|
|
|
|
মুক্তি পেতে আত্মহত্যার হুমকি ঘরবন্দি চোরের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • এগরা |
রাতে গৃহস্থের খাটের তলায় লুকিয়ে ছিল চোর। দেখতে পেয়ে কোনও রকমে তাকে ঘরবন্দি করে ফেলেন বাড়ির কর্তা। খবর পেয়ে পাড়ার লোকজন জড়ো হতেই উল্টো ফন্দি আঁটে চোর। মুক্তি না দিলে আত্মহত্যা করবে বলে ভয় দেখায়। ঘরের মধ্যে রাখা গৃহকর্ত্রীর শাড়ি সিলিং ফ্যানে জড়িয়ে নাটক করে বেশ কিছুক্ষণ। তাতে অবশ্য বিচলিত না হয়ে সকালে উত্তমমধ্যম পিটিয়ে চোরকে পুলিশের হাতে তুলে দেন গ্রামবাসী।
ঘটনাটি পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা থানার বেতা গ্রামের। সোমবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়ির খাটের তলায় এক যুবককে ঘাপটি মেরে থাকতে দেখে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন সাইকেল ব্যবসায়ী শ্যামসুন্দর মাইতি। ধস্তাধস্তি করে কোনও রকমে চোরকে ঘরের মধ্যে ঠেলে শিকল তুলে দেন তিনি। ততক্ষণে চিৎকার শুনে ছুটে এসেছেন প্রতিবেশীরা। চোরকে চিনতে পারেন তাঁরা। পাশেরই বেতা-মহেশপুর গ্রামের যুবক স্বপন মণ্ডল। ভিড় বাড়তে থাকে। রাতভর আটকে রেখে সকালবেলা সর্বসমক্ষে চোরের বিচারের দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সব শুনে বেজায় ভয় পেয়ে যায় স্বপন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এই বেতা থেকেই মাত্র চার কিলোমিটার দূরের দুবদা গ্রামে এক মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে দু’জনকে পিটিয়ে মেরেছিল জনতা। |
|
ধৃত স্বপন মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র। |
সেই পরিণতির ভয়েই সম্ভবত আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে সে। গৃহকর্ত্রী জয়শ্রীদেবীর শাড়ি সিলিং ফ্যানে জড়িয়ে জানলার ওপারে থাকা লোকজনদের হুমকি দেয়, “আমাকে ছেড়ে দাও। না হলে আত্মহত্যা করব। তখন পুলিশ তোমাদেরই ধরবে।” ঘাবড়ে না গিয়ে গ্রামবাসীরা এ বার মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলেন স্বপনকে। রাতভর আটকে রাখার পরে সকালে আনা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সালিশিসভায় স্বপন দাবি করে, “আমি আগে চুরি করলেও এখন করি না। লোকে অকারণ সন্দেহ করে। রাতে মদ খাওয়াটা বেশি হয়ে গিয়েছিল বলে ঘুম পাচ্ছিল। ওই বাড়ির দরজা খোলা দেখে ভিতরে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়ি।” কিন্তু আত্মহত্যার হুমকি কেন? স্বপন হেসে বলে, “সবাই চোর ভাবছে। তাই লজ্জা আর অপমানে আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলাম।”
যদিও স্বপনের এই সব কথায় গ্রামের মাতব্বরদের মন ভেজেনি। এগরা ২ ব্লকের সর্বোদয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পূর্ণেন্দু দাস, স্থানীয় বিজেপি নেত্রী মিনতি সুর, গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সচিব সিদ্ধার্থ পাহাড়িরা বলেন, “ওদের একটা দল রয়েছে। শুধু এই গ্রাম নয়, আশপাশের গ্রামেও ওরা চুরি করে। এর আগেও বহু বার ধরা পড়ে মার খেয়েছে। শিক্ষা হয়নি।”
মঙ্গলবার সকালে সালিশি সভা শেষে স্বপনকে বেদম পেটান গ্রামবাসী। ১১টা নাগাদ পুলিশ স্বপনকে উদ্ধার করে এগরা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে। স্বপনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন শ্যামসুন্দরবাবু।
ছেলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ স্বপনের বাড়ির লোকজন। স্বপনের দাদা অশোকবাবু বলেন, “ছোটবেলাতেই ও পড়াশোনা বন্ধ করে চুরিচামারি শুরু করে। তবে, এখন আর চুরি করে না। পাড়ার লোকেরা সন্দেহ করে শুধু।” মা সন্ধ্যাদেবীর কথায়, “কুসংসর্গে পড়ে নেশাভাঙ করলেও ছেলে আমার খারাপ নয়।” |
|
|
|
|
|