|
|
|
|
সুদ কমলেও আশঙ্কা ঘাটতি বৃদ্ধির |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
সাধারণের চাহিদা মেনে মঙ্গলবারের ঋণনীতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর রাস্তায় হাঁটায় খুশি শিল্প ও ব্যাঙ্কিং মহল। তবে, রাজকোষ ঘাটতি এবং মূল্যবৃদ্ধি বাড়ার জেরে কত দিন সুদ কমিয়ে রাখা যাবে, তা নিয়ে আশঙ্কার ছায়া দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্য দিকে তহবিল সংগ্রহের খরচ কমাতে ব্যাঙ্ক জমায় সুদ কমার সম্ভাবনায় কিছুটা হতাশ সুদ-নির্ভর মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তে নগদের জোগান বাড়বে। তবে রাজকোষ ঘাটতি মোট জাতীয় আয়ের ৫.১ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কই চিন্তিত। ঘাটতি বাড়লে কেন্দ্রীয় সরকারকে বাড়তি ঋণর নিতে হবে। যার জেরে ফের চাপ পড়বে নগদের জোগানে, কমতে পারে শিল্প ঋণও। পরিণতি ফের সুদের হার বাড়া। উপরন্তু রয়েছে মূল্যবৃদ্ধির চাপ, বিশেষ করে খাদ্য সামগ্রীর চড়া হারে দাম বাড়ার প্রবণতা। মূল্যবৃদ্ধি বাগে আনতে গেলেও বাড়বে সেই সুদের হার। ফলে স্বল্প মেয়াদে গৃহঋণ, গাড়িঋণ ইত্যাদিতে সুদ কমায় এবং শিল্প ঋণের খরচ কমায় অর্থনীতিতে আপাত খুশির ছোঁয়া লাগলেও দীর্ঘ মেয়াদে কী ঘটবে, তা নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের আশঙ্কা, তখন হয়তো আবারও সুদের বদলে নগদ জমার অনুপাত কমিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে শীর্ষ ব্যাঙ্ককে।
তবে গৃহঋণে সুদ কমার আশায় সেই আপাত খুশির জোয়ারেই সামিল আবাসন শিল্প। কারণ এর জেরেই বাড়তে পারে ক্রেতার সংখ্যা। সেই ভরসায় বাজার তুঙ্গে ওঠার আশায় নির্মাণ শিল্প। নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাইয়ের প্রেসিডেন্ট ললিত জৈন বলেন, “আশা করছি আরও বেশি লগ্নি হবে আবাসন শিল্পে।” সুদ কমাকে স্বাগত জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ সংস্থা কুশম্যান অ্যান্ড ওয়েকফিল্ড ইন্ডিয়া। সংস্থার এমডি অনুরাগ মাথুর বলেন, “গত এক বছরে অধিকাংশ ক্রেতা বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেননি। তাঁরা এই ছাড়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।”
গাড়ি ঋণেও সুদ কমবে বলে আশা এই শিল্পের। মারুতি-সুজুকি কর্তা শশাঙ্ক শ্রীবাস্তব, জেনারেল মোটরস কর্তা পি বলেন্দ্রন, হোন্ডা সিয়েল কারের জ্ঞানেশ্বর সেন সকলেরই বক্তব্য, এর ফলে গাড়ি শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানো সহজতর হবে। গাড়ি শিল্পের হিসেবে, সাধারণ ভাবে পাঁচ বছরে প্রতি এক লক্ষ টাকা ঋণে সুদের হার এক শতাংশ কমলে ক্রেতার মাসিক কিস্তি কমতে পারে প্রায় ৫০ টাকা। সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানু -ফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (সিয়াম)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় বছরে গাড়িঋণে ব্যাঙ্কসুদ বেড়েছে ২%।
তবে সুদ কতটা কমবে, তা স্থির করার দায়িত্ব বর্তাবে যথারীতি ব্যাঙ্কশিল্পের উপর। শীর্ষ ব্যাঙ্ক কম সুদের জমানা কত দিন ধরে রাখতে পারবে, তা নিয়ে কিছুটা দ্বিমত এই শিল্পের বিশেষজ্ঞরা। ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের সিএমডি দেবব্রত সরকার বলেছেন, “রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্ত শিল্পের মনোবল বাড়াতেও সাহায্য করবে। ব্যাঙ্কের অ্যাসেট-লায়াবিলিটি কমিটি সুদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তা ছাড়া আর্থিক বৃদ্ধির হার ভাল হলে মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা চড়া থাকলেও চিন্তার কারণ নেই।” মার্জিনাল স্ট্যান্ডিং ফেসিলিটি, অর্থাৎ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক কম সুদে কতটা ঋণ পেতে পারে, তার সীমা ১% থেকে বেড়ে হয়েছে ২%। এর ফলেও উপকৃত হবে ব্যাঙ্কগুলি। ইউকো ব্যাঙ্কের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর এস চন্দ্রশেখরন অবশ্য রেপো রেট এতটা কমায় বিস্মিত। তবে তিনি বলেছেন, নগদের জোগান বাড়বে। পাশাপাশি আমানতেও সুদ কমবে।
ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ এবং ইউবিআইয়ের প্রাক্তন জিএম দেবজীবন বসু বলেন, “এর আগে শীর্ষ ব্যাঙ্ক সিআরআর কমানোর জেরে নগদের জোগান বাড়লেও তার সদ্ব্যবহার হচ্ছিল না। কারণ, চড়া সুদে অনেকেই ঋণ নিতে পারছিলেন না। অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে যদি আর্থিক বৃদ্ধির হার ভাল হয়, তা হলে ফের সুদ কমানোর পথেই হাঁটতে পারে আরবিআই।
আর এক ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ এবং ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত অবশ্য বলেন, “এখনও কোনও আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা ভারতের ‘রেটিং’ করেনি। রেটিং কমলে কিন্তু কম সুদে ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে না।” তাঁর মতে, সুদ কমানোয় অনেকটাই রাজনৈতিক চাপ কাজ করেছে। কারণ অর্থনীতির পরিস্থিতি এই মুহূর্তে সুদ কমানোর উপযুক্ত ছিল না। এর মূলে রয়েছে রাজকোষ ঘাটতি বাড়ার আশঙ্কা ও খাদ্যপণ্যের চড়া দাম। |
ঋণনীতি একনজরে |
• রেপো রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমে ৮%
• রিভার্স রেপো ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমে ৭%
• ব্যাঙ্ক রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমে ৯%
• সিআরআর ৪.৭৫ শতাংশে অপরিবর্তিত
• আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭.৩ শতাংশে
• অর্থবর্ষ শেষে মূল্যবৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশে |
|
|
|
|
|
|