|
|
|
|
চাঞ্চল্য শহরে |
‘মাওবাদী-ঘনিষ্ঠে’র খোঁজে হঠাৎ তল্লাশি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
সোমবার সন্ধে। আচমকা হুড়মুড়িয়ে পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি ঢুকে পড়ল মেদিনীপুর শহরের নন্দীপুকুরপাড় এলাকায়। কী ব্যাপার, বোঝার আগেই গাড়ি থেকে চকিতে নেমে আশপাশে তল্লাশি শুরু করলেন সিআইএফ জওয়ানরা। অচিরেই চাঞ্চল্য ছড়াল এলাকায়। তবে এ চাঞ্চল্যে শোরগোল পড়ল না। পুলিশ, তায় আবার জঙ্গি মোকাবিলায় বিশেষ প্রশিক্ষিত কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্সের (সিআইএফ) আচমকা হানায় বেশ খানিকটা ঘাবড়েই গিয়েছিলেন এলাকাবাসী। তবে কী হয়, কী হয় সে নিয়ে উৎসুক ছিলেন সকলেই।
মেদিনীপুর শহরের বক্সিবাজার, নন্দীপুকুরপাড় বা তার আশপাশের এলাকা যথেষ্টই জনবহুল। এখানে সে-ভাবে কখনও কোনও বড় গোলমালের ঘটনাও ঘটেনি। চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও কম। তা হলে কেন এত পুলিশ? থানার পরিচিত পুলিশকর্মী বা অফিসারকেও জিগ্যেস করার উপায় নেই। সবার মুখেই কুলুপ। তা-ও আবার তল্লাশিতে স্থানীয় পুলিশ নয়, সিআইএফ। রাত দশটা নাগাদ শেষ হল তল্লাশি। গাড়িতে চেপে কোতোয়ালি থানায় ফিরলেন পুলিশ আধিকারিক ও জওয়ানরা। তল্লাশিদলের দাবি, ৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে ঘণ্টা কয়েকের তল্লাশিতে! এত আয়োজন, শেষে মাত্র ৩ রাউন্ড গুলি? পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরি অবশ্য জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই ওখানে তল্লাশি চালানো হয়েছিল।
পুলিশ সুপার বিস্তারিত কিছু না বললেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এক ‘মাওবাদী-ঘনিষ্ঠে’র খোঁজেই ওই এলাকায় বিশেষ তল্লাশি-অভিযানে গিয়েছিল সিআইএফ। মাওবাদী মোকাবিলার জন্যই এই বিশেষ বাহিনী তৈরি হয়েছে। সঙ্গে পুলিশকর্মীরাও অবশ্য ছিলেন। সকাল থেকেই ওই এলাকায় কয়েক বার টহল দেওয়া হয়েছিল বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। সন্ধে হতেই সিআইএফের তল্লাশি শুরু হয়। এমনকী এলাকায় পৌঁছে যান সিআইএফের এএসপি বরুণ চন্দ্রশেখর, ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) রূপান্তর সেনগুপ্তের মতো উচ্চপদস্থ অফিসারারও। একটি বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালানো হয়। ওই এলাকা থেকেই ৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়ে বলে পুলিশের দাবি। পুলিশের বক্তব্য, ওই এলাকার একটি রাস্তায় ওই গুলি পড়েছিল। তল্লাশি চালানোর সময়ে তা নজরে আসে।
ঠিক কী খবর ছিল পুলিশের কাছে?
পুলিশেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এক ‘মাওবাদী-ঘনিষ্ঠ’ যুবক ওই এলাকায় রয়েছেন বলে খবর পৌঁছয়। গত ছ’মাস ধরেই ওই যুবকের উপরে নজর রাখার চেষ্টা করছে পুলিশ। গোয়েন্দা দফতরও তাঁর সম্পর্কে কিছু তথ্য পুলিশকে জানিয়েছে। ওই যুবক জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের কাছে মোবাইল হ্যান্ডসেট ও সিম-কার্ড পৌঁছে দিতেন বলে ওই সূত্রের দাবি। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, মেদিনীপুর শহরের বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে পরিচয়ের প্রমাণপত্র ছাড়াই সিম-কার্ড বিক্রি হয়। ওই যুবকও কাগজপত্র ছাড়াই সিম-কার্ড কিনে তা ‘মাওবাদী’দের কাছে পৌঁছে দেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে খবর, আত্মসমর্পণকারী এক ‘মাওবাদী’র কাছ থেকেই জানা গিয়েছে, কী-ভাবে পরিচয়ের কাগজপত্র ছাড়াই মোবাইল ফোন ও সিম-কার্ড জঙ্গলমহলে পৌঁছতো। কারাই বা এ-সব পৌঁছে দিতেন। ওই সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে আত্মসমর্পণ করা ওই ‘মাওবাদী’ যুবকের বাড়ি শালবনি থানা এলাকায়। আগে পুলিশি সন্ত্রাস-বিরোধী জনগণের কমিটি-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে মাওবাদী-দলে যোগ দেন। অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে আকাশ-বিকাশের মতো নেতাদের সঙ্গেও থেকেছেন। এক সময়ে কিষেণজিরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। ওই যুবকই মাওবাদীদের সঙ্গে শহরের লোকজনের ‘সংযোগ’ নিয়ে বেশ কিছু তথ্য দেন বলে পুলিশের দাবি। সেই সূত্রেই আসে মোবাইল, সিম-কার্ড জোগানোর প্রসঙ্গ। জোগানদার সেই ‘মাওবাদী-ঘনিষ্ঠে’রই সন্ধান করছে পুলিশ। সেই সন্ধানেই সোমবার সন্ধ্যার অতর্কিত অভিযান। |
|
|
|
|
|