|
|
|
|
রাস্তা নিয়ে সংশয় কাটছে না নেতাইয়ের |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
রাস্তার কাজ চলছে, আশ্বস্ত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু লালগড় থেকে নেতাই হয়ে ডাইনটিকরি পর্যন্ত ৬ কিমি রাস্তাটি আজও বেহাল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাই রাস্তা পাকা হবেই, আশ্বস্ত ছিলেন গ্রামবাসীরাও। কিন্তু অর্ধেক রাস্তায় কেবল মোরামটুকু পড়েছে।
মমতার সভা, তাই ভিড় হবেই, আশ্বস্ত ছিলেন লালগড়ের তৃণমূল নেতারাও। কিন্তু মঙ্গলবারের সভায় সেই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো কম।
২০১০ সালের ৯ অগস্ট লালগড়ের এই রামকৃষ্ণ বিদ্যালয়ের মাঠেই কিন্তু তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতার সভায় ভিড় উপছে পড়েছিল। এ বার সেই মাঠ মেরেকেটে অর্ধেকেরও কম ভরেছিল। ভিড় এত কম হল কেন? তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, প্রথমত তীব্র গরম। দ্বিতীয়ত অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক নয়, সরকারি। তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায় বলেন, “মঙ্গলবার লালগড়ের সভা ছিল প্রশাসনের। সভা নিয়ে প্রচারের দায়িত্বেও ছিল প্রশাসন। দলীয় সভার ক্ষেত্রে যানবাহনের ব্যবস্থা থাকে। মঙ্গলবার সভায় সেই সুযোগ কার্যত ছিল না। তা ছাড়া গরমও অত্যধিক ছিল। এসব কারণে তুলনামূলক ভাবে লোকসমাগম কিছুটা কম হয়েছিল।” সিপিএমের বিনপুর জোনাল কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সুশান্ত কুণ্ডুর অবশ্য বক্তব্য, “বর্তমান সরকার ও শাসক-দলের প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হচ্ছে। তাই সভাতেও লোক কম গিয়েছে।” |
 |
লালগড়ে রামকৃষ্ণ বিদ্যালয়ের মাঠে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর সভা। নিজস্ব চিত্র । |
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নেতাই কাণ্ডের পরেই গ্রামে এসে রাস্তার দুর্দশা দেখে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাজ্যে ক্ষমতায় এলে ওই রাস্তাটি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পাকা করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গত বছর অক্টোবরে জঙ্গলমহলে এসেও মমতা ফের ঘোষণা করেন, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৮৪টি মৌজাকে সংযুক্ত করতে ৮১ কোটি টাকায় ১৬২ কিলোমিটার রাস্তার জন্য সমীক্ষা ও ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। লালগড় থেকে নেতাইয়ের রাস্তাও পাকা হবে। তারপরেও পাক্কা ৬ মাস কেটে গিয়েছে। রাস্তা সেই বেহাল। এমনকী, মঙ্গলবার লালগড় রামকৃষ্ণ বিদ্যালয়ের মাঠের সভাতেই তা জানিয়ে দেন নেতাই গ্রামের মা-হারা তরুণী জনতা আদক।
চলতি বছর জানুয়ারির গোড়ায় নেতাই গ্রামের ওই রাস্তা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। জলকাদা মাখা রাস্তায় পিছলে পড়ার উপক্রম হয় তাঁর। রাস্তা সংস্কারে সুকুমারবাবু তাঁর দফতর থেকে ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন। সেই টাকায় মাস দু’য়েক আগে লালগড় থেকে নেতাই পর্যন্ত ৩ কিমি রাস্তায় মোরাম ফেলা হয়। তবে রাস্তার ধারে নিকাশি নালা নেই। ফলে বৃষ্টি হলে কাঁসাইয়ের তীরবর্তী নেতাই গ্রামের ওই রাস্তা ফের চলাচলের অযোগ্য হয়ে যাবে বলে গ্রামবাসীর আশঙ্কা। মাস দেড়েক পরেই বর্ষা নামবে। তার আগে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মাফিক রাস্তা আদৌ পাকা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে নেতাইবাসী।
এর জন্য প্রশাসনকে দায়ী করেছেন এলাকাবাসীর একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, প্রশাসনের গড়িমসিতেই প্রকল্পগুলি ঠিকঠাক রূপায়িত হচ্ছে না। |
 |
নেতাইয়ের সেই রাস্তা। বুধবার দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি। |
তা ছাড়া প্রশাসনিক কর্তারাও মুখ্যমন্ত্রীকে সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না। মঙ্গলবার লালগড়ের সভায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রশাসনিক সূত্রেই তিনি জেনেছেন যে নেতাই গ্রামে রাস্তার কাজ চলছে। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে ডেকে পাঠান নেতাইয়ের তরুণী জনতা আদককে। জনতার মা গীতালিদেবী নেতাই-কাণ্ডে নিহত হয়েছিলেন। জনতা মমতাকে জানান, পাকা রাস্তার কাজ শুরুই হয়নি।
কেন শুরু হয়নি কাজ?
প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় জেলা জুড়ে যে ১৬২ কিলোমিটার রাস্তার কাজ হওয়ার কথা, তার মধ্যেই রয়েছে লালগড় থেকে নেতাই হয়ে ডাইনটিকরি পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তাটি। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় নেতাইয়ের রাস্তার অন্তর্ভুক্তিতেই বেশ কিছুটা সময় লেগে গিয়েছে। তবে গত ১৪ এপ্রিল নেতাইয়ের ৬ কিলোমিটার রাস্তার জন্য টেন্ডার আহ্বান করে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ‘ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট রুর্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’। এখন দরপত্র জমা নেওয়ার কাজ চলছে। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত অবশ্য নেতাইয়ের রাস্তা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “লালগড়ের ওই রাস্তাটি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনাতেই হবে। টেন্ডার-প্রক্রিয়া শেষ হলেই কাজ শুরু হবে।”
নেতাইয়ের রাস্তা একটি উদাহরণ মাত্র। জঙ্গলমহলের উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত অনেক প্রকল্প ঘিরেই এখন সংশয়ে এলাকার মানুষ। যেমন, নয়াগ্রামে সুবর্ণরেখার উপর সেতুর কাজ এখনও শুরু হয়নি, আদিবাসীদের ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার প্রকল্পও অনিয়মিত। সিপিএম নেতা সুশান্তবাবুর বক্তব্য, “উন্নয়নের প্রচার-ফানুস মানুষ ধরে ফেলেছেন।” |
|
|
 |
|
|