গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে ছাত্রীকে খুনের কথা কবুল করল এক যুবক। শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের শ্রীনগর গ্রামের ঘটনা। ধৃতের নাম আশাদুল মণ্ডল ওরফে সাবির। বাড়ি ওই গ্রামেই। বুধবার গ্রামের অদূরে একটি মাঠে গ্রামেরই নবম শ্রেণির ছাত্রী সাহিনা সুলতানার ক্ষতবিক্ষত দেহ মেলে। গ্রামবাসীর দাবি এ দিন সন্দেহবশত তাকে মারধর করতেই সে শ্লীলতাহানির পরে ওই ছাত্রীকে খুনের কথা কবুল করে। বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার ধরা পড়ার পর আশাদুলকে জেরা করেন।
জেলার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “সাহিনাকে মাঠে নিয়ে গিয়ে অত্যাচারের চেষ্টা করেছিল তার দূরসম্পর্কের আত্মীয় আশাদুল। ঘটনার কথা বলে দেবে বলায় আশাদুল নামে ওই যুবক সাহিনাকে খুন করেছে বলে সন্দেহ হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দেড়েক আগে শ্রীনগর গ্রামেই আশাদুলের বিয়ে হয়। বিয়ের ব্যবস্থা
|
আশাদুল। |
করেন সাহিনার বাবা আব্দুস সামাদ। স্ত্রী’র গ্রামেই, আব্দুস সামাদের বাড়ির পাশেই থাকত পেশায় দোরজি আশাদুল। সাহিনার দূর সম্পর্কের জামাইবাবু ছিল আশাদুল। পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে বাসিন্দারা জানতে পারেন ঘটনার পর থেকেই বাড়ি থেকে বেরোনো, খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছে আশাদুল। তাকে চেপে ধরতেই সে জানায়, মঙ্গলবার রাতে সে জরুরি দরকার আছে বলে সাহিনাকে ডাকে। এর পরে মাঠে নিয়ে গিয়ে তাকে কুপ্রস্তাব দেয়। তার শ্লীলতাহানি করে। সাহিনা ওই কথা বাড়িতে বলে দেবে জানালে সে রেগে গিয়ে মাঠে পড়ে থাকা বাঁশের চটা গিয়ে মারতে থাকে সাহিনাকে। সাহিনা পড়ে যেতেই তার গলা টিপে ধরে আশাদুল। তার পর ডোবার জলে রক্ত ধুয়ে বাড়ি ফেরে। পুলিশ জানায়, তখনই জানালে হয়তো সাহিনা বেঁচে যেত। কিন্তু সারারাত ঝড়বৃষ্টিতে মাঠে ওই ভাবে পড়ে থাকায় সে মারা যায়। |
বাড়ি ফিরেই অবশ্য বাকিদের সঙ্গে সাহিনাকে খুঁজতে বার হয় আশাদুল। এমনকী, দেহ উদ্ধারের সময়ও সে ঘটনাস্থলে ছিল। তার পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে গ্রামবাসীর সন্দেহ হয়। আশাদুল পুলিশকে জানিয়েছে খুনের উদ্দেশ্য তার ছিল না। ঘটনার কথা বাড়িতে বলে দেওয়ার ভয় দেখালে সে এই কাজ করে। তবে এই ঘটনায় বছর বাইশের আশাদুলের সঙ্গে আর কেউ জড়িত ছিল কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
গ্রামের মধ্যে এই ঘটনায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা। তাঁরা স্থানীয় বেঁকি মোড়ে একটি সেলুনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। অভিযোগ, সম্প্রতি ওই সেলুনে কিছু দুষ্কৃতী মহিলাদের উত্যক্ত করত। নিহতের কাকা আবেদ আলি বলেন, “ছেলেটা গরিব বলে ওর বিয়ে দিয়ে আনলাম। ও যাতে সেলাইয়ের ব্যবসা করতে পারে তার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলাম। সে যে এই সর্বনাশ করবে তা ভাবতেও পারিনি।” শ্রীনগর-মাটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আব্দুস সাত্তার বলেন, “আমরা চাই দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক। আতঙ্ক দূর হোক। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে আসুক।” |