বারাসতে ব্যবসায়ীর স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে অপহরণ। আর হাওড়ায় অপহৃত এক ব্যবসায়ী-ইঞ্জিনিয়ার নিজেই।
মুক্তিপণ দিয়ে মেয়েকে ফিরিয়ে এনেছে বারাসতের ব্যবসায়ী পরিবার। কিন্তু হাওড়া থেকে তরুণ ইঞ্জিনিয়ারকে ‘অপহরণ’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরেও পুলিশ কার্যত অন্ধকারে। তবে অপহরণকারীরা মুক্তিপণ চায় বলে ওই ইঞ্জিনিয়ারই তাঁর পরিবারকে ফোনে জানিয়েছেন। এবং বলেছেন, টাকা না-দিলে অপহরণকারীরা তাঁকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছে।
|
অমরেশ মান্না |
পুলিশ জানায়, অপহৃত ইঞ্জিনিয়ারের নাম অমরেশ মান্না। আদতে হলদিয়ার বাসিন্দা অমরেশ দীর্ঘদিন ধরে হাওড়া চ্যাটার্জিহাট থানার ঠাকুর রামকৃষ্ণ লেনে একটি বাড়িতে ‘পেয়িং গেস্ট’ হিসেবে থাকতেন। বছর দুয়েক আগে অমিত পাণ্ডে নামে এক যুবকের সঙ্গে ‘ফিউচার ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি সংস্থা খোলেন তিনি। অমিতের বাড়ি বাঁকুড়ায়। তিনিও শিবপুরের মন্দিরতলায় একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোনের টাওয়ারের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের কাজও করতেন তাঁরা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, মাসখানেক আগে অমিত ওই সংস্থা ছেড়ে চলে যান। তার পর থেকে অমরেশ একাই ব্যবসা সামলাচ্ছিলেন।
অপহরণের ঘটনা ঘটল কী ভাবে?
অমরেশ যে-বাড়িতে ‘পেয়িং গেস্ট’ হিসেবে থাততেন, তার মালিকের নাম শ্রীকান্ত দত্ত। শুক্রবার শ্রীকান্তবাবু জানান, বুধবার সকালে বেরোনোর সময় অমরেশ তাঁদের জানিয়েছিলেন, কাজের জন্য ধুলাগড় যাচ্ছেন। পরে তিনি শ্রীকান্তবাবুর মেয়ে পিউকে ফোন করে জানান, রাতে ফিরছেন না। অমরেশের বাবা শশধর মান্না জানিয়েছেন, বুধবার রাতে তাঁর ছেলের হলদিয়ায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেখানেও যাননি। শ্রীকান্তবাবু জানান, বৃহস্পতিবার সকালে অমরেশ তাঁর দাদা পুলকেশ মান্নাকে ফোন করে জানান, তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। পুলকেশবাবু বৃহস্পতিবার রাতেই চ্যাটার্জিহাট থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশি সূত্রের খবর, অপহরণকারীরা ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাইছে বলে অমরেশই বৃহস্পতিবার সকালে জানিয়েছিলেন। টাকাটা দিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি পরিবারের লোকেদের অনুরোধও করেছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, বৃহস্পতিবারের প্রথম ফোনটির পরে আরও দু’বার ফোন এসেছে পুলকেশবাবুর কাছে। পরের ফোনে মুক্তিপণের অঙ্ক ২০ লক্ষ টাকা থেকে কমে প্রথমে ১৫ লক্ষ এবং পরে ১০ লক্ষ টাকা হয়েছে। টাকা না-দিলে অপহরণকারীরা তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে বলেও অমরেশ তাঁর পরিবারের লোকেদের জানিয়েছেন।
কে বা কারা কেন ওই ইঞ্জিনিয়ারকে অপহরণ করল, শুক্রবার রাত পর্যন্ত সেই ব্যাপারে কোনও সূত্র পায়নি পুলিশ। এক পুলিশ অফিসার জানান, ব্যবসায়িক গণ্ডগোল, নাকি নেহাতই মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অমরেশের ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্যও সংগ্রহ করছেন গোয়েন্দারা। হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) নিশাত পারভেজ বলেন, “তদন্তকারীরা অমরেশের বাড়িওয়ালা এবং পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলছেন। অমিত পাণ্ডেরও খোঁজ চলছে।” |