আসছে পুরভোট। ফিরছে রাজনীতির লড়াই। কিন্তু কেমন আছে দুর্গাপুর?
ওয়ার্ডে ঘুরে-ঘুরে খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। আজ ওয়ার্ড ৩ ও ৪। |
কয়েক পা অন্তর আইনস্টাইন, আর্যভট্ট, উইলিয়ম কেরির ছড়াছড়ি।
হাঁটতে গিয়ে অবশ্য হোঁচট খেতে হয়। নাকে আসে নর্দমা ওপচানো দুর্গন্ধ। আর্যভট্ট বস্তি থেকে উড়ে আসে অভিশম্পাত, উইলিয়াম কেরি রোড বস্তি থেকে হতাশা, ‘আমাদের কথা আর কে ভাবে।’
সত্যিই তো! অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে গেল। দুর্গাপুর ইস্পাত নগরী গড়ে ওঠার সময়ে ‘বাবু’দের কাজে লাগার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে এসে জড়ো হয়েছিলেন ওঁরা। কেউ কাগজ ফেরি করেন, কেউ অটো চালান, কেউ বাসন মেজে ফেরেন কোয়ার্টারে। বিধানচন্দ্র রায় থেকে জ্যোতি বসু হয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী থেকেছে ডিএসপি। ওঁরা থেকে গিয়েছেন দুর্গাপুরের নীচের তলাতেই। |
দুর্গাপুর পুরসভার ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের অনেকটা অংশই বস্তি এলাকা। শহরের অন্যতম বড় বস্তি আইনস্টাইন-জেসি বসু রোড বস্তি রয়েছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। এ ছাড়াও রয়েছে এসএন রোড বস্তি, উইলিয়ম কেরি রোড বস্তি, আর্যভট্ট বস্তি। বাসিন্দারা জানান, প্রধান সমস্যা পানীয় জলের অপ্রতুলতা। এ ছাড়া অনেক জায়গায় কংক্রিটের রাস্তা গড়া হলেও উইলিয়ম কেরি বস্তিতে রয়ে গিয়েছে পুরনো ইট বিছানো এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা। এই বস্তিতে একটি কমিউনিটি শৌচাগার গড়েছে পুরসভা। এলাকার বাসিন্দা মিঠু দত্তের অভিযোগ, সেটির অবস্থান বস্তির মাঝামাঝি না হওয়ায় সকলে ব্যবহার করতে পারেন না। পুরসভা পাকা নর্দমা তৈরি করে দিলেও পরিষ্কার করে না। স্থানীয় বাসিন্দা অশোক বাউড়ি বলেন, “মাঝে মাঝে আমরাই শৌচাগার ও নর্দমা পরিষ্কার করি।”
আরও অভিযোগ, বিধবা ও বার্ধক্য ভাতা মেলে না। বিপিএল তালিকায় প্রকৃত দুঃস্থদের ঠাঁই হয়নি। বেলতলা কালিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা অর্ণব পাল, আইনস্টাইন ১৪ নম্বরের বাসিন্দা দীপায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়দের খেদ, “কাউন্সিলর এলাকাতেই আসেন না। বাড়ি গিয়েও তাঁর দেখা মেলে না। এ সব অভিযোগ জানাবো কোথায়?” সিপিএম কাউন্সিলর, ডিএসপি-র কর্মী সঞ্জীব সাহা অবশ্য অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “নিকাশির উন্নতি হয়েছে। কোথাও ইট, কোথাও কংক্রিটের রাস্তা তৈরি হয়েছে। কমিউনিটি শৌচাগার কয়েকটি হয়েছে। তবে আরও কয়েকটি গড়া প্রয়োজন।”
পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে টানা দেড় দশক ধরে জিতে আসছেন মেয়র রথীন রায়। তাই সেখানে মানুষের প্রত্যাশা একটু বেশিই। তবে বাসিন্দাদের অভিযোগ, আশা বিশেষ পূরণ হয়নি। এই ওয়ার্ডে রয়েছে নেপালিপাড়া, রাজমল্ল পাড়া, ডিসপোজাল বস্তি, ইস্পাত পল্লি, নতুন পল্লি, জয়দেব বস্তি, ভারতী কালীবাড়ি বস্তি, দেশবন্ধু বস্তি, দলুই পাড়া বস্তি। ভারতী কালীবাড়ি বস্তিতে দিন কয়েক আগে একটি রাস্তা তৈরি হয়েছে। বস্তির বাসিন্দা মৈনুদ্দিন শেখ, অটোচালক কিরীটি গোস্বামীদের ক্ষোভ, “মোরাম রাস্তা তৈরির কথা বলে ঠিকাদার বোল্ডার ও মাটি দিয়ে রাস্তা গড়ে চলে গেল। এখন তা চলার অযোগ্য। বৃষ্টি হলে আর বাড়ি থেকে বেরোনো যাবে না।” শেখর গড়াই, গৃহবধূ রেখা দত্তরা জানান, সংস্কার না হওয়ায় কুয়োর জল খাওয়া যায় না। জল আনতে হয় এক কিলোমিটার দূর থেকে। বাসিন্দারা জানান, সম্প্রতি এলাকায় একটি পাকা নর্দমা তৈরির কাজ শুরু হয়। কিন্তু নির্মাণের পরেই অনেকটা ভেঙে যায়। এর পরে বাসিন্দারাই ঠিকাদারকে বাকি কাজ করতে দেননি। |
তৃণমূলের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি সোমা সরকার অভিযোগ করেন, বাউড়ি পাড়ায় এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। ভারতী বস্তিতে একটি পুকুর কেটে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে পাড় ঘেরা হয়েছিল। কিন্তু তার বেশ কিছু অংশ ভেঙে পড়েছে। তাই পুকুরের এক দিকের পাড়ের বিপজ্জনক দশা।
মেয়র রথীনবাবুর অবশ্য জানান, শুধু নিজের ওয়ার্ড নয়, তিনি বরাবর শহরের সার্বিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছেন। এলাকার মানুষের চাহিদা অনুযায়ী শহরে পরপর নানা প্রকল্প রূপায়ণ করা হয়েছে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডেও উন্নয়নের কাজ হয়েছে। কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি হতে পারে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে শহরের সব এলাকারই উন্নয়ন হয়েছে। তাঁর কথায়, “উন্নয়ন এক নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। শহরের জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে মানুষের চাহিদাও। সেই মতো পরিকল্পনা করেই এগোচ্ছে পুরসভা।”
আইনস্টাইন কে, কে-ই বা আর্যভট্ট। প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলে উত্তর পাওয়া যায় না। মেলে শুধু ফ্যালফ্যালে দৃষ্টি। পরিবর্তনের জমানাতেও ওঁরা অবস্থা কিন্তু সেই অপরিবর্তিত।
|
নজরে নগর |
ওয়ার্ড ৩ |
ওয়ার্ড ৪ |
আমি যা কাজ করেছি, তাতে আমি অন্তত নিজে সন্তুষ্ট।
সঞ্জীব সাহা
সিপিএম কাউন্সিলর |
আমার ওয়ার্ডে শুধু নয়, সারা শহরেই চাহিদা অনুযায়ী কাজ হয়েছে।
রথীন রায়
দুর্গাপুরের মেয়র |
• জলাধার হলেও জল পৌঁছয়নি সব বাড়িতে
• স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও মেলে না পরিষেবা
• নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই ও নর্দমা পরিষ্কার হয় না
|
• প্রত্যন্ত এলাকা, যোগাযোগ মন্দ
• স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেও নেই, ভরসা ১৫ কিলোমিটার দূরের মহকুমা হাসপাতাল
• নর্দমা সাফাই হয় কয়েক মাস অন্তর |
বিপদে পাশে থাকবেন, এমনই কাউন্সিলর চাই।
পবিত্র মুখোপাধ্যায়
তৃণমূল ব্লক সাধারণ সম্পাদক |
এলাকার কাউন্সিলর হিসেবে উনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
সোমা সরকার
ওয়ার্ড তৃণমূল সভাপতি |
|