথিপত্র ঠিক করতে বলা হয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে গাইঘাটার চাঁদপাড়ার কাছে সরকারি কৃষি খামারের জমিতে একটি কলেজের শিলান্যাস করেছিলেন। সুরজিৎবাবু বলেন, “রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি খামারের জমিতে কৃষিভিত্তিক কোনও কাজই হাতে নেওয়া হবে। কৃষিজমি নষ্ট করা হবে না।” |