প্রবল বিতর্কের মুখে পুণেতে তাঁর জন্য প্রস্তাবিত অবসর-আবাস ছেড়ে দিলেন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল। আজ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রপতির অবসর-আবাস বিতর্কে নিহত সেনাদের স্ত্রীর বসবাসের বিষয়টি জড়িয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রপতি এই ঘটনায় খুবই মর্মাহত। তাই তিনি এই বাসভবন না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” তবে অবসরের পরে তাঁর বাসভবন কোথায় হবে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
এর আগেও বহু বিতর্কে জড়িয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা ও তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। এ বছর জুলাইতেই রাষ্ট্রপতির মেয়াদকাল শেষ হচ্ছে। বিশেষ সূত্রে খবর, অবসরের ঠিক আগে তাঁর আবাসন নিয়ে এত জলঘোলা হওয়ায় খুবই বিচলিত তিনি।
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তিনি আলোচনাও করেছেন। সরকারি সূত্রে খবর, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির এ বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। তার পরেই প্রতিভা সিদ্ধান্ত নেন, অবসরের পরে তিনি পুণের ওই সামরিক এলাকায় থাকবেন না।
অবসরের পরে সব রাষ্ট্রপতির জন্যই বাড়ি বরাদ্দ করা হয়। সাধারণত, দিল্লিতেই অবসর-আবাস বেছে নেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিরা। কিন্তু প্রতিভা পুণের খাদকি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় একটি জমি বেছে ছিলেন। ২ লক্ষ ৬০ হাজার বর্গফুট এলাকার একটি জায়গায় দু’টি পুরনো ব্রিটিশ আমলের বাংলো ভেঙে ফেলে নতুন বাড়ি তৈরির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু পুণের ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় রাষ্ট্রপতির জন্য এমন বিলাসবহুল বাংলো তৈরি হচ্ছে, এই খবর চাউর হতেই ‘তথ্যের অধিকার’ আইনে বেশ কয়েকটি মামলা করে প্রাক্তন সেনা অফিসারদের বিভিন্ন সংগঠন। তাদের দাবি, যেখানে প্রাক্তন সেনাদের বা নিহত সেনাদের স্ত্রীর বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা নেই, সেখানে রাষ্ট্রপতি কী করে এত বিশাল জায়গা নিয়ে বাড়ি বানাচ্ছেন। রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফে অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানানো হয়, অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতিদের যে মাপের জমি দেওয়ার কথা, তার থেকে বেশি প্রতিভার জন্য বরাদ্দ করা হয়নি। ওই জমিটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে রাষ্ট্রপতির জন্য বরাদ্দ করা হয়। যে জমি নিয়ে বিতর্ক, সেটির মালিকানা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের। ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপতির অবর্তমানে ওই জমি এবং সেখানে তৈরি করা বাংলোর মালিকানা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকেরই থাকবে। আজ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে দেওয়া বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, ওই জমিতে প্রাক্তন সেনা অফিসারদের বা নিহত সেনাদের স্ত্রীদের বাড়ি তৈরির কোনও কথাই ছিল না। তাই ওই জমিতে রাষ্ট্রপতির জন্য বাড়ি তৈরি হলে কোনও নিয়ম লঙ্ঘন করা হত না।
তা হলে জমিটি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন প্রতিভা? রাষ্ট্রপতি ভবনের মুখপাত্র অর্চনা দত্তের কথায়, “অবসর-আবাস সব প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিরই প্রাপ্য। এই রকম একটি বিষয় নিয়েও বিতর্ক তৈরি হওয়া রাষ্ট্রপতি খুবই মর্মাহত হয়েছেন। সেই বিতর্কের অবসান ঘটাতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
অর্চনার আরও দাবি, “রাজস্থানের রাজ্যপাল থাকাকালীন নিহত সেনাদের স্ত্রীদের জন্য অনেক কিছু করেছেন প্রতিভা পাটিল। তার পরেও তাঁর দিকে এ ভাবে আঙুল তোলা হল! এই বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতি খুবই স্পর্শকাতর। তাই আর বিতর্ক বাড়াতে চাননি।” |