কাজে যোগ দেওয়ার পর টানা প্রায় দু’মাস ধরে চিকিৎসক ছুটি নিয়ে বাড়িতে বসে থাকায় দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালে অস্থি-শল্য চিকিৎসা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ‘মডেল হাসপাতাল’ হিসাবে রাজ্য সরকার গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালকে চিহ্নিত করে নানা পরিকাঠামো তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে। সেই সময় এই হাসপাতালে অস্থি-শল্য বিভাগের একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের টানা অনুপস্থিতিতে এলাকার ৬টি ব্লকের মানুষ সমস্যায় পড়ে গিয়েছেন। সড়ক-দুর্ঘটনা প্রবণ জেলার হরিরামপুর থেকে কুশমন্ডির মতো দূরবর্তী এলাকার রোগীদের প্রায় ৮৫ কিলোমিটার দূরে বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল অথবা ১১০ কিলোমিটার দূরে মালদহ হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই চিকিৎসক সন্দীপ চক্রবর্তী শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়ে তাঁর মালদহের বাড়িতে বসে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করে যাচ্ছেন। চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যার বিষয়ে গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুদীপ দাস মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানিয়েছেন। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস এ সম্পর্কে বলেন, “শারীরিক অসুস্থতার কারণে ছুটি নিয়ে কোনও চিকিৎসক বাড়িতে রোগী দেখছেন বলে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এ ব্যাপারে কোনও অভিযোগ পাইনি। তা ছাড়া ছুটিতে থাকলে তাঁর বদলে অন্য কোনও চিকিৎসক দেওয়াও সম্ভব নয়।” তবে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বিষয়টি জানিয়ে সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হবেন বলে অসিতবাবু আশ্বাস দিয়েছেন। মোবাইল ফোনে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সন্দীপবাবু বলেন, “আমার বাড়ির সঙ্গেই চেম্বার। রোগী এলে দেখতেই হয়।” তবে টানা ছুটিতে থাকার বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ওই চিকিৎসকের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর মতো অস্থি-শল্য চিকিৎসায় এমডি ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে মহকুমা হাসপাতালে বদলি করে দেওয়ায় সন্দীপবাবু হতাশায় ভুগছেন। মালদহ হাসপাতালে থাকার সময় পর পর দুটি ভুল চিকিৎসার অভিযোগের ঘটনায় তাঁকে জড়িয়ে রোগীর তরফে চাপ তৈরির ঘটনায় সন্দীপবাবু বিরক্ত বলে জানা গিয়েছে। তবে তাঁর ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য সাধারণ গরিব রোগীরা দিনের পর দিন কেন চিকিতসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবেন, এই প্রশ্ন উঠেছে। জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গৌরব রায় মুখ খুলতে চাননি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গঙ্গারামপুরের একমাত্র অস্থি-শল্য চিকিৎসক শুভজিৎ মন্ডল গত ২ ফেব্রুয়ারি বদলি হয়ে চলে যান। তাঁর বদলে মালদহ থেকে বদলি হয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালে যোগ দেন সন্দীপবাবু। পরদিনই তিনি ‘ক্যাজুয়াল লিভ’ নিয়ে চলে যান। এরপর ১ মার্চ কাজে যোগ দিয়ে তিনি ১০ দিনের ছুটি নিয়ে চলে যান। এরপর থেকে ওই ছুটি ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছেন বলে অভিযোগ। এখনও পর্যন্ত তিনি গঙ্গারামপুর হাসপাতালে যোগ দেননি। ফলে এই হাসপাতালে অস্থি সংক্রান্ত কোনও চিকিৎসা রোগীরা পাচ্ছেন না বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি উপর মহলেও জানিয়েছেন। |