কালবৈশাখীর কোপে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি উড়ান বুধবার বিকেলে জরুরি অবতরণ করল মুর্শিদাবাদের সালার এলাকায়। ঝোড়ো হাওয়া, প্রবল বৃষ্টির মধ্যে ধূসর রঙের যুদ্ধবিমানটি সালারের রাইগ্রামের কাছে একটি ধানি জমিতে আছড়ে পড়লেও তার চালকের আঘাত লাগার কোনও খবর মেলেনি। তেমনই মেলেনি, দেশের আকাশসীমা ভেঙে কী করে ওই যুদ্ধবিমানটি ঢুকে পড়ল, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যাও।
যুদ্ধবিমানটির চালক রশিদের অবশ্য দাবি, বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিতেই এ দিন দুপুরে তিনি বাংলাদেশের যশোহর থেকে উড়েছিলেন। মাঝ আকাশে আচমকা প্রবল ঝড়ের মুখে দিগভ্রষ্ট হয়েই তিনি ভারতীয় আকাশ সীমা ভেঙে ঢুকে পড়েন। তিনি বলেন, “চারপাশ অন্ধকারে
ঢেকে গিয়েছিল। সীমানা বোঝার অবস্থাই ছিল না। কিছু একটা ভুল করছি বুঝতে পারলেও উড়ান নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ছিল না আমার।”
যুদ্ধবিমানটি ভারতীয় আকাশ সীমা লঙ্ঘন করা সত্ত্বেও কলকাতা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বা এটিসি হদিস পেল না কেন? কলকাতা এটিসি’র ব্যাখ্যা, এক থেকে দু হাজার মিটার উচ্চতায় কোনও উড়ান চলাচল করলে রাডারে তা ধরা পড়ে না। এ ক্ষেত্রে ওই যুদ্ধবিমানটিও যথেষ্ট নিচু দিয়ে উড়ছিল বলেই মনে করছে তারা। কিন্তু কলকাতা এটিসি’র নজর এড়িয়ে গেলেও দেশের সীমান্ত ঘেঁষা আকাশ সীমায় কোনও উড়ান দেখলেই তার উপরে নজরদারির দায় সেনাবাহিনীর মিলিটারি লিঁয়াজ ইউনিট বা এমএলইউ-এর। |
বিমান যত নিচু দিয়েই উড়ুক না কেন এমএলইউ-এর নজরদারি এড়ানোর কথা নয়। ১৯৯৩ সালে পুরুলিয়ায় অস্ত্রবর্ষণের ঘটনার পরে এ ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা রয়েছে সেনাবাহিনীর ওই দফতরের। তা সত্ত্বেও ওই উড়ানটি দেশের আকাশ সীমা ভেঙে ঢুকে পড়ল কী করে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, ওই যুদ্ধবিমানটি ভারতীয় আকাশ-সীমা পার হয়ে ঢুকে পড়ার পরেই বিএসএফ তার খোঁজ শুরু করে। তারাই প্রথমে জানতে পারে বাংলাদেশ বায়ুসেনার ওই যুদ্ধবিমানটি মুর্শিদাবাদের কোনও মাঠে জরুরি অবতরণ করেছে। এ দিন বিকেলে, স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছে ভিন-দেশি ওই বিমান অবতরণের খবর শুনে প্রথমে ব্যাপারটা বিশ্বাসই করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্তা
বলেন, “সালারের ওই গ্রাম থেকে সীমান্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে। একটা বাংলাদেশের যুদ্ধবিমান এতটা পথ বিনা বাধায় যে ঢুকে পড়তে পারে, এটাই প্রথমে বিশ্বাস করা যায়নি। পরে স্থানীয় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে যুদ্ধবিমানটির খোঁজ পায়।” সালার থানার ওসি সুব্রত মজুমদার ঘটনাস্থলে প্রথম পৌঁছন। ঘটনাস্থল থেকে ফোনে তিনি জানান, বিমানটির গায়ে বেশ কিছু নির্দেশ রয়েছে। সবই বাংলায় লেখা, ‘প্রপেলার হইতে সাবধান’ কিংবা ‘দরজা টেনে বন্ধ করুন’ গোছের সতর্কবার্তা। তা থেকেই বোঝা যায় বিমানটি বাংলাদেশ বায়ুসেনার। |