জমি নিয়ে বিবাদের জেরে ৪ বছরের শিশুকে বিষ মেশানো বিস্কুট খাইয়ে খুনের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে ডুয়ার্সের ফালাকাটা থানা এলাকায়। প্রায় সাড়ে ৬ মাস আগে শিবাজি রায় নামে শিশুটির মৃত্যু হলে কবর দেওয়া হয়। সম্প্রতি খুনের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়। আদালতের নির্দেশে সোমবার মুজনাই নদীর পাড়ের কবরস্থান থেকে শিশুটির দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। আলিপুরদুয়ারের এসডিপিও বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, “বিষ খাইয়ে শিশুটিকে মেরে ফেলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। আদালত শিশুটির দেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে।”
পুলিশ জানায়, শিশুটিকে খুনের অভিযোগে তার মামাতো দাদা, স্থানীয় সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্যা সহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। তবে মামলা রুজু করলেও পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি। পুলিশের বক্তব্য, প্রাথমিক তদন্তের সময়ে ফালাকাটা হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে ওই শিশুটি মেনিনজাইটিসে ভুগে মারা গিয়েছে। সে জন্য আদালতের নির্দেশ মতো ময়নাতদন্তের পরে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, হরিনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা সুরেশ রায়ের এক মাত্র সন্তান শিবাজিকে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর অসুস্থ অবস্থায় ফালাকাটা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির আধ ঘণ্টার মধ্যে শিশুটি মারা যায়। ফেব্রুয়ারি শিশুটির মা মালতি দেবী আলিপুরদুয়ার মহকুমা আদালতের দ্বারস্থ হন। |
ছেলেকে বিষ মাখানো বিস্কুট খাইয়ে খুন করার অভিযোগ করেন স্থানীয় সিপিএম গ্রাম পঞ্চায়েত সহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে। কিন্তু, শিশু মৃত্যুর পরে অভিযোগ জানাতে এত দেরি হল কেন? মালতি দেবীর আত্মীয়দের কয়েকজনের অভিযোগ, থানায় গিয়ে জানালেও হাসপাতালের ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দেখে পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। মালতিদেবীদের আইনজীবী গোবিন্দ শিকদার বলেন, “রেজিস্ট্রি চিঠি করে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপারকে ঘটনার কথা জানানো হয়। পুলিশ ব্যবস্থা না নেয়নি। আলিপুরদুয়ার মহকুমা আদালতে সব জানানো হয়।” মালতি দেবী জানান, ১২ বছর আগে প্রতিবেশী মামার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে পাঁচ কাঠা জমি কিনে ঘর বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। জমির দখল দিলেও মামা জমির রেজিস্ট্রি করে দেয়নি। উল্টে মামাতো ভাইরা বাড়ি ছাড়া করার চাপ দেন বলে অভিযোগ। দু’বছর আগে মামা মারা যান। বিবাদ ক্রমশ বেড়ে চলে। জমির বিবাদ মেটাতে কয়েকবার বার পঞ্চায়েতের উদ্যোগে সালিশি সভাও হয়। কিন্তু লাভ হয়নি। মালতি দেবী বলেন, “আমাদের শাস্তি দিতে প্রতিবেশী মামাতো ভাই কমল বর্মন এক মাত্র ছেলেকে ডেকে বিষ মেশানো বিস্কুট খাওয়ায়। বিস্কুট খাওয়ার পরে ছেলের মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বার হতে থাকে। ফালাকাটা হাসপাতালে নিয়ে গেলে মারা যায়।” ওই দিন বিকালে হাসপাতাল থেকে দেহ নিয়ে যাওয়ার পরে স্থানীয় সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য স্বর্ণবালা বর্মণ সহ অনেকে বাড়িতে যান। তাঁদের পরামর্শেই সন্তানের দেহ ময়নাতদন্ত না-করে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করেন বলে মালতি দেবী দাবি করেছেন। দেওগাঁ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য স্বর্ণবালা বর্মণ মৃত শিশুর মায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে থেকে শিশুটি অসুস্থ ছিল। মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে আমি ৫০০ টাকা দিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে বলি। পরে মারা যাওয়ার খবর পেয়ে ওই বাড়িতে যাই। সেখানে কবর দেওয়া নিয়ে কোনও কথা হয়নি। কেন আমার নামে অভিযোগ করা হল বুঝতে পারছি না।” শিশুটির চিকিৎসা হয়েছিল ফালাকাটা হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসক অভিষেক নাহা বলেন, “আমার স্পষ্ট মনে আছে, দু’সপ্তাহ ধরে শিশুটি জ্বরে ভুগছিল। মেনিনজাইটিসে মারা গিয়েছে বলে পরীক্ষা করে বুঝতে পারি। বিষক্রিয়ার কোনও রকম লক্ষণ ছিল না। পরিবারের লোকজনও কিছু বলেনি। তাই ময়নাতদন্ত করানো হয়নি।” |