তাণ্ডব মৃতের আত্মীয়-বন্ধুদেরও
রণক্ষেত্র মেডিক্যালে মারমুখী জুনিয়র ডাক্তাররা
ইঁদুর মারার বিষ খেয়েছিলেন এক যুবক। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সোমবার রাতে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মঙ্গলবার দুপুরে শুভেন্দু দে (২২) নামে খড়্গপুর লোকাল থানা এলাকার কেলেঘাই গ্রামের ওই যুবক মারা যেতেই তাঁর আত্মীয়-বন্ধুরা চড়াও হন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে। চিকিৎসায় গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগে সরব হওয়ার পাশাপাশি ওই আত্মীয়-বন্ধুরা তৎক্ষণাৎ ময়না-তদন্ত করে দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্যও জোরাজুরি শুরু করেন। মেল মেডিক্যালের এক চিকিৎসককে হেনস্থা করা হয়। ওয়ার্ড-মাস্টারকেও মারধর করা হয়। ওই ওয়ার্ড-মাস্টার রঞ্জন প্রামাণিককে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। বিষ-খাওয়া রোগীর যেখানে যখন-তখন ভালমন্দ কিছু ঘটে যেতে পারে, সেখানে গাফিলতির অভিযোগ উঠছে কী ভাবেপাল্টা সেই প্রশ্ন তোলেন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। দুপুরে মারা যাওয়া রোগীকে মর্গে পাঠাতে ন্যূনতম ৪ ঘণ্টা সময় লাগে, তাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে এবং সূর্যাস্তের পর ময়না-তদন্ত সম্ভব নয়চিকিৎসকেরা এ কথা জানালেও মারমুখী ওই আত্মীয়-বন্ধুরা কিছুই শুনতে চাননি বলে অভিযোগ।
ওয়ার্ড মাস্টারকে হেনস্থা মৃতের পরিজনদের।
তাঁদের এই তাণ্ডব বেশ কিছুক্ষণ চলার পর পাল্টা মারের রাস্তা ধরেন জুনিয়র ডাক্তাররাও। পাশের হস্টেল থেকে বেরিয়ে এসে চিকিৎসক, ওয়ার্ড-মাস্টারকে যাঁরা মারধর করেছিলেন, তাঁদের পাল্টা মার শুরু করেন তাঁরা। এক সময়ে হাসপাতালে ঢোকার গেটও আটকে দেন তাঁরা। অচিরেই ফিরে আসে কয়েক দিন আগেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ-চত্বরে জুনিয়র ডাক্তারদের মারমুখী হয়ে ওঠার স্মৃতি। বর্ধমানের মতোই মেদিনীপুর মেডিক্যালেও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সময়ে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে ছবি তোলা নিয়ে তর্কাতর্কি বাধে সাংবাদিক-আলোকচিত্রীদের। তবে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই পুলিশ এসে পড়ে। পুলিশই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে মেডিক্যালে।
বিষক্রিয়ায় মৃত রোগীর আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের এই সংঘর্ষে বিকেলের ভিজিটিং-আওয়ারে অন্য রোগীদের আত্মীয়-পরিজনও সমস্যায় পড়েন। দু’পক্ষের মারমুখী মেজাজে কিছুটা আতঙ্কিতও হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। এই গোলামালের মধ্যেই মেল মেডিক্যালেই হৃদরোগ নিয়ে ভর্তি বেলদার গৈরা এলাকার সুজনবন্ধু প্রধান (৬০) মারা যান। তাঁর ছেলে অরুণের অবশ্য বক্তব্য, “বাবা খুবই অসুস্থ ছিলেন। তবে ওয়ার্ডের মধ্যে গোলমাল না হলেই ভাল হত।”
মৃতের পরিজনদের সঙ্গে হাতাহাতি জুনিয়র ডাক্তারদের।
পুলিশ আগে এসে পড়লে গণ্ডগোল বেশি দূর গড়াত না বলেও মনে করছেন অন্য রোগীর পরিজনেরা। বিষক্রিয়ায় মৃত যুবকের আত্মীয়-বন্ধুদের আচরণ নিয়েও ক্ষুব্ধ অন্য রোগীর পরিজনেরা। তাঁদের বক্তব্য, কথায় কথায় ডাক্তারদের উপর চড়াও হওয়ার বদভ্যাসে সরকারি হাসপাতালে সামান্য যে চিকিৎসা পরিষেবা মেলে তা-ও বিঘ্নিত হচ্ছে। নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও মৃতদেহের তক্ষুণি ময়না-তদন্ত করে দেহ নিয়ে যেতে চাওয়াও যে অন্যায়, তা-ও মনে করছেন তাঁরা। তবে, জুনিয়র ডাক্তারদেরও পাল্টা মারমুখী হয়ে ওঠা তাঁরা মানতে পারেছেন না।
মৃত শান্তনুর আত্মীয়-বন্ধুদের তরফে বঙ্কিম করণ, মলয় পালদের অভিযোগ, “ঠিক সময়ে ঠিক চিকিৎসা হয়নি। সে কথা বলতে গেলে ডাক্তাররাই প্রথমে চোটপাট করেন। সেই থেকেই গণ্ডগোল।” মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুদ্ধধন বটব্যালের অবশ্য বক্তব্য, “চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ একেবারেই ঠিক নয়। তা ছাড়া অভিযোগ জানানোর পদ্ধতি তো ডাক্তার, ওয়ার্ড-মাস্টারকে মারধর করা নয়। আর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই ময়না-তদন্তের দাবিই বা কী ভাবে মানা সম্ভব?”

মঙ্গলবার ছবি তুলেছেন রামপ্রসাদ সাউ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.