ইডেনে নাইট ম্যাচেও নিশ্চিত নন দিন্দা
চুল ছেঁটে সৌরভ টিম নিয়ে
পড়লেন ডোনাল্ডের সঙ্গে
যুবরাজ সিংহকে কাঁচি আর হেয়ার জেল নিয়ে পুণে আসতে হচ্ছে না। যুবি এসে পৌঁছনোর আগেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর বহুচর্চিত চুল কেটে ফেললেন! বৃহস্পতিবার পুণের মাঠে ফের উইকেট নিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত ওপরে তুলে সেই উত্তেজিত দৌড় দৌড়তে দেখা যেতে পারে তাঁকে। কিন্তু হাওয়ায় উড়তে থাকা এলো চুলের ছবি আর উঠছে না।
কোটলায় পিটারসেনের উইকেট নিয়ে উসেন বোল্টের কায়দায় দৌড়-উত্তর জাতীয় মিডিয়ায় সৌরভের চুল ছিল ‘হট টপিক’। এমনকী ওপিনিয়ন পোল পর্যন্ত চলছিল যে, কী ধরনের চুলের স্টাইলে তাঁকে ভাল দেখাবে। যুবরাজ সিংহের মতো কেউ কেউ আবার ঠাট্টা করে টুইট করেন যে, ‘দাদা’-র জন্য কাঁচি আর জেল নিয়ে আমি আসছি। তোমার হাতে চব্বিশ ঘণ্টা সময় দাদা। নিজে চুল কাটবে কি না সেটা এর মধ্যে ঠিক করে নাও।
শেষ পর্যন্ত যুবিকে আর কাঁচি হাতে আসরে নামতে হচ্ছে না। বুধবার সকালে টিম হোটেলের পার্লারে গিয়ে সৌরভ নিজেই ছোট ছোট করে চুল কাটিয়ে নিলেন। রবীন্দ্র জাডেজাদের মতো কোনও আধুনিক ছাঁট-টাটের ব্যাপার নেই। একেবারে বাংলা ছাঁট। কিন্তু ‘সেট’ করা। এলেমেলো হয়ে বাতাসে উড়বে না। দুপুরে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স-কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ম্যাচ দেখতে দেখতে হোটেলে নিজের ঘরে বসে স্বীকারও করলেন, “চুলটা সত্যিই খুব বেখাপ্পা হয়ে গিয়েছিল।”
নতুন ছাঁটে। টিম হোটেলে সৌরভ। পুণেতে বুধবার। ছবি: উৎপল সরকার।
যুবরাজের কাঁচি হাতে তোলা না হয় আটকালেন। কিন্তু সহবাগের হাতে চূর্ণ হওয়ার পর দেখেশুনে মনে হচ্ছে পুণে অধিনায়ককেই ছুরি-কাঁচি নিয়ে নামতে হচ্ছে। চার ওভার বাকি থাকতে আট উইকেটে হার। পরের প্রতিপক্ষ যতই হোক না ডেকান চার্জার্স। যারা ইডেনে বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়া ম্যাচের দাক্ষিণ্যে তাদের পয়েন্টের অ্যাকাউন্ট খুলেছে। ছয় ম্যচে একটাও জয় নেই। টেবিলে সবার নিচে পড়ে আছে মাত্র এক পয়েন্ট নিয়ে। তবু আট উইকেটে হারের ময়নাতদন্ত এড়ানো যাচ্ছে না। গত কাল মাঠ থেকে ফিরেই যেমন সৌরভ বসেছিলেন কয়েক জনকে নিয়ে। সবাই একমত, টিমটাকে সবথেকে বেশি করে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত দেখিয়েছে। গত দশ দিনে পাঁচটা ম্যাচ খেলতে হয়েছে স্টিভ স্মিথদের। সঙ্গে লাগাতার ট্র্যাভেলিং। লন্ড্রি দেওয়ার সময়টুকু পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।
দিল্লি-বিপর্যয়ের ময়নাতদন্তে বসে পুণে টিমের অনেকের মনে হয়েছে, এ রকম নিংড়ে নেওয়া সূচির মধ্যে পুণের এই দাবদাহে ম্যাচের আগের দিন দুপুরে হোটেল থেকে এক ঘণ্টার বাসযাত্রা ঠেঙিয়ে প্র্যাক্টিস না করতে গেলেই ভাল হত। এ দিন যার জন্য প্র্যাক্টিস বাতিল করে দেওয়া হল। বিকেলে শুধু জিম আর সুইমিং পুল সেশন। স্ট্র্যাটেজি পাল্টে এ বার তারা ম্যাচের দিন মাঠে যেতে চায় সম্পূর্ণ এনার্জি নিয়ে। বৃহস্পতিবারের ম্যাচের পর দু’দিনের ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে। যে যার বাড়ি ফিরে যেতে পারে। সৌরভ যেমন দু’দিনের ছুটিতে ফিরবেন কলকাতা। দুপুরে প্লেয়ারদের নিয়ে যাওয়া হল মুভি দেখাতে। ভিকি ডোনর। বিদেশি ক্রিকেটাররাও কেউ কেউ গেলেন। সৌরভ যাননি। রণদেব বসু তাঁকে বলে গেলেন, “দাদি গেলে পারতে। দারুণ হয়েছে মুভিটা।” পুণে অধিনায়ক যাবেন কী? তিনি যে ও দিকে ছুরি-কাঁচি নিয়ে অপারেশনে বসেছিলেন অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে।
প্রাক্তন দক্ষিণ আফ্রিকান পেসারের পরিবার এখানে এসেছে। ছেলেটা বেশ ফুটফুটে। বাবার হাত ধরে মাঠেও যাচ্ছে। কিন্তু পুণে অধিনায়ক বোলিং কোচকে বেশি ব্যস্ত করে দিলেন তাঁর ক্রিকেট-সংসার নিয়ে। উথাপ্পার স্লো ব্যাটিং একটা দিক। সহবাগদের সামনে পুণের বোলিংকেও যে খুব ন্যাতানো লেগেছে সেটা তো যে-কেউ বলবে। সৌরভ লিফটের মধ্যেও ডোনাল্ডকে ছাড়ছেন না। বলে গেলেন, সন্ধ্যায় আবার বসবেন বোলারদের নিয়ে। হালচাল দেখে মনে হচ্ছে, লিউক রাইটের জায়গায় আবার মার্লন স্যামুয়েলসকে ফেরানো হতে পারে প্রথম একাদশে। স্যামুয়েলসের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে যতই কথা উঠুক। সৌরভ বোলার স্যামুয়েলসের কার্যকারিতা মাথা থেকে দূর করতে পারছেন না। তাঁর ওই টেনে টেনে ১২০ কিলোমিটার বেগে স্পিন ভীষণ উপযোগী অস্ত্র বলে মনে হচ্ছে তাঁর।
যাঁকে পুণে ওয়ারিয়র্স ক্রিকেট-ভক্তরা খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তাঁর সম্পর্কে আবার আতঙ্কিত হওয়ার মতো খবর পাওয়া গেল এ দিন। অশোক দিন্দা। বৃহস্পতিবার ডেকানের বিরুদ্ধে বা ১ মে কটকে ফিরতি ম্যাচে খেলার কোনও প্রশ্ন নেই। চূড়ান্ত সংশয় তৈরি হয়েছে এমনকী তিনি ৫ মে-র ইডেনের মহারণেও নামতে পারবেন কি না। এ দিন হোটেলে নিজের ঘরে বসে দিন্দা বলছিলেন, “জানি না কবে মাঠে ফিরতে পারব। সাইড স্ট্রেন সারতে দু’সপ্তাহের বেশি লেগে যায়। দিন দশেক মতো হয়েছে। এখনও যা অবস্থা, বল করতে পারব না। শুধু রিহ্যাবিলিটেশন করে যাচ্ছি।” অনেকের মনে হচ্ছে, দিন্দা না থাকায় শুরুর ওভারগুলোতে বল হাতে সেই আগুনটাই উৎপন্ন হচ্ছে না। এই সপ্তাহটা পুণের আইপিএল ভাগ্য নির্ধারণের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ সপ্তাহ। আর এটা বড়সড় ঝটকা যে, সম্ভবত পুরো সপ্তাহটা দিন্দাহীন কাটাতে হবে।
ডেকান কেমন টিম? পয়েন্ট টেবিলের দিকে তাকালে বলতে হবে, এ বারের আইপিএলের সবথেকে লজঝড়ে টিম। পুণে অবশ্য হালকা ভাবে নেওয়ার বিলাসিতা দেখাচ্ছে না। জনপ্রিয় হিসেব হচ্ছে, বাকি থাকা আটটা ম্যাচের মধ্যে অন্তত চারটে জিততে হবে সেমিফাইনালের রাস্তায় টিঁকে থাকতে গেলে। এখনও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে এক বার খেলতে হবে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে খেলতে হবে। কেকেআর-এর সঙ্গে দু’টো ম্যাচই বাকি। ডেকানের সামনে পিছলে গেলে তাই রক্ষে নেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট! সৌরভ নিজেই তো গত কয়েক বছরে কত বার দেখেছেন মুখের সামনে থেকে সেমিফাইনালের গ্রাস হাতছাড়া হল!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.