একেই বোধহয় বলে বিধি বাম। বহু অপেক্ষার পরে সম্প্রতি নদিয়া জেলা সফরে এসে তেহট্ট ও হরিণঘাটাকে পুরসভা করা হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তেহট্টের মানুষ ভেবেছিলেন এতদিনের ধৈর্যর ফল বুঝি মিষ্টিই হবে। কিন্তু সদ্য ঘোষিত সেই প্রস্তাবিত এলাকার তালিকায় কিছু জায়গা বাদ পড়েছে দাবি করা হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে তেহট্ট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তেহট্ট, খাসপুর এবং কুলগাছি মৌজা নিয়ে গঠিত হওয়ার কথা প্রস্তাবিত তেহট্ট পুরসভার। মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন, “ওই তিনটি মৌজা নিয়েই প্রস্তাবিত পুরসভা গঠিত হবে বলে সরকারি ভাবে একটি বিজ্ঞপ্তি করা হয়েছে।” তবে এলাকার সাধারণ মানুষের বক্তব্য, ওই পুরসভার প্রস্তাবিত এলাকা আরও বাড়ানো দরকার। কারণ, শুধু প্রস্তাবিত ওই তিনটি এলাকা নিয়ে তেহট্ট পুরসভা হলে বাদ পড়ে যাচ্ছে তেহট্ট মহকুমা আদালত, এসডিপিও অফিস, মহকুমা ভূমি সংস্কার দফতর, মহকুমা কৃষি দফতর, বিদ্যুৎ বিভাগের ডিভিশনাল অফিস। এ ছাড়াও গরিবপুর, সোনাদহপাড়া ও ‘তেহট্টের মুখ’ বলে পরিচিত হাওয়ালিয়া পার্ক মোড়ের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গাও বাদ পড়ে যাচ্ছে। এই সব এলাকাই নাটনা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ছে। এলাকার বাসিন্দা প্রণব বিশ্বাস বলেন, “তেহট্ট শহরের মধ্যেই রয়েছে নাটনা গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকা। তাই শহরের কয়েকটি প্রধান সরকারি দফতর ভৌগোলিক ভাবে নাটনা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। এখন সেই এলাকাগুলিকে যদি প্রস্তাবিত পুরসভার চৌহুদ্দি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে সাধারণ মানুষের খুবই অসুবিধা হবে।” নাটনা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা তেহট্ট ১ ব্লক কৃষক সভার সম্পাদক সিপিএমের ভক্তরাম ঘোষের অভিযোগ, “নাটনা গ্রাম পঞ্চায়েতটি যেহেতু সিপিএমের দখলে আছে তাই এই পঞ্চায়েত এলাকাকে পুরসভার বাইরে রাখা হচ্ছে।” তিনি বলেন, “অথচ এর আগে তেহট্ট পুরসভা নিয়ে প্রস্তাবের ক্ষেত্রে সর্বদলীয় সিদ্ধান্তই ছিল যে, প্রস্তাবিত এলাকার মধ্যে নাটনা গ্রাম পঞ্চায়েতের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোকেও ধরা হবে। কিন্তু নতুন সরকার আসার পরে দেখা যাচ্ছে নাটনা এলাকার কোনও অস্তিত্বই নেই।” তৃণমূলের তেহট্ট ১ ব্লক সভাপতি সঞ্জয় দত্ত বলেন, “একটি ভাল কাজ করার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সিপিএমের কিছু লোক।”
মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন, “এলাকা নিয়ে এই উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। কারণ সরকারি বিবৃতিটিতে পরিষ্কার করেই বলে দেওয়া হয়েছে যে, কারও যদি প্রস্তাবিত পুরসভার এলাকা নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকে, তা হলে তিনি তা প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে জানাতে পারেন।” ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে প্রায় মাসখানেক আগে। অচিন্ত্যবাবু বলেন, “বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে তিন মাস পর্যন্ত সময় রয়েছে প্রস্তাবিত এলাকা নিয়ে বক্তব্য জানানোর। তারপরে সে সব খতিয়ে দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” |