সিপিএমের অন্দরে এ বার জাতপাতের প্রশ্নও
যে দলের নেতাদের পুজোআর্চার মতো প্রকাশ্য ধর্মাচরণে বাধা রয়েছে, এ বার তাঁদের জন্যই তৈরি হতে পারে নতুন প্রশ্নমালা। সেখানে জানতে চাওয়া হবে, কমরেড, আপনি কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন? আপনার জাতটাই বা কী? জানতে চাওয়া হবে, তিনি খ্রিস্টান না মুসলমান, আদিবাসী না দলিত? শুধু তাই নয়, কে কত দিন জেল খেটেছেন, চাওয়া হবে তার খতিয়ানও। আগামিবার সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে এমন প্রশ্নের মুখেই পড়তে হবে সিপিএম নেতাদের।
কিন্তু যে দলে প্রকাশ্যে ধর্মাচরণে বাধা রয়েছে, সেই দলে ধর্মবিশ্বাসের কথা জানতে চাওয়া কেন? পার্টি কংগ্রেসে মনোনীত প্রতিনিধিদের ‘বৈপ্লবিক চরিত্র’ বিশ্লেষণের জন্য প্রতিবারই একটি ‘ক্রেডেনশিয়াল্স কমিটি’ তৈরি করা হয়। এ বার সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নেতা মদন ঘোষ (এই কমিটিরই সুপারিশ, আগামী পার্টি কংগ্রেসে প্রতিনিধিদের ধর্ম-জাত জানতে চাওয়া হোক। এই সুপারিশ মেনে নেওয়া হবে বলেই দলীয় সূত্রের খবর)। মদনবাবুরা বলছেন, এই পার্টি কংগ্রেস দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘুদের মধ্যে আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিয়েছে। কাজেই এই সব সম্প্রদায় থেকে কত জন দলের সর্বোচ্চ স্তরে উঠে আসছেন, সেটা দেখা প্রয়োজন। এদের সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে কে কতখানি অংশ নিচ্ছেন, তা-ও দেখা দরকার।
তিন বছর বাদে আবার পার্টি কংগ্রেস। তার আগে সিপিএমের নেতা-কর্মীদের কাছে আরও বার্তা যাচ্ছে, এই তিন বছরে আন্দোলনে নেমে কত বার পুলিশের লাঠি খেলেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির কোন ধারায় আপনার বিরুদ্ধে ‘সত্যি বা মিথ্যে’ মামলা সাজানো হল, ক’দিনই বা আপনি জেলে কাটালেন, তা নোটবুকে লিখে রাখুন। পরের পার্টি কংগ্রেসে গিয়ে তার খতিয়ান দিতে হবে। সেখান থেকেই বিচার হবে, দলের নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন, না কি শুধুই টিভি চ্যানেলের বিতর্কে গলা ফাটাচ্ছেন। এই তিন বছরে কে কত বার আদিবাসী, সংখ্যালঘু বা দলিতদের সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, সে কৈফিয়তও দিতে হবে পার্টিকে।
কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসে এ বার মোট ৭৩৩ জন প্রতিনিধি ডাক পেয়েছিলেন। তার মধ্যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ চার জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ত্রিপুরার দুই প্রতিনিধি অনুপস্থিত ছিলেন। পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ৭৪ জন। পার্টি কংগ্রেসে এই ৮০১ জনের ‘বৈপ্লবিক চরিত্র’ আতস কাচের তলায় ফেলে দেখা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এঁদের মধ্যে সাড়ে তিনশো নেতা-কর্মীর জেল খাটার অভিজ্ঞতা নেই। যাঁদের বা আছে, তাঁদেরও অধিকাংশেরই অভিজ্ঞতা যৎসামান্য। ২৬১ জনই জানান, তাঁরা সব মিলিয়ে দু’মাসও জেলে থাকেননি। এর মধ্যে অবশ্য পার্টি সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটও রয়েছেন। যাঁর জেলে থাকার অভিজ্ঞতা সাকুল্যে ৮ দিনের। আবার বিনয় কোঙার ও আর উমানাথের মতো নেতারাও ছিলেন, যাঁরা ৯ বছরের বেশি সময় জেলে কাটিয়েছেন।
সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, এখনও কমিউনিস্ট পার্টি ‘জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব’-এর স্বপ্ন বেচার চেষ্টা করলেও দলের ‘বিপ্লবী সত্তা’ এখন অনেকটাই ধুয়েমুছে গিয়েছে। পার্টি কংগ্রেসে এ বারের প্রতিনিধিদের একটা বড় অংশই এসেছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে। গরিব কৃষক বা শ্রমিক শ্রেণির তুলনায় তাঁরাই ছিলেন দলে ভারী। এক সময় সিপিএমের নেতা-কর্মীদের পুলিশ-প্রশাসনের হাত থেকে বাঁচতে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হত। সত্তরের দশকে জরুরি অবস্থার সময়ে দলের অনেক নেতারই ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রকাশ কারাটও সে সময় দেড় বছর ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ ছিলেন। এখন পরিস্থিতি পালটেছে। এ বারের পার্টি কংগ্রেসে যে ৮০১ জন ছিলেন, তাদের মধ্যে ৫৯৯ জনেরই এমন কোনও অভিজ্ঞতা নেই। কারণ এঁদের মধ্যে ৩৩৩ জনই ১৯৭৭ সালের পরে দলে যোগ দিয়েছেন। এই সূত্র টেনেই অনেকে বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার সময় আইন অমান্যের মতো আন্দোলন করেননি দলীয় নেতা-কর্মীরা। বড়জোর বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়েছে। দলীয় সূত্রেই তখন বলা হত, নিজের পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে কী ভাবে আইন অমান্য করা হবে! ফলে জেল খাটার অভিজ্ঞতাও হয়নি নেতা-কর্মীদের।
পার্টি কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের এমন বৈপ্লবিক চরিত্র বিশ্লেষণের প্রয়োজন কীসের? কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার ব্যাখ্যা, “পার্টি কংগ্রেসে মনোনীত প্রতিনিধিদের বৈপ্লবিক চরিত্র বিশ্লেষণ হল বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন। এ থেকে গোটা পার্টির চরিত্রটাই বোঝা যায়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.