|
|
|
|
আর্থিক তদন্ত এসজিডিএ-তে |
ঠিকাদারদের বাড়তি টাকা পাওয়ানোর অভিযোগ |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
‘শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’র (এসজেডিএ) একাধিক ঠিকাদারকে মাটি ফেলার বরাত বাবদ অন্তত দেড় কোটি টাকা বাড়তি ‘পাইয়ে দেওয়ার’ অভিযোগ উঠেছে। সরকারি সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকার রাজ্যে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে বিশেষ আর্থিক তদন্তে ওই অভিযোগের সপক্ষে কিছু তথ্য মিলেছে। এসজেডিএ-এর পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের মদত ছাড়া ঠিকাদারেরা ওই ‘বাড়তি’ টাকা তোলার সাহস পেতেন কি না, তা নিয়ে সরকারি মহলেরই একাংশে প্রশ্ন উঠেছে।
এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেছেন, “এখনও পর্যন্ত বিশেষ তদন্তে দেখা গিয়েছে, মাটি ফেলা বাবদ ঠিকাদারদের প্রায় দেড় কোটি টাকা বাড়তি দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি উদ্বেগজনক। সরকারি টাকার অপচয় কখনও বরদাস্ত করা যায় না। ওই সব কাজে সংশ্লিষ্ট সকলের ভূমিকা খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিককে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলেছি। অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” যে সময়ে (২০০৬ থেকে ২০১১-র মার্চের মধ্যে) ওই টাকা ঠিকাদারদের পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তখন এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান ছিলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “মাটি ফেলা বাবদ প্রচুর টাকার কাজ হয়েছিল, সেটা মনে আছে। তা বলে ঠিকাদারদের বাড়তি টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে আগে শুনিনি। আমাদের আমলে কেউ অভিযোগও করেননি। অভিযোগ করলে আমিও তদন্ত করাতাম।”
এসজেডিএ-এর সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অরবিন্দ ঘোষ বলেন, “আমাদের কাছে ওই বাড়তি টাকা দেওয়ার প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের তরফে জানতে চাওয়া হয়ছিল। লিখিত রিপোর্ট দিয়েছি। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল বলে আমার মনে হচ্ছে।” তবে ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের বক্তব্য, ওই সব কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থা ও তদারকিতে থাকা ইঞ্জিনিয়ারদের ‘ভূমিকা’ নিয়ে তদন্ত না হলে ‘প্রকৃত সত্য’ উদ্ঘাটিত হবে না।
এসজেডিএ সূত্রের খবর, ২০০৬-১১ সালের মধ্যে অন্তত আটটি বড় প্রকল্পের নিচু জমি উঁচু করতে মাটি ফেলে ভরাটের সিদ্ধান্ত হয়। বরাদ্দ হয় ৮ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা। দরপত্র অনুযায়ী, প্রতি ঘন মিটার মাটি ফেলার জন্য ১৩ টাকা ২৫ পয়সা দর পাওয়ার কথা ঠিকাদারদের। ভরাট-পর্ব মিটলে ঠিকাদারদের টাকা দেওয়া হয় এবং তার পরে একাধিক বাৎসরিক অডিটে মাটি ফেলার কাজে গরমিল ধরা পড়েনি। কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতার ‘পরিবর্তন’-এর পরে পালা বদলায় এসজেডিএ-তেও। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব ঘোষণা করেন, বাম-আমলে এসজেডিএ-র সব কাজকর্ম খতিয়ে দেখা হবে। এর পরেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সেখানে বিশেষ আর্থিক তদন্ত করানো হয়। সরকারি সূত্রের খবর, ওই তদন্তে ধরা পড়েছে, ফুলবাড়িতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র, বিধাননগরে আনারস রফতানি অঞ্চল এবং বাগডোগরায় শাকসব্জি, ফুল সংরক্ষণের কেন্দ্রের জন্য প্রতি ঘন মিটার মাটি ফেলার খরচ বাবদ ঠিকাদারদের কোনও কোনও সময়ে ৫২ থেকে ৬৬ টাকা করে দিয়েছে এসজেডিএ।
সম্প্রতি তদন্তকারী অফিসারেরা এ ব্যাপারে লিখিত জানতে চাওয়ায় এসজেডিএ-র সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার দাবি করেন, বাড়তি টাকা ঠিকাদারদের দেওয়া হয়নি। কিন্তু সরকারি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফে যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এক আধিকারিক এসজেডিএ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন, ওই দাবি মানা যাচ্ছে না। সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অরবিন্দবাবু অবশ্য বলেন, “ওই চিঠি এখনও হাতে পাইনি। পেলে জবাব দেব।”
এসজেডিএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোকবাবুর বক্তব্য, “এখন যদি দেখা যায়, মাটি ফেলার দর বাবদ সত্যিই সরকারি টাকা অপচয় হয়েছে, তবে তা আদায়ের জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” |
|
|
|
|
|