সবে শুরু হয়েছে ইংরেজির ক্লাস। হঠাৎই বেজে উঠল মোবাইলের রিং টোন‘ম্যায় হুঁ ডন।’
শিক্ষক মাহদি আলম বুঝতে পারেন কোনও ছাত্রের পকেটেই বাজছে ওই মোবাইল। বরাবরই ডানপিটে ওই ছাত্রের নাম রুবেল শেখ। তার কাছ থেকে মোবাইলটা চাইলেই শুরু হয়ে যায় তরজা। শেষ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদ আলম বিশ্বাস এসে রুবেলের কাছ থেকে মোবাইলটি কেড়ে নেন। এরপরেই রুবেল স্কুল ছেড়ে চলে যায়। মিনিট দশেকের মধ্যেই ফিরেও আসে। তারপরে কোমরে একটি দেশি পিস্তল গুঁজে সোজা চলে যায় প্রধান শিক্ষকের কাছে। ক্ষমা চাওয়ার ভান করে সে প্রধান শিক্ষককে প্রণাম করতে গেলে তার জামার নীচ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রটি দেখতে পান মাসুদ আলম। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাকে জাপ্টে ধরেন। তারপরে তাঁর চিৎকারেই অন্যেরা ছুটে এসে রুবেলকে চেপে ধরে আগ্নেয়াস্ত্রটি কেড়ে নেন। তবে সেই আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে কোনও গুলি ছিল না। তিন রাউন্ড গুলি অবশ্য পাওয়া গিয়েছে রুবেলের প্যান্টের পকেট থেকে। মুর্শিদাবাদের গঙ্গাদাসপাড়া গোপীমোহন বিদ্যাপীঠে মঙ্গলবার এই ঘটনার পরে পুলিশ দশম শ্রেণির ছাত্র রুবেলকে গ্রেফতার করেছে। |
ওই ছাত্রের বাবা সাইফুল শেখ দিনমজুর। কর্মসূত্রে তিনি অন্যত্র থাকেন। সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছেন। মা সাগরা বিবি ওই স্কুলেরই মিড ডে মিলের রাঁধুনি। রুবেল তাঁদের একমাত্র সন্তান। তবে রুবেল কোথা থেকে ওই আগ্নেয়াস্ত্র পেয়েছিল, তা পুলিশের কাছে এখনও পরিষ্কার নয়। জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ায় ওই ছাত্রটি এক নলা একটি দেশি পিস্তল নিয়ে প্রধান শিক্ষকের উপরে চড়াও হয়। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে সে ওই আগ্নেয়াস্ত্র কোথা থেকে পেল, তা জানা যায়নি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।” তিনি বলেন, “বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে খুব তাড়াতাড়ি ওই এলাকায় পুলিশ অভিযান চালাবে।”
ওই স্কুলের শিক্ষক ও রুবেলের সহপাঠীরা জানায়, এর আগেও সে অনেক বার গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়েছে। পরীক্ষার সময় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। ক্লাসে প্রায়ই দুষ্টুমি করত। এক শিক্ষক অরূপ বাগচি বলেন, “অনেক শিক্ষকের সঙ্গেই অসভ্যতা করেছে। কিছু বলতে গেলেই হুমকি দিত।” সহপাঠিনী পাপিয়া খাতুন বলে, “ক্লাসে প্রায় সবার সঙ্গেই রুবেলের গণ্ডগোল হয়েছে। সহপাঠী হলেও আমরা ওকে ভয় পাই। তবে এই দিন ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চড়াও হবে ভাবতে পারিনি।” স্কুলের কাছেই বাড়ি রুবেলের। তবে এই ঘটনার থেকে সাইফুল শেখ ও সাগরা বিবির খোঁজ মেলেনি। |