গাড়ি আর গৃহঋণে স্বস্তি শীঘ্রই
সুদ কমানোর রাস্তা খুলল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক
শিল্পমহল তো বটেই সাধারণ মানুষেরও একটা বড় অংশ চাইছিলেন ঋণের ফাঁসটা একটু আলগা হোক। আর সেই চাহিদা মেনেই অবশেষে এমন কয়েকটি পদক্ষেপ করল দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক, যার ফলে সুদের হার কমানোর রাস্তা প্রশস্ত হয়ে গেল। ২০০৯ সালের এপ্রিলের পর গত তিন বছরে এই প্রথম এমন পদক্ষেপ করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
শীর্ষ ব্যাঙ্কের ঘোষণার ঠিক পরেই গৃহ ঋণ, গাড়ি ঋণ-সহ বিভিন্ন ঋণে সুদ কমানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। সম্ভবত একই পথে হাঁটতে চলেছে অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কই। ফলে যাঁরা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি বা গাড়ি কেনার কথা ভাবছেন (কিংবা আগেই ঋণ নিয়ে তা শোধ করছেন), আগামী দিনে অন্তত কিছুটা কমতে পারে তাঁদের মাসিক কিস্তির অঙ্ক। শিল্প ঋণেও সুদ কমলে কিছুটা স্বস্তির শ্বাস ফেলতে পারবে শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি। কারণ, সে ক্ষেত্রে তাদের মূলধন জোগাড়ের খরচ কমবে। যার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে লাগাতার সওয়াল করে এসেছে তারা। তবে ঋণে সুদের সঙ্গেই কমবে ব্যাঙ্ক-সঞ্চয়ের উপর প্রাপ্য সুদের হারও।
সঞ্চয়ে সুদ কমলেও শীর্ষ ব্যাঙ্কের দু’টি ঘোষণায় খুশি হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ দেখছেন অনেকেই। এক, এখন থেকে সেভিংস অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম টাকা (মিনিমাম ব্যালান্স) রাখার বাধ্যবাধকতা তুলে নিতে ব্যাঙ্কগুলিকে পরামর্শ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আর দুই, পরিবর্তনশীল সুদের ক্ষেত্রে মেয়াদ পূর্তির আগেই গৃহ ঋণের টাকা শোধ দিলেও গ্রাহকদের থেকে জরিমানা আদায় করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে তারা।
ঋণনীতি ঘোষণা করছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বা রাও। ছবি: পিটিআই।
বাজারে সুদের হার যে বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে, তার মধ্যে অন্যতম হল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রেপো রেট। মঙ্গলবার বার্ষিক ঋণনীতি পর্যালোচনায় এই রেপো রেট (স্বল্পকালীন মেয়াদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে সুদে ঋণ দেয়) ৮.৫ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ফলে রিভার্স রেপো রেটও (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে সুদে ঋণ নেয়) ৭.৫ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৭ শতাংশ। কমেছে ব্যাঙ্কগুলিকে দীর্ঘ মেয়াদে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া ঋণে সুদের হারও (ব্যাঙ্ক রেট)। ৯.৫ শতাংশ থেকে এ দিন তা ৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। আর এর দৌলতেই সুদের হার কমানোর কথা ভাবছে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি। তবে ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ব্যাঙ্কগুলির নগদ জমার অনুপাত) অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে ৪.৭৫ শতাংশেই।
মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে ২০১০-এর মার্চ থেকে ২০১১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৯ মাসে টানা ১৩ বার সুদের হার বাড়িয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ফলে এক দিকে বাজারে নগদের জোগান কমেছে। আর অন্য দিকে ঋণে সুদ বাড়ার ফলে শিল্প সংস্থাগুলির মূলধন সংগ্রহের খরচ বেড়েছে চড়চড়িয়ে। ফলে ভাটা পড়েছে নতুন শিল্প স্থাপন কিংবা পুরনো প্রকল্প সম্প্রসারণের উদ্যোগে। বসে গিয়েছে শিল্পের রথের চাকা। শ্লথ হয়েছে আর্থিক বৃদ্ধির গতিও। আর এই কারণেই দীর্ঘ দিন ধরে সুদ কমানোর পক্ষে সওয়াল করছে শিল্পমহল।
পরিস্থিতি সামাল দিতে চলতি বছরে পর পর দু’বার নগদ জমার অনুপাত কমিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যার ফলে ব্যাঙ্কগুলির হাতে এসেছিল নগদ ৪০ হাজার কোটি টাকা। তাতে বাজারে নগদের জোগানে কিছুটা সুরাহা হলেও চড়া সুদের হারের কোনও পরিবর্তন হয়নি। ফলে সেই অর্থে এ বারই শিল্প মহলের চাহিদা মেনে সুদ কমানোর রাস্তায় হাঁটল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এবং তা-ও কিছুটা চমকে দিয়েই। কারণ, শেয়ার বাজার থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ পর্যন্ত অধিকাংশেরই ধারণা ছিল, এ বার রেপো রেট বড় জোর ৮.২৫ শতাংশে নামিয়ে আনবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু সেখানে এক লাফে তা নেমে এসেছে ৮ শতাংশে। যাকে স্বাগত জানিয়ে এ দিনই প্রায় ২০৭ পয়েন্ট উঠেছে সেনসেক্স।
এক ঝলকে
সুদ কমবে বাড়ি, গাড়ি ও অন্য ঋণে
গৃহঋণ আগাম শোধে থাকছে না জরিমানা
সেভিংসে উঠতে পারে ন্যূনতম জমা
সুদ কমবে ব্যাঙ্ক সঞ্চয়ে
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই সুদ কমানোর সিদ্ধান্তকে প্রত্যাশিত ভাবেই স্বাগত জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “এই পদক্ষেপ শিল্পপতিদের লগ্নি করতে উৎসাহিত করবে। দেশের আর্থিক বৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত করতে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরও কিছু পদক্ষেপ করব।” একই মতের শরিক যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়াও। আর সুদ হ্রাসের ইঙ্গিত দিয়ে স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরীর ঘোষণা, “এর আগে নগদ জমার অনুপাত কমানো হয়েছিল ঠিকই। তবে আমরা এপ্রিলের ঋণনীতির দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। এ বার সুদ কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে।”
এ দিন ঋণনীতি পর্যালোচনায় দেশে দ্রুত বাড়তে থাকা স্বর্ণ ঋণের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশেষ কমিটি গঠনের কথাও ঘোষণা করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ডেপুটি গভর্নর বলেন, “বেশ কিছু এনবিএফসি (ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক সংস্থা) শুধু সোনার গয়না বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়ার ব্যবসা করে। ওই ঋণের অঙ্ক দ্রুত বাড়ছে। তা নিয়ন্ত্রণে আনতে কী কী করা যায়, তা দেখতে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.