বন্ধ পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন, মিড ডে মিল

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অচলাবস্থা আমতার স্কুলে
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে পরিচালন সমিতির পদাধিকারী নির্বাচন হল না হাওড়ার আমতা পীতাম্বর হাইস্কুলে। এই অবস্থায় স্কুলে মিড ডে মিল চালানো ও পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। কারণ, কারণ মিড ডে মিল চালানো এবং পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন দেওয়ার জন্য টাকা খরচ করতে পারে স্কুলের পরিচালন সমিতি।
নির্বাচন না হওয়ায় স্কুলে ডিডিও (ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সিং অফিসার) বসানো হলেও তিনি শুধুমাত্র শিক্ষকদের বেতনই দিতে পারবেন। ফলে ব্যাঙ্কে টাকা এসে পড়ে থাকলেও চালু করা যাবে না মিড মিল। বেতন পাবেন না পার্শ্বশিক্ষকেরা।
স্কুলের পরিচালন সমিতি রয়েছে তৃণমূলের দখলে। কিন্তু গত ৩১ ডিসেম্বর সম্পাদক-সহ পরিচালন সমিতির চার জন সদস্যের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তাঁদের ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ায়। আইনানুযায়ী তার পরিবর্তে অভিভাবকদের মধ্যে থেকে নতুন চার জনকে সমিতির অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। সমিতির বাকি সদস্যদেরই অভিভাবকদের মধ্যে থেকে চার জনকে মনোনীত করার কথা। এখানেই গোলমাল বাধে। পরিচালন সমিতির একজন সদস্য সমিতির বৈঠক ডেকে চার জন অভিভাবকের নাম প্রস্তাব করে সেই তালিকা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষককে দেন। সমিতির ওই সদস্য উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভাকেন্দ্র তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তপন চক্রবর্তীর অনুগামী বলে পরিচিত। এ কথা জানতে পেরে দলের উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের সভাপতি বিশ্বনাথ লাহা তাঁর অনুগামী চার জন অভিভাবকের নামের পৃথক তালিকা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের হাতে তুলে দেন।
দু’টি তালিকা থেকে কোন চার জনকে নেওয়া হবে সে বিষয়ে ঐক্যমত্য না-হওয়ায় কারও নামই জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। জেলা পরিদর্শকের অনুমোদন না-আসায় সম্পাদক-সহ অন্যান্য পদাধিকারী নির্বাচন করা যায়নি। ফলে স্কুলের খাতে টাকা এসে পড়ে থাকলেও গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে মিড ডে মিল। জানুয়ারি মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন না পার্শ্বশিক্ষকেরা। তাঁদের বেতনের টাকাও এসে পড়ে রয়েছে ব্যাঙ্কে। এই পরিস্থতিতেই কয়েকদিন আগে জেলা স্কুল পরিদর্শক স্কুলে ডিডিও নিয়োগ করেছেন।
মার্চ মাসের গোড়ায় আমতায় এসে তৃণমূলের হাওড়া জেলা সভাপতি অরূপ রায় দলীয় সম্মেলনে স্কুলের অচলাবস্থা দূর করার জন্য স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পরেও কেন এই পরিস্থিতি?
বিশ্বনাথবাবু বলেন, “জেলা সভাপতির নির্দেশ মোতাবেক আমি দলীয় পর্যায়ে জানিয়ে দিয়েছিলাম যাঁদের নাম পরিচালন সমিতিতে ঢোকানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে তাঁরা সকলেই যেন পদত্যাগ করেন। ফের সকলে মিলে বসে নতুন করে নাম বিবেচনা করা হবে। কিন্তু আমার কথা কেউ শোনেননি।”
অন্য দিকে তপনবাবু বলেন, “যে চার জন অভিভাবককে সমিতিতে মনোনীত করার প্রস্তাব করা হয়েছিল, একাংশের প্ররোচনায় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সমিতিতে তাঁদের অন্তর্ভুক্তই করেননি। সমিতির অন্তর্ভুক্ত হলে তবেই তো পদত্যাগের প্রশ্ন আসে।” তপনবাবুর আরও দাবি, “জেলা সভাপতি যা নির্দেশ দিয়েছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করেছি। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক যদি ওই চার জনকে পরিচালন সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত করতেন তা-হলে তাঁদের পদত্যাগ করিয়ে সকলের সঙ্গে বসে চার জন অভিভাবককে ফের মনোনীত করা হত। তা-না করে ডিডিও বসানোর ব্যবস্থা করে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রকৃতপক্ষে স্কুলেরই সর্বনাশ করলেন।”
ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক নান্দিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “যে চারজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল তাঁদের পক্ষ থেকে কোনও দরখাস্ত জমা পড়েনি। তার ফলেই তাঁদের সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। আর ডিডিও বসিয়েছেন স্কুল পরিদর্শক। এ ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই।”
বিশ্বনাথবাবু বলেন, “ডিডিও সব খাতেই টাকা খরচ করতে পারেন। তাঁকে ভয় দেখানো হয়েছে। তার ফলেই তিনি বেতন ছাড়া কিছুই দিচ্ছে না।” পাল্টা তপনবাবু বলেন, “ডিডিওকে কেউ ভয় দেখায়নি। কিন্তু শিক্ষকদের বেতন ছাড়া কোনও খাতে তিনি টাকা খরচ করতে পারেন না। এটা আইনেই আছে।”
ডিডিও সুমিতা মণ্ডল বলেন, “মিড ডে মিলের টাকা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে সেই টাকা খরচের ক্ষেত্রে আমার কোনও হাত নেই। এ ছাড়া পার্শ্বশিক্ষকদের বেতনের টাকাও দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। সেই টাকাও আমি খরচ করতে পারি না। শিক্ষকদের বেতন ছাড়া কোনও টাকা খরচের এক্তিয়ার আমার হাতে নেই।” স্কুলের অচলাবস্থা দূর করতে কী করণীয় সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জেলার স্কুল পরিদর্শক তাপস বিশ্বাস বলেন, “ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং ডিডিওকে ডেকে পাঠিয়ে পরিস্থিতি জানতে চাইব। প্রয়োজনে প্রশাসক বসিয়ে যাতে প্রতিটি খাতের টাকাই খরচ করা যায় তার ব্যবস্থা করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.