গ্রাহক সেজে ব্যাঙ্কে ঢুকে ৩৮ লক্ষ টাকা লুঠ
৮ লক্ষেরও বেশি টাকা লুঠ হয়ে যাওয়ার পরে চোখ খুলল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। ঠিক হল রামপুরহাট শহরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় যত দ্রুত সম্ভব বসানো হবে ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি)। এ-ও জানা গেল, শহরের ব্যস্ততম এলাকায় থাকা ব্যাঙ্কের ওই শাখায় কোনও নিরাপত্তারক্ষীই নেই!
তার আগে অবশ্য যা ক্ষতি হওয়ার হয়েই গিয়েছে। শুক্রবার সাত সকালে গ্রাহক সেজে ব্যাঙ্কে ঢুকে ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে ব্যাঙ্ককর্মী ও গ্রাহকদের মারধর করে ভল্ট খুলে ৩৮ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা নিয়ে বিনা বিধায় চম্পট দিয়েছে পাঁচ দুষ্কৃতী। ঘটনার তদন্তে নিজে ব্যাঙ্কে আসেন বীরভূমের পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা। তিনি বলেন, “দুষ্কৃতীরা কোন দিক থেকে এসেছিল এবং কোন দিকে পালিয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কলকাতা থেকে সিআইডি-র একটি দলও তদন্তে আসছে।”
রামপুরহাট শহরের দেশবন্ধু রোডে একটি বাড়ির দোতলায় ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার এই শাখাটি। নীচে অনেক দোকানপাট। সকাল থেকেই মানুষের আনাগোনায় সরগরম থাকে এলাকা। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার তপনকুমার আচার্য জানান, সাফাইকর্মী সকাল সওয়া ৮টা থেকে ঝাড়পোঁছ করার কাজ শুরু করেন।
তদন্তে পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
রোজের মতো এ দিনও ম্যানেজার পৌনে ৯টা নাগাদ ব্যাঙ্কে গিয়ে কাগজপত্র ও কম্পিউটার ঠিকঠাক আছে কি না, দেখছিলেন। সেই সময় এক জন তাঁকে বাইরে থেকে ডাকেন। তপনবাবুর কথায়, “ওই যুবক নিজেকে গ্রাহক দাবি করে বলে, তার এক আত্মীয় বাইরে পড়াশোনা করে। সেখানে টাকা পাঠাতে গেলে কী করা উচিত, সেই পরামর্শ নিতে সে আমার কাছে এসেছে। আমি ওকে বলি, এখনও ব্যাঙ্কের কাজের সময় শুরু হয়নি। কিন্তু অনেক দূর থেকে এসেছে জানিয়ে ও পীড়াপীড়ি করতে থাকে। ভাল মানুষ ভেবে আমি ছেলেটাকে ভিতরে ঢোকাই।”
ম্যানেজারের চেম্বারে বসতেই ওই যুবক রিভলভার বার করে তপনবাবুকে চুপ করতে থাকতে বলে। এর পরেই আরও চার সশস্ত্র দুষ্কৃতী ভিতরে ঢুকে পড়ে। ম্যানেজারকে হাঁটুমুড়ে বসে থাকতে বলে। ম্যানেজার বলেন, “পৌনে ১০টা নাগাদ প্রধান ক্যাশিয়ার ঢুকতেই তাঁর কাছ থেকে জোর করে ভল্টের চাবি ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। ওদের মধ্যে এক জন বাইরে পাহারায় ছিল।” তবে ভল্ট খুলতে দু’টি চাবি দরকার ছিল। অন্য চাবিটি ছিল ডেপুটি ম্যানেজার তপন দাসের কাছে। তিনি আসতেই তাঁর কাছ থেকে চাবিটি কেড়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। এর পরে ভল্ট খোলে। প্রধান ক্যাশিয়ার শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমি ব্যাঙ্কে ঢুকতেই গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা এক দুষ্কৃতী হিন্দি-বাংলা মিশিয়ে আমাকে শাসায়। তার পর ধাক্কা দিতে দিতে লকার রুমের চাবি চায়। আমি কিছুটা ইতস্তত করায় ওরা আমাকে লাথি মারে। এর পরেই মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দেয়। ওই সময় ব্যাঙ্কের ভিতরে থাকা ৮-৯ জন গ্রাহককেও ওরা চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। কর্মী ও গ্রাহকদের মোবাইলও কেড়ে নেয়। তবে কাজ হাসিল হয়ে যাওয়ার পরে ওরা অবশ্য মোবাইল ফেরত দিয়েছে।”
ব্যাঙ্কে ঢোকার আগে অ্যালার্ম বেল এবং ব্যাঙ্কের ল্যান্ডফোনের তারও কেটে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ঘটনার সময় ব্যাঙ্কে থাকা গ্রাহক সনৎকুমার দাস, মিহির সেনগুপ্ত, তুষারকান্তি সাহারা বলেন, “আমাদের প্রায় ১০ মিনিট দেওয়ালের দিকে মুখ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে বলে দুষ্কৃতীরা। টাকা লুঠ করার পরে ব্যাঙ্কের গেটে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে ওরা পালায়।”
এ দিন সকালে ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখা যায়, তদন্তে এসেছেন পুলিশ সুপার, রামপুরহাটের এসডিপিও অবধেশ পাঠক এবং আইসি অরুণাভ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরাই তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন। ম্যানেজার-সহ ব্যাঙ্ককর্মীদের জেরা করে পুলিশ। ম্যানেজার বলেন, “ব্যাঙ্কের অন্যান্য শাখার মতো এখানেও কোনও নিরাপত্তরক্ষী নেই। সিসিটিভি-ও লাগানো নেই। এই ঘটনার পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁরা খুব শীঘ্রই এখানে সিসিটিভি লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.