ড্রেসিংরুমে টাঙানো চল্লিশ ইঞ্চির এলইডি টিভিতে ভাসছে ডেল স্টেইনের মুখ। বোলিং রান আপে যাচ্ছেন। আর তখনই ওয়াসিম আক্রমের মুখ থেকে বেরোল, “নাউ, ইটস মাইন্ড গেম!”
সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ মোহালির পিসিএ স্টেডিয়ামে নাইটদের ড্রেসিংরুম। কাঁচের ভিতর দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সবাইকে। কালিস, ব্রেট লি, বালাজি, দুশখাতে, মনোজ। যে যার সিটে চুপ করে বসে, চোখ টিভিতে। ফিল্ডিং প্র্যাক্টিসের আগে অল্প জিরোনোর ফাঁকে ম্যাচের শেষটা একটু দেখে নেওয়া। তার পরেই স্টেইনের দুর্দশা এবং রয়্যালসের বিজয়োৎসব। ফের মাঠে ফেরার মুখে ব্রেট লি-কে দেখলাম বালাজির কাঁধে হাত রেখে বলছেন, “স্ট্রেঞ্জ, ভেরি স্ট্রেঞ্জ!”
কোনটা আশ্চর্যের? রয়্যাল্স বনাম চার্জার্স ম্যাচে স্টেইনের শেষ ওভার, নাকি বিভ্রান্তিতে ভরপুর নাইটদের অন্দরমহল? মরণবাঁচন ম্যাচ নয়, এখনও আইপিএলে বহু নাটক বাকি। সবে তো কলির সন্ধে! তাতেই প্রীতি জিন্টার কিংস-এর দরবারে বাইশ গজ দেখে গম্ভীরের মুখটা হয়েছে ‘রামগরুড়ের ছানা’র মতো। পুণে-পঞ্জাব ম্যাচে মাসকারেনহাস কী ভাবে ছোট ছোট সুইংয়ে সৌরভের টিমকে ভুগিয়েছিলেন, তার ইতিবৃত্তান্ত খুঁটিয়ে খুটিয়ে জেনেছেন কিউরেটর দলজিৎ সিংহের কাছে। ইডেনের মতো রাখঢাক-গুড়গুড় নেই, দলজিৎ নিজে সামনে থেকে দেখালেন বাইশ গজকে। এ তো মাঠের সবুজের সঙ্গে আলাদা করা যাচ্ছে না? উত্তরে দলজিতের মুখে হাসি, “উইকেট বুঝলেন, মেয়েদের মনের মতো। কখন যে কী আচরণ করবে, কেউ জানে না। আগের দিন পুণে ম্যাচে নাকি সিমিং উইকেট হয়েছিল। তাই এ বার বদলে দিয়েছি।” কীরকম বদল? দলজিতের মুখে শুনুন, “ঘাস দেখে ভুল বুঝবেন না। প্রচুর রান উঠবে। এখানে উইকেট টাক মাথা করলে বল প্রচুর ঘুরবে। মাটিটাই এমন।” |
দলজিতের হাত-যশে কাল রাতে ১৭০-১৮০-র উইকেট বেরোক না বেরোক, আইপিএলের পরীক্ষায় এই পেপারে সিলেবাস যাই হোক, নাইটদের জন্য একেবারেই সহজ প্রশ্নপত্র অপেক্ষা করে নেই। ‘কমন’ আসবে না, ধরেই নেওয়া যায়। ইডেন থেকে অ্যাওয়ে ম্যাচ জিতে ফেরার পরেই হোম ম্যাচ জেতার জন্য গিলক্রিস্টের দাওয়াই হল, সবুজ উইকেটে ফেলে দাও নাইটদের। দুটো পয়েন্ট তুলতে তাঁর ঘোড়া এ বার আর পীযূষ চাওলা বা ভার্গব ভাট নন। ভরসা থাকছে প্রবীণকুমার-মাসকারনেহাস-হরমীত সিংহে।
শেষ চারে যাওয়ার আবেদনপত্র মঞ্জুরের জন্য এসপার-ওসপার যুদ্ধের পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি আইপিএল ফাইভে। এখনও একে অপরকে মেপে নেওয়ার পালা চলছে। তাতেই নাইটদের অবস্থা ‘কেঁদে ককিয়ে একশা রে!’ জোড়া জয়ের পরে হঠাৎ হোঁচট খাওয়া ঘোড়াকে দাঁড় করাতে হলে বুধবার রাতে আগে লাগবে ব্যাটিং। একটা অজিঙ্ক রাহানে বা ওয়েইস শাহ বা স্টিভ স্মিথ-সুলভ ইনিংস। যেটার জন্য নাইটরা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে ছিল এত দিন ইউসুফ পাঠানের দিকে। প্রতিপক্ষের যম হয়ে মারণমূর্তি ধরা দূরের কথা, পাঁচটা ম্যাচে কালেভদ্রে বিদ্যুত ঝলকানিও জোটেনি তাঁর ব্যাট থেকে। স্ট্রোকের কালবৈশাখী হয়ে উঠে নিয়মিত বিরোধী শিবিরে যে কম্যান্ডো হানাটা পুণের স্টিভ স্মিথ বা রাজস্থানের ব্র্যাড হজ দিচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত নাইট শিবিরে তা বিরল প্রজাতি। তাই ওজনদার ভারী ভারী নাম হাতে থেকেও কোচ ট্রেভর বেলিসকে বলতে হচ্ছে, “মিডল অর্ডার ক্লিক করছে না। প্রত্যেকে ম্যাচ উইনার। কিন্তু ঠিক সময়ে ঠিক কাজটা হচ্ছে না।”
কোচের প্রেসক্রিপশন বলছে, কাল ব্রেট লি ফিরছেন টিমে। মোহালির উইকেটে তাঁকে না খেলানোটা বোকামি হবে। কিন্তু বসবেন কে? মুখে মুখে ঘুরছে দুশখাতের নাম। ইডেনে ১৯ নম্বর ওভারে স্ট্রাইক রোটেট করতে না পেরে তিনিই খলনায়ক। পাঁচ উইকেট পাওয়া নারিন বা তার আগের ম্যাচে সাকিবের পারফরম্যান্সের পরে বসার প্রশ্ন নেই। ম্যাকালামও ফিরছেন না, কারণ গম্ভীরের খাতায় এখনও আগে পরিশ্রমী বিসলা।
কাল হারলে ছয় ম্যাচে চার হার হবে। আগের পরীক্ষাগুলোয় প্রত্যাশা মতো নম্বর না পাওয়ার কারণ হিসেবে ‘সিলি মিসটেক’-কে চালিয়ে দেওয়া গিয়েছে। কিন্তু যত সময় যাচ্ছে, প্রতিবারের মতোই নাইটদের গল্পটা সেই “কী পাইনি তার হিসাব মিলাতে...:”-এর দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে। খাদের প্রান্তে এখনও যায়নি, আরও গড়ানো থামিয়ে জয়ের সড়কে উঠতে গেলে একটাই স্লোগান কাজে দিতে পারে। প্রয়াত সঞ্জয় গাঁধী যেমন বলেছিলেন।
‘কথা কম, কাজ বেশি।’ |