ভাঙড়ের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুলছুট। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় অবশ্য তাঁর দাবি, ২০১০-এ তিনি রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছেন। তিন মাস আগে
তিনিই হয়েছেন ভাঙড় কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি!
তিনি আরাবুল ইসলাম। বিধায়ক পদ চলে গিয়েছে গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের পরেই। ওই নির্বাচনে প্রায় ৫ হাজার ভোটে সিপিএম প্রার্থী বাদল জমাদারের কাছে হেরেছেন তিনি। তবু এখনও ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা বলতে লোকে আরাবুল ইসলামকেই বোঝে। এমনই তাঁর ‘দাপট’! এই দাপটের জন্যই ফের সংবাদের শিরোনামে এসে গিয়েছেন তৃণমূলের ওই প্রাক্তন বিধায়ক। এ বারে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভাঙড় কলেজের এক শিক্ষিকাকে গালিগালাজ করা ও জগ ছুড়ে মারা!
বছর তিনেক আগে, ২০০৯ সালেও বড় বিতর্কে জড়িয়েছিলেন আরাবুল। ‘বেদিক ভিলেজ’ কাণ্ডে জোর করে জমি কেনাবেচা সংক্রান্ত একটি গোলমালের জেরে ফুটবল মাঠে খুন হন এক যুবক। সেই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল বছর ৪৮-এর আরাবুলের। ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন আরাবুলের ভাই আজিজুর ওরফে খুদে।
২০০৬ সালে ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন আরাবুল। ওই বছরেই বাসন্তী হাইওয়েতে তৃণমূল সমর্থকদের বিক্ষোভের সময় কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার ওসি-র মাথায় শালকাঠের খুঁটি দিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে। আরাবুলের বিরুদ্ধে ওই ঘটনার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিল পুলিশ। পরে ওই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। আদালতের নির্দেশে তাঁকে ২২ দিন জেল হেফাজতে থাকতে হয়। মামলাটি এখনও বিচারাধীন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শুধু পুলিশের খাতাতেই নয়, এলাকার তৃণমূলের একাংশও তাঁর বিরুদ্ধে নানা সময়ে নানা অভিযোগ তুলেছে। লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও।
কী বলা হয়েছে ওই সব অভিযোগে?
এলাকায় তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “প্রায় ৫০টির মতো সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত আরাবুল। তাঁর বিরুদ্ধে চাষিদের কাছ থেকে জোর করে জমি দখল করে চড়া দামে প্রোমোটারদের কাছে বিক্রি করার অভিযোগও জানিয়েছি আমরা। এত করেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি।”
এখানেই শেষ নয়। ওই নেতার কথায়, “২০০৬ সালে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় আরাবুল জানিয়েছিলেন, তাঁর নিজস্ব স্থাবর সম্পত্তি বলতে ৩ লক্ষ টাকা দামের একটি বাড়ি। জমিজিরেত নেই। ২০১১ সালের হলফনামায় তিনিই জানান, স্ত্রী-পুত্র এবং নিজের মিলিয়ে তাঁর স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা! মাত্র পাঁচ বছরে কী করে আরাবুল এত সম্পত্তির মালিক হলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের ভিতরেই।”
ভোটে হেরেও তাঁর দাপট যে কমেনি, তারও প্রমাণ পেয়েছেন তৃণমূলে আরাবুলের বিরোধী গোষ্ঠীর ওই নেতারা। ভাঙড় কলেজে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ নিয়ে আরাবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ওই নেতাদের অভিযোগ, মাস ছ’য়েক আগে ভাঙড় কলেজে ৬ জন অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হয়। জেলা পরিষদের এক কর্মাধ্যক্ষের ‘নাবালক’ ছেলেকেও তথ্যে কারচুপি করে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনাটি তাঁরা দলের রাজ্যস্তরের নেতাদেরও জানিয়েছেন বলে ওই নেতাদের দাবি।
এই সব অভিযোগের ব্যাপারে কী বলছেন আরাবুল?
বুধবার তিনি বলেন, “সিন্ডিকেট বা জোর করে জমি নেওয়ার ব্যাপারে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। কলেজে নিয়োগও হয়েছে নিয়ম মেনেই।” তবে হলফনামা নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |