|
কেন্দ্রীয় ‘দুর্বলতা’র দিকেই আঙুল |
আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে অশনি
সঙ্কেত আইএমএফের-ও
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
|
মার্কিন মূল্যায়ন সংস্থার পরে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার। এবং ফের সেই একই মত মনমোহন সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতার ফলে ভারতে বিনিয়োগের পরিবেশ দুর্বল হচ্ছে।
কথাটি প্রথমে বলেছিলেন খোদ অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য উপদেষ্টা কৌশিক বসু। তার পরে স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স (এসঅ্যান্ডপি)। এ বার সেই একই কথা জানিয়ে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের (আইএমএফ) ভবিষ্যদ্বাণী, ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৯% থাকবে। উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে আইএমএফ-ই জানিয়েছিল, ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার হবে ৭%। কিন্তু মনমোহন সরকারের ‘প্রশাসনিক দুর্বলতা’ দেখে নিজেদের পূর্বাভাস সংশোধন করেছে তারা।
তবে আর্থিক বৃদ্ধি সম্পর্কে আইএমএফের এই অনুমান প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, সরকারি হিসেবের সঙ্গে এর বিশেষ পার্থক্য নেই। কারণ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় নিজেও জানিয়েছেন, আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭%-এর আশেপাশেই থাকবে। কিন্তু মনমোহন-প্রণবের রক্তচাপ বাড়তে পারে আইএমএফের ব্যাখ্যায়। আর্থিক বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার জন্য মনমোহন-প্রণব বরাবর আন্তর্জাতিক মন্দাকেই দায়ী করে এসেছেন। সেখানে আইএমএফের যুক্তি, মন্দাই একমাত্র কারণ নয়। গত অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধ্বে বৃদ্ধি-হার হ্রাসের পিছনে দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকেও বড় কারণ হিসেবে মনে করছে আইএমএফ। তাদের মতে, প্রশাসনিক ঢিলেমি এবং বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদনে বিলম্ব শিল্পমহলের উদ্যমে চিড় ধরাচ্ছে। ফলে বিনিয়োগও মার খেয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্তহীনতার ফলে এ দেশে যে বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়ে আইএমএফ দ্রুত কাঠামোগত সংস্কারের ডাক দিয়েছে। আজ প্রকাশিত আইএমএফের এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিওনাল ইকনমিক আউটলুক-এর বক্তব্য: প্রণববাবুর বাজেটে কিছু আর্থিক সংস্কারের কথা ঘোষণা হয়েছে এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কাঠামোগত সংস্কার শ্লথ গতিতেই চলবে। যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল এসঅ্যান্ডপি-র রিপোর্টে। যে আশঙ্কার কথা শুনিয়েছিলেন কৌশিক বসু। আইএমএফের নিদান, রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টেনে মনমোহন সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুক। অন্য দিকে জ্বালানিতে ভর্তুকির মতো ক্ষেত্রে খরচ কমানো হোক, যাতে শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রে বেশি ব্যয় করা যায়।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে না-পারার জন্য মনমোহন সরকার মূলত জোট-রাজনীতির দোহাই দিয়ে এসেছে। কিন্তু দেশের শিল্পমহল যে সরকারের এই যুক্তি মানছে না, আজ তার ইঙ্গিত মিলেছে। যেমন, বায়োকনের সিএমডি কিরণ মজুমদার শ বলেছেন, মনমোহন সরকার জোট-রাজনীতির বাধ্যবাধকতার পিছনে মুখ লুকোতে চাইছে। তাঁর অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও সঙ্কেত নেই যে, সরকার আর্থিক বৃদ্ধির পথে এগোতে চাইছে। যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া অবশ্য খুব বেশি আশঙ্কার কারণ দেখছেন না। তাঁর যুক্তি, প্রণববাবু ইতিমধ্যে সংস্কার হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। কাজেই এসঅ্যান্ডপি-র ‘ক্রেডিট রেটিং’ সম্পর্কেও আশঙ্কার কারণ নেই। বরং দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৮% থেকে ৯% থাকবে বলেই তাঁর আশা। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজনও আত্মবিশ্বাসী যে, এসঅ্যান্ডপি আগামী দিনে ভারত সম্পর্কে তাদের মূল্যায়ন বদলাবে, তা খারাপ থেকে ভাল’র দিকে যাবে। আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭%-৭.৫% থাকবে বলে তাঁর অনুমান। আইএমএফ অবশ্য মনে করছে, সেটা হবে ২০১৩ সালে। তখন আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭.৩%-এ পৌঁছবে।
ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিক ভাবে এশিয়ার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলেই ধারণা আইএমএফের। তাদের মতে, ভারত-চিনকে ধরেই এগোবে এশিয়ার অর্থনীতি। অবশ্য ‘যদি না’ ইউরোপের মন্দা পুরোটাকে পণ্ড করে দেয়। আইএমএফের মতে, চিন, ভারত ও অন্য উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোই বৃদ্ধির হারে গোটা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এগিয়ে থাকবে। কারণ, এই সব দেশের বিশাল বাজার ও অফুরন্ত চাহিদা।
তাদের রিপোর্টে এ দেশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের পক্ষেও সওয়াল করেছে আইএমএফ। আজ দিল্লিতে একই দাবি তুলেছেন ভারতে নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল। একই সঙ্গে ভোডাফোনের সঙ্গে মামলা হারার পরে যে ভাবে কেন্দ্রীয় বাজেটে ভারতে ব্যবসারত দু’টি বিদেশি সংস্থার মধ্যে বিদেশে হওয়া চুক্তির উপরে কর বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। |