দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
খুলল দোকান
অসমাপ্ত আবাসন
কাজ এখনও শেষ হয়নি। হয়নি বিদ্যুৎ ও জলের সংযোগও। অভিযোগ, এর মধ্যেই কলকাতা পুরসভার অনুমতি ছাড়া কয়েক জন অসমাপ্ত আবাসনেই দোকান খুলে বসেছেন। দারিদ্রসীমার নীচের মানুষদের জন্য বেহালা শিবরামপুরের কাছে ব্যানার্জিপাড়ায় নির্মীয়মান আবাসনের হাল এখন এমনই।
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ২০০৯-এ এই আবাসনের পরিকল্পনা করা হয়। ব্যানার্জিপাড়ায় দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী নির্মাণ-শিল্প শ্রমিকদের একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী নিজেদের জমি আবাসন নির্মাণের জন্য পুরসভাকে হস্তান্তর করে। ওই আবাসনে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরাই থাকবেন বলে ঠিক হয়। জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশনের অন্তর্গত ‘বেসিক সার্ভিসেস ফর আর্বান পুওর’ প্রকল্পে এখানে ২৭০ বর্গফুটের মোট ৩২টি ফ্ল্যাট তৈরির কথা। মোট খরচের ৫০ শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকার, ৩০ শতাংশ রাজ্য সরকার এবং বাকি ২০ শতাংশ পুরসভা ও আবাসিকরা দেবেন বলে ঠিক হয়।
স্থির হয়েছিল আবাসিকরা তিরিশ হাজার টাকা দিলে ফ্ল্যাট পাবেন। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধার্য হয় প্রায় এক কোটি টাকা। ওই বছরেই একটি নির্মাণ-সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়। নির্মাণ শুরু হয় ২০১০-এ। সিদ্ধান্ত হয়, ২০১১-র প্রথম দিকে কাজ শেষ হবে। কিন্তু কাজ এখনও শেষ হয়নি।
পুরসভার ১২৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর তৃণমূলের শ্যামাদাস রায় বলেন, “আবাসনে কারা থাকবেন তাঁদের তালিকা আমার কাছে নেই। পুর-কর্তৃপক্ষকে তালিকা দিতে বলেছি।” কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বস্তি) অতীন ঘোষ বলেন, “কাজ একটু ব্যাহত হয়েছে ঠিকই। এই কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার ব্যাপারে ঠিকাদার সংস্থাকে চিঠি দেব।”
কাজ এখনও শেষ হল না কেন?
ঠিকাদার সংস্থার অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার রাজীব ঘোষ বলেন, “কাজ অনেকটাই হয়ে গিয়েছে। টাকার অভাবে বাকি কাজ আটকে রয়েছে। পুরসভাকে এই ব্যাপারে চিঠি দিয়েছি।” অতীনবাবু বলেন, “এখনও চিঠি পাইনি। পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুরসভার এক আধিকারিক জানান, জমি হস্তান্তরের সময়ে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী স্বনির্ভর গোষ্ঠীভুক্ত যে ৩২টি পরিবার ওখানে বাস করতেন তাঁরাই ফ্ল্যাট পাবেন। যাঁদের দোকান ছিল তাঁরা দোকান পাবেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীটির সংগঠক শঙ্কর দাস বলেন, “ঠিকাদার সংস্থা আমাদের আবাসন নির্মাণের কাজে নিয়োগ করে। বাড়ি তৈরির মূল কাজ শেষ হলেও জল ও বিদ্যুতের মতো অনেক কাজ বাকি আছে। কবে ফ্ল্যাট পাব তা নিয়ে আমরা দোলাচলে রয়েছি।”
এই আবাসনের জন্য নথিভুক্ত এক স্বত্বাধিকারী বলেন, “আবাসন নির্মাণের সময়ে আমরা রাস্তার ধারেই কোনওক্রমে বেড়া এবং চট দিয়ে দোকান করেছিলাম। এতে জিনিস নষ্ট হচ্ছিল। তাই অসমাপ্ত আবাসনের মধ্যে দোকান খুলেছি। অন্যান্য কাজ হওয়ার সময়ে দোকান ছেড়ে দেব।” শঙ্করবাবু বলেন, “ব্যবসায় অসুবিধা হওয়ায় চার জন দোকানদারের মধ্যে দু’জন তাদের আগের জায়গাতেই দোকান খুলেছেন। নির্মাণের প্রয়োজন হলে তাঁরা উঠে যাবেন।”
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “হস্তান্তর না করা পর্যন্ত আইনত কেউ ভেতরে ঢুকতে পারেন না। যাঁদের নাম নথিভুক্ত হয়েছে তাঁরা ওই আবাসনে কোথায় থাকবেন বা কত জায়গা তাঁদের জন্য বরাদ্দ করা হবে তা পুরসভাই ঠিক করবে। নির্মাণে বিলম্ব হচ্ছে কেন সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেছি।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.