নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নজিরবিহীন। তাঁদের ক্লাব তৈরি হয়েছিল গত বছর ১৫ জানুয়ারি। মাত্র পনেরো মাসে একটা ক্লাবকে আই লিগে তুলে দিলেন ভাইচুং ভুটিয়া। আবার আই লিগে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল-ডেম্পোর সঙ্গে তাঁকে খেলতে দেখা যাবে।
উৎসবমুখর গ্যাংটকে মহমেডানের সঙ্গে বিতর্কিত ১-১ করে লক্ষ্যে পৌঁছনোর পরে ইউনাইটেড সিকিমের মালিক কাম ফুটবলার ভাইচুংয়ের উপলব্ধি, “কাজটা সহজ ছিল না। চ্যালেঞ্জটায় সফল হয়ে ভাল লাগছে। রিল্যাক্সড লাগছে।” শিলচর, শিলিগুড়ি, গ্যাংটক ঘুরে নানা পরিবেশে খেলতে হয়েছে। ম্যাচের ফাঁকে ঘুরে যেতে হয়েছে মুম্বই, দিল্লি, কলকাতা, শিলিগুড়ি। ক’দিন আগে মাথা ফেটেছিল খেলতে গিয়ে। সেলাই পড়ে চারটি। ভাইচুংয়ের তৃপ্তি স্বাভাবিক।
সোমবার ভাইচুংদের সাফল্য দেখতে উপচে পড়েছিল গ্যাংটকের পালজোর স্টেডিয়াম। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেক মন্ত্রীই হাজির ছিলেন। প্রচুর স্কুলছাত্র আসে ভুভুজেলা হাতে। সরকারি কর্মীরা টিকিট দেখালেই খেলা দেখার ছুটি পেয়েছেন। যা দেখে অভিভূত ভাইচুং, “যে ভাবে সিকিম সরকার সাহায্য করেছে, সেই জন্য কৃতজ্ঞ।” সিকিম সরকার এতটাই উদ্দীপ্ত, দলের সাফল্যে গ্যাংটক জুড়ে র্যালি করার কথা ভাবছে তারা। ফুটবলারদের নিয়ে। সারা রাত ধরে উৎসব হয়েছে গ্যাংটকে।
ভারতীয় ফুটবলে এক ফুটবলারের হাত ধরে ক্লাবের আই লিগে উত্তরণের উদাহরণ নেই। পরের লক্ষ্য? ভাইচুং জবাব, “বাস্তবে চোখ রাখতে হবে। পরের মরসুমে যে কোনও একটা সর্বভারতীয় ট্রফি চাই। আর আই লিগে প্রথম তিনে থাকা লক্ষ্য থাকবে।” ভাইচুংদের সাফল্যের শরিক হতে দুবাই থেকে তাদের ক্লাবের অন্যতম অংশীদাররাও এসেছিলেন। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক যা জানালেন, তাতে তাঁদের পরবর্তী লক্ষ্য হবে ক্লাবের জমকালো পরিকাঠামো তৈরি।
ভাইচুংয়ের স্বপ্ন ছিল, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের জার্সি পরে অবসর নেওয়া। সেটা আপাতত থমকে। তিনি আই লিগে স্বাভাবিক ভাবেই নিজের ক্লাবের হয়ে খেলবেন। প্রশ্ন করলে হেসে বললেন, “এখনও ইস্টবেঙ্গলে খেলে অবসর নেওয়া সম্ভব।” ভাইচুংদের ক্লাবের ম্যানেজার অরুণাভ ভট্টাচার্য ইস্টবেঙ্গল ক্লাবেও যুক্ত। বলছিলেন, “জেতার পরে শঙ্কর মহাদেবনের সুরে ক্লাবের থিম সং শুরু উদ্বোধন হল।” অন্যদিকে, কী বলছে মহমেডান? যারা এ বারও অল্পের জন্য লক্ষ্যচ্যূত। কোচ অলোক মুখোপাধ্যায় মারাত্মক ক্ষুব্ধ রেফারিং নিয়ে। বললেন, “এত নোংরামো হল যে কী বলব। রেফারি বিক্রি হয়ে গেছিল। আমাদের দুটো নিশ্চিত পেনাল্টি দেওয়া হয়নি। ওদের গোলটা পেনাল্টিতে। যা পেনাল্টিই ছিল না। জেতা ম্যাচে হারানো হল।” ক্ষুব্ধ মহমেডান ফুটবলাররা রেফারিকে ঘিরে প্রতিবাদ জানান। খেলা দশ মিনিট প্রায় বন্ধ ছিল। অলোক বললেন, “আমাদের গৌতম কুজুর বিরতিতে ক্ষোভে ড্রেসিংরুমে লাথি মারে। ওকে পুলিশ ধরতে চলে এসেছিল।”
মহমেডানের সর্বময় কর্তা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুলতান আমেদের সচিব খেলাটা রেকর্ডিং করেছেন। সহকারী কোচ নাসির আমেদ বললেন, “সুলতানদা বিরতিতে ফোনে জানতে চাইছিলেন, টিম তুলে নেওয়া ঠিক হবে কি না। প্লেয়াররা তেতে ছিল। ওরা খেলতে চাইল।”
এ সব অভিযোগ অর্থহীন। গ্যাংটক ও সিকিম এখন উৎসবে ভাসছে। |