আগুনে আতঙ্ক হাসপাতালে
ব্লিচিং পাউডারের সঙ্গেই রাখা ছিল মিউরিয়েট অ্যাসিড, ইউক্যালিপটাস তেলের প্যাকেট। কোনও ভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়ার জেরে বিস্ফোরণ ঘটে। আগুনে পুড়ে যায় সাব-স্টোর রুমের জিনিসপত্র ও আসবাব। আসানসোলে ইসিএলের কাল্লা হাসপাতালে এই ঘটনার পরে কর্তৃপক্ষের অসতর্কতা ও সচেতনার অভাবকেই দায়ী করছেন রোগীর আত্মীয় ও এলাকার বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের অস্থি বিভাগ সংলগ্ন ওই সাব-স্টোর রুমে বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়। আগুন ধরে যায় ঘরের জিনিসপত্র ও আসবাবে। ধোঁয়ায় ঢেকে যায়া গোটা চত্বর। রোগীর আত্মীয়-পরিজন ও হাসপাতালের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। পরে দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। ওই বিভাগের রোগীদের উদ্ধার করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই সাব-স্টোর রুমটি নার্সেরা বসার জন্যও ব্যবহার করতেন। বিস্ফোরণ ঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। পোড়া পালথিনের বোতল, ওষুধের শিশি, সিরিঞ্জ ছড়িয়ে রয়েছে। ঝাঁঝালো গন্ধ ছেয়ে গিয়েছে। কয়েক জন নার্স জানান, বিস্ফোরণের সময়ে তাঁরা ওই ঘরের কাছাকাছি ছিলেন। ওয়ার্ডে ব্যবহারের জন্য সেখানে কয়েকটি ইউক্যালিপটাস তেলের জ্যারিকেন, অ্যাসিড ও ব্লিচিং পাউডার রাখা ছিল। কোনও ভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে বিস্ফোরণ হয়েছে। ওই নার্সদের অভিযোগ, “সম্প্রতি বেশ কয়েকটি তেলের জ্যারিকেন ফুটো হয়ে তেল বেরিয়েছিল। কর্তৃপক্ষকে আগে জানিয়েছি। কিন্তু কেউ গা করেননি।”
মঙ্গলবার কাল্লা হাসপাতালে শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।
মঙ্গলবার দুপুরের এই ঘটনার পরেই ওই বিভাগের রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন এই বিভাগে প্রায় তিরিশ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাঁদেরই এক জন অশীতিপর ভবেশ চৌহান বলেন, “হঠাৎ দেখি, ধোঁয়ায় ঢেকে গেল চার দিক। ঝাঁঝালো গন্ধে দম আটকে যাচ্ছিল। কয়েক জন কোলে করে আমাকে বের করেছে।” আর এক রোগী প্রকাশ চন্দ্র বলেন, “একটু পরেই দুপুরের খাবার খাওয়ার কথা ছিল। হঠাৎ বিকট শব্দে চমকে উঠি। কয়েক জন যুবক উদ্ধার করে নীচে নামায়।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বিস্ফোরণের পরেই ধোঁয়া ও কটূ গন্ধে ঢেকে যায় ওয়ার্ডের সর্বত্র। নার্স ও দু’জন ওয়ার্ডবয় চিৎকার শুরু করেন। ওই ধোঁয়ার মধ্যে দু’জন ওয়ার্ডবয়ের পক্ষে সব রোগীকে বের করে আনা সম্ভব ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দা ও রোগীর আত্মীয়-পরিজনেরা এগিয়ে আসেন। কাল্লা গ্রামের বাসিন্দা উদয় বাউরি বলেন, “ধোঁয়া দেখেই বুঝেছি আগুন লেগেছে। তাই উদ্ধারের জন্য ছুটে যাই।” অস্থি বিভাগের পাশেই সাধারণ বিভাগ। রানিগঞ্জের সিহারসোলের বাসিন্দা ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায় এক আত্মীয়কে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন। তিনি জানালেন, ধোঁয়া দেখেই কলকাতার আমরি-কাণ্ডের কথা মনে পড়েছিল। এলাকার যুবকেরা জানালার কাচ ভাঙতে শুরু করেন। আগুন নেভাতে জল ঢালা শুরু হয়। এক চিকিৎসক ও নার্স ট্রলি এনে দেন। তা দিয়েই রোগীদের সরানোর কাজ শুরু হয়।
পরে পুলিশ ও হাসপাতালে চিফ মেডিক্যাল অফিসার চক্রবর্তী চৌধুরীর উপস্থিতিতে হাসপাতালের পিছনে পরীক্ষামূলক ভাবে ব্লিচিং পাউডার, মিউরিয়েট অ্যাসিড ও ইউক্যালিপটাস তেল মেশানো হয়। তাতে ঝাঁঝালো গন্ধ-সহ ধোঁয়া বেরোতে শুরু করে। পুলিশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়, এই সব সামগ্রী এক সঙ্গে রাখা যাবে না। আসানসোলের দমকলের ওসি সেলিম জাভেদ জানান, হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপক সামগ্রী রয়েছে। তবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনও কর্মী নেই। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.