ভিন্ন কারণে হুগলির গোঘাট-১ ব্লকের দু’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। একটি কেন্দ্র বালি গ্রামে। অন্যটি ভাবদিঘি গ্রামে।
বালি গ্রামের ১৯২ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি গত ২১ এপ্রিল থেকে বন্ধ। কেন্দ্রটি চলত বালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্বামী সিপিএম নেতা হওয়ায় ওই কেন্দ্রের সদ্য নিযুক্ত সহায়িকা, দিঘরা গ্রামের চায়না রায়কে তৃণমূলের লোকজন তাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। চায়নাদেবী বলেন, “তৃণমূলের নেতারা আমাকে হুমকি দেন এখানে কাজ করা যাবে না। ওরা আমার পথ আটকায়। কটূক্তি করে। বলে তোমার স্বামী সিপিএম নেতা। এলাকায় অনেক খুন-সন্ত্রাস করেছে। তোমার ঠাঁই নেই। প্রথম দিন চলে আসতে বাধ্য হই। পরের দিন যাই। কেউ কিছু না বললেও উত্তেজনা ছিল। কিন্তু ২১ এপ্রিল তাড়িয়ে দেওয়া হল।” সহায়িকা কাজে না আসায় ওই কেন্দ্রের অধীন শিশু ও প্রসূতি মিলিয়ে ৫৫ জনের পুষ্টি, প্রতিষেধক দেওয়া, স্বাস্থ্য পরীক্ষা-সহ নানা কাজ বন্ধ রয়েছে। সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট সুপারভাইজার প্রণতি চক্রবর্তী পঞ্চায়েত প্রধান, ব্লক শিশু বিকাশ আধিকারিক ও বিডিওকে জানিয়েছেন। চায়নাদেবীঁর স্বামী মনোরঞ্জন রায় স্থানীয় সিপিএম নেতা। তিনি দিঘরা গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সচিব ছিলেন। বর্তমানে ঘরছাড়া। চায়নাদেবী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি।
অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের মধ্যে অরণ্য খাঁ চায়নাদেবীকে তাড়ানোর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই মহিলার কাজে যোগ দেওয়া মানেই এলাকা উত্তপ্ত হবে। ওই পরিবারের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা তাঁর চাকরি নিয়ে আপত্তি তুলেছি ঠিকই। কিন্তু তাঁকে গ্রামবাসীরাই তাড়িয়েছেন।”
অন্য দিকে, ভাবদিঘি গ্রামের ১৫৮ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গত ১৮ এপ্রিল তালা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই কেন্দ্রে সদ্য নিযুক্ত সহায়িকা ময়না সাঁতরাকে বদল করে স্থানীয় তৃণমূল নেতা দিবাকর পোড়েলের স্ত্রী কবিতাদেবীকে নিতে হবে বলে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা দাবি করছেন বলে অভিযোগ ওই কেন্দ্রের কর্মীদের। কেননা, কবিতাদেবী দীর্ঘদিন ওই কেন্দ্রে অস্থায়ী পদে কাজ করছিলেন। কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন ২৪ জন শিশু ও প্রসূতি। বিঘ্নিত হচ্ছে তাঁদের প্রাপ্য পরিষেবা। তবে ওই গ্রামের ৯ নম্বর কেন্দ্র থেকে বৃহস্পতিবার খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন সুপারভাইজার কল্পনা রায়। তিনিও সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত প্রধান, ব্লক শিশু বিকাশ আধিকারিক এবং বিডিওকে জানিয়েছেন। দিবাকরবাবুর দাবি, “ওই কেন্দ্রে তালা মেরে কোনও অন্যায় করিনি। গ্রামবাসীরাও চান আমার স্ত্রী ওই কাজ করুন।”
বিডিও জয়ন্ত মণ্ডল বলেন, “সিডিপিও-কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। মহকুমাশাসকের নজরেও বিষয়টি আনা হয়েছে।” সিডিপিও বিশ্বনাথ সেন বলেন, “আমি নিজেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা নানা অভিযোগ ও দাবি তুলছেন। আমিই ঠিকমতো অফিস করতে পারছি না। সমস্যার কথা মহকুমাশাসককে জানিয়েছি।” মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “যাঁরা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র দু’টি বন্ধ করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে অবিলম্বে কেন্দ্র দু’টি চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সিডিপিও-কে।” গোঘাটের তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন পাল বলেন, “দলের তরফ থেকে কোনও বাধা দেওয়া হয়নি। স্থানীয় কারণে গ্রামবাসীরা আপত্তি জানাতে পারেন। ওই ঘটনার সঙ্গে দল যুক্ত নয়।” |