শহর জুড়ে অবৈধ ভাবে পুকুর ভরাট চলছে। সম্প্রতি এমন বেশ কয়েকটা অভিযোগ জমা পড়েছিল কালনা পুরসভায়। অভিযোগকারীদের অনেকেই দাবি করেছেন, এর পিছনে রয়েছে দালাল চক্রের হাত। পরপর এ ধরনের অভিযোগ পেয়ে বুধবার শহরের নানা জায়গায় অভিযান চালায় পুরসভা ও মৎস্য দফতর। অভিযানে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে, জানিয়েছেন পুরসভা ও মৎস্য দফতরের কর্তারা।
কালনা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি পুকুর ভরাট সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি অভিযোগ আসায় তারা নড়েচড়ে বসে। তার পরেই এ দিন অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ছিলেন কালনার উপ-পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ ও মৎস্য দফতরের কালনা ১ ব্লকের এক্সটেনশন অফিসার চমক মজুমদার। প্রথমে তাঁরা যান বারুইপাড়ার দুলালমুচির মোড়ে। সেখানে দেখা যায়, একটি পুকুরের বড় অংশ বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই অংশে মাটি ফেলে বোজানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন এক পুকুর মালিক। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মৎস্য দফতরের আধিকারিক চমকবাবু বলেন, “বছরে ছ’মাস জল থাকে, এমন যে কোনও জায়গা বোজানো বেআইনি।” পুরসভার তরফে ওই পুকুরের মালিকদের খোঁজ করা হয়। তবে ৯ শরিকের মধ্যে আসেন মাত্র এক জন। ব্রজবুলি গঙ্গোপাধ্যায় নামে ওই ব্যক্তি অবশ্য দাবি করেন, এক শরিক এই কাজ করেছেন। এতে তাঁদের সায় নেই। চিঠি দিয়ে এ কথা পুরসভাকে জানাবেন বলেও জানান তিনি। |
শাসপুর এলাকায় ১৩২৫ নম্বর খতিয়ান ও ২১৪ নম্বর দাগে ১৮ শতক একটি জলাজমি ছিল বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। পুরসভা ও মৎস্য দফতরের প্রতিনিধিরা এ দিন সেখানে গিয়ে দেখেন, সেই জায়গা শক্ত মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। উপ-পুরপ্রধান জানান, নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, রেকর্ড অনুযায়ী এই জলাজমির মালিক তারাপদ পাল নামে এক ব্যক্তি। স্থানীয় বাসিন্দা বিপুল বিশ্বাস, বিমল বারুইদের অভিযোগ, “এলাকার মানুষকে ভুল বুঝিয়ে কয়েক জন বেআইনি ভাবে এই মাটি ভরাট করেছে।”
শহরের নেপপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি পুকুরের বেশ খানিকটা অংশ বোজানো হয়ে গিয়েছে। শুধু বেআইনি ভাবে পুকুর বোজানোই নয়, শহরের অজস্র পুকুর মাছচাষের অভাবে মজে গিয়েছে বলেও এ দিনের অভিযানে নজরে এসেছে। অভিযোগ, মজে যাওয়া পুকুরে অবৈধ ভাবে নির্মাণকাজ শুরু করেছে অনেকে।
এ দিন মৎস্য দফতরের আধিকারিক চমকবাবু উপ-পুরপ্রধান দেবপ্রসাদবাবুকে পরামর্শ দেন, বেআইনি ভাবে বোজানো পুকুরের মালিকদের পুরসভার তরফে চিঠি পাঠানো হোক। তাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জলাভূমিকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিতে হবে। সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে যদি দেখা যায়, পুকুরের মালিক নির্দেশ মানেননি, সে ক্ষেত্রে তাঁর বা তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করা হবে। চমকবাবু আরও বলেন, “মজে যাওয়া পুকুর নিয়েও পুরসভা উদ্যোগী হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী পুকুর মালিককে একটি চিঠি পাঠিয়ে পুকুর পরিষ্কার করে মাছ চাষ করতে বলতে পারে। মালিক পক্ষ তাতে উদ্যোগী না হলে পুরসভা অন্য কাউকে লিজ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। তবে লিজের টাকা পাবেন পুকুর মালিক।”
উপ-পুরপ্রধান জানান, পুর এলাকায় পুকুর বোজানো ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মাস তিনেকের মধ্যে এ ব্যাপারে সাত জনকে সতর্ক করা হয়েছে। এমনকী মৎস্য দফতরের তরফে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ এক পুকুর মালিককে গ্রেফতারও করে। তিনি বলেন, “মৎস্য দফতরের পরামর্শ মতো যে সমস্ত পুকুর বোজানোর কাজ শুরু হয়েছে তাদের মালিকদের দ্রুত চিঠি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” |