সম্পাদক সমীপেষু ...
ইমামভাতা নয়, জরুরি উন্নয়ন
দিন কয়েক আগে কলকাতা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হয়ে গেল ইমাম সম্মেলন। রাজ্যের সংখ্যালঘু দফতর আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী নানা ঘোষণা করলেন। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দিক, ইমামদের ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা-সহ ইমামদের জমি-বাড়ির বন্দোবস্ত এবং ইমাম-সন্তানদের পড়াশোনার দায়িত্ব সরকারের। ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশে সরকারি বদান্যতায় এ রকম একটি আয়োজন অভাবনীয়।
ইমামরা হলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রধান। সমাজের শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি। তাঁদের অভাব-অনটন আছে, এটাও সত্যি। কিন্তু ভারতে নানা ধর্মমতের লোক আছেন। সরকার বিশেষ কোনও ধর্ম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষকে সুবিধা দিলে সেটা হয় অন্যায়। এখন আবার পুরোহিতরাও বলতে শুরু করেছেন তাঁদের ভাতা-সহ দাবিদাওয়া নিয়ে।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ইমামদের ভাতা দেওয়া হবে ওয়াকফ বোর্ডের অর্থে। কিন্তু ওয়াকফের কিছু নির্দিষ্ট রাজনীতি আছে। যেমন, ওয়াকফের অর্থ ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ-সহ মুসলিম সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের কাজে লাগাতে হবে। ইমামদের কিছু সুবিধা দিলেই ওয়াকফের উদ্দেশ্য সাধিত হবে না।
সরকার মুসলিম উন্নয়ন করতে চাইলে গরিব মুসলিম ছেলেমেয়েদের ফ্রি পড়াশোনার ব্যবস্থা করুক। মুসলিমপ্রধান এলাকায় নতুন নতুন স্কুল-কলেজ গড়ে তুলুক। মুসলিমদের জন্য বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা হোক নতুন ভাবে। মুসলিম ছেলেমেয়েদের তুলে আনা হোক ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, গবেষক করার জন্য। কর্মসংস্থান হোক সরকারের প্রচেষ্টায়। তা হলেই মুসলিম সমাজ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে পারবে।
পড়ুয়াদের আরও পিছিয়ে দিচ্ছি কি?
পড়ুয়া কেন ফেল করল, তার কারণ খোঁজার তাগিদটা চোখে পড়ে না’ শীর্ষক নিবন্ধে (৭-২) মানবী মজুমদার পড়ুয়াদের মূল্যায়ন সম্পর্কে প্রচলিত পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
গ্রামাঞ্চল ও শহরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই দশক যাবৎ শিক্ষকতা করার পরিপ্রেক্ষিতে প্রচলিত পরীক্ষা ব্যবস্থায় কিছু পড়ুয়ার ফেল করার কারণ খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু নীতি নির্ধারকদের কাছে আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষকের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার কোনও মূল্য নেই। আমাদের প্রাথমিক স্তরে পাশ-ফেল প্রথা বহু দিন উঠে গেছে। আছে পড়ুয়াদের আনন্দপাঠের মাধ্যমে ধারাবাহিক মূল্যায়ন, এমনকী গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য বহির্মূল্যায়ন। বিগত কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক শিক্ষকদের ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ চলছে। বেশির ভাগ প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১ : ২৫। যেখানে সমস্ত কিছু সুযোগ আছে তেমন প্রাথমিক স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া শেষ করে ১৩০ জন পড়ুয়া আমাদের বিদ্যালয়ে এই শিক্ষাবর্ষে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। ভর্তির পরে তাদের মান যাচাই করার জন্য বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে অতি সাধারণ মানের ৩০ নম্বরের অভীক্ষা নিয়ে দেখলাম, ২২ জন শূন্য পেয়েছে আর ১ থেকে ৫ পর্যন্ত পেয়েছে ৪২ জন ছাত্রছাত্রী। এদের মধ্যে ৫০ শতাংশ বাংলা পড়তে শেখেনি। নামতা ও সাধারণ অঙ্ক পর্যন্ত জানে না। গত বছর অনুরূপ পরীক্ষায় একই চিত্র দেখেছি। যে পড়ুয়ারা বর্ণপরিচয় পড়তে পারে না, বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণির পাঠক্রম পড়ানোর সময় তাদের কী পরিস্থিতি হবে! শ্রেণিকক্ষে এই পড়ুয়াদের অবস্থা খাঁচায় বন্দি পাখির মতো। ছুটির ঘণ্টা শুনে তাদের মুক্তির আনন্দ দেখে ভাবি, ৯-১০ বছর বয়সেই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে? এই সব পিছিয়ে পড়া (না, পিছিয়ে-দেওয়া!) পড়ুয়াদের পঞ্চম শ্রেণির মানে উন্নীত করা পৃথক কোনও ব্যবস্থা ছাড়া কী ভাবে সম্ভব? সাধারণের জন্য সিলেবাস, একক অভীক্ষা প্রভৃতি অনুসরণ করলে এরা আরও পিছিয়ে পড়তে থাকে। শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী এদের শূন্য মান নিয়েই ‘অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ’ বলে শংসাপত্র দেওয়া হবে। তার পর? তা হলে প্রাথমিক স্তর থেকে শূন্যমানে থাকা পড়ুয়াদের ছেড়ে দিয়ে কি পাকাপাকি ভাবে তাদের জীবন থেকে উচ্চ প্রাথমিকের পর মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না?
পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কয়েকটি বিষয়ের অবাস্তব পাঠক্রম বহু পড়ুয়াকে মানসিক চাপে পঙ্গু করে দিতে যথেষ্ট। বিশেষত গণিত ইতিহাস জীবনবিজ্ঞান ও ভৌতবিজ্ঞান পাঠক্রম সাধারণ পড়ুয়াদের কথা ভেবে রচনা করা দরকার। যে-সব পড়ুয়া সাধারণ যোগ-বিয়োগ পর্যন্ত করতে পারে না, বা বলা ভাল আমরা শেখাতে পারি না তাদের কাছে বর্তমান সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির গণিতের পাঠক্রম বিষবৎ। ফলে, ড্রপ আউট হয় বহু পড়ুয়া। যে সব বর্ধিষ্ণু এলাকায় পড়ুয়াদের কাছে মিড ডে মিল অবশ্য-প্রয়োজনীয় নয়, বরং বাড়তি পাওনা, সেখানে ড্রপ আউট বেশি হয় আর্থিক সঙ্কটে তত নয়, যতটা সিলেবাস গলাধঃকরণের চাপে।
পিছিয়ে-পড়াদের চিহ্নিত করে তাদের উপযুক্ত মানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন না-করলে পিছিয়ে-পড়া পড়ুয়া ক্রমশ আরও পিছিয়ে পড়বে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.