এসজেডিএ-তে টাকা নয়ছয়
চেয়ারম্যান আটকালেন রাস্তার বিলের ফাইল
‘পছন্দের’ ঠিকাদারদের সঙ্গে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের (এসজেডিএ) ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের ‘যোগসাজশে’ মাটি ফেলার কাজে বিপুল অঙ্কের টাকা অপচয়ের অভিযোগকে ঘিরে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসন। সরকারি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার মহাকরণ থেকেও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। তাতে সামনে এসেছে আরও দুর্নীতির অভিযোগ। একটি রাস্তা সংস্কারের বিলেও ‘কারচুপির’ অভিযোগ উঠেছে। ওই কাজে ঠিকাদারকে ‘বাড়তি টাকা’ পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ পেয়ে ‘বিল’ সংক্রান্ত ফাইলটিই আটকে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক অফিসার জানান, শুধু মাটি ফেলার কাজে নয়, আরও দুর্নীতির কথা ক্রমশ সামনে আসছে। সব ক্ষেত্রেই বিশদে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেছেন, “সরকারি অর্থ অপচয় কিংবা নয়ছয় কোনও ক্ষেত্রেই দোষীরা ছাড় পাবেন না।”
যে সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ, তখন এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান থাকা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের অবশ্য দাবি, তাঁর আমলে কোনও অনিয়মের প্রশ্ন ওঠেনি। তিনি বলেন, “চিরকালই স্বচ্ছ ভাবে কাজ করেছি। এখন অনেক প্রশ্ন উঠছে। এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।” তবে, অফিসার-ইঞ্জিনিয়ার-ঠিকাদারদের একাংশের মধ্যে ‘যোগসাজশের’ প্রশ্নে অশোকবাবুর সংক্ষিপ্ত জবাব, “কী হয়েছে আর কী হচ্ছে, সময়ই সব বলবে।”
বস্তুত, দুর্নীতির প্রশ্নে এসজেডিএ-র অন্দরে দু’টি শিবির তৈরি হয়েছে। সংস্থা সূত্রের খবর, আজ, বুধবার বোর্ড মিটিংয়ে ওই দুর্নীতি-প্রসঙ্গ তুলতে চান এক পক্ষ। পক্ষান্তরে, সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার-অফিসারদের একাংশ মিটিংয়ের আলোচ্যসূচিতে দুর্নীতির প্রসঙ্গ না থাকাটা নিশ্চিত করতে চাইছেন। এসজেডিএ-র সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অরবিন্দ ঘোষ মাটি ফেলার কাজে দেড় কোটি টাকা বাড়তি দেওয়ার বিষয়টি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলে দাবি করেছেন প্রথম থেকেই।
যদিও এসজেডিএ-র সদস্য তথা তৃণমূল নেত্রী জ্যোৎস্না অগ্রবাল বলেছেন, “বছরের পর বছর মাটি ফেলার কাজে বাড়তি টাকা দেওয়া হয় কী ভাবে? অনেকের মদত না থাকলে এটা হতে পারে না। বিশদে তদন্ত হওয়া দরকার। আমাদের কাছে অনেক দুর্নীতির তথ্য রয়েছে। ভুল বোঝাবুঝি বললেই হবে না। ঠিকাদারতন্ত্রে মদতদাতাদের চিহ্নিত করতে হবে। দরকারে দুর্নীতিগ্রস্ত ঠিকারদারদের কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। আমি বোর্ড মিটিংয়ে যা বলার বলব।” এসজেডিএ-র আর এক সদস্য, জলপাইগুড়ির তৃণমূল নেতা চন্দন ভৌমিকও জানান, তিনিও বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি জানতে চাইবেন। তাঁর কথায়, “আমাদের সরকার অস্বচ্ছ কাজ বরদাস্ত করবে না।”
এসজেডিএ-র কিছু কর্মী জানিয়েছেন, ২০১১ সালে চম্পাসারি লাগোয়া এলাকা থেকে সুকনা পর্যন্ত একটি রাস্তার কাজ হয়। সেই বাবদ প্রথমে কাগজে-কলমে বরাদ্দ হয় ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা। কাজ শেষ হওয়ার পরে ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা ‘বিল’ করেন ঠিকাদার। বরাদ্দ বহির্ভূত টাকা ‘বিল’-এ কেন দেওয়া হবে, সে প্রশ্ন তোলেন এক ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর আপত্তি অগ্রাহ্য করে অন্য দুই পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার ‘বিল’টি অনুমোদনের জন্য চেয়ারম্যানের কাছে পাঠান বলে ওই কর্মীদের দাবি। শুধু তাই নয়, ওই দুই ইঞ্জিনিয়ার মাটি কাটায় অনিয়মের বিষয়টিও ‘ধামাচাপা’ দিতে চাইছেন বলে তাঁদের অভিযোগ।
ইতিমধ্যে রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান হন রুদ্রনাথবাবু। তাঁর কাছে রাস্তার কাজ সংক্রান্ত ওই অভিযোগ যায়। তিনি বলেন, “বরাদ্দের বাইরে টাকা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ আমার কাছে পৌঁছেছে। সে জন্য ফাইলটি আটকে রাখা হয়েছে। ফের পরীক্ষার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
চেয়ারম্যান ‘কঠোর মনোভাব’ দেখানোয় এসজেডিএ-র ওই অংশের কর্মীরা আশাবাদী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.