চার বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজ্য সরকারকে নিজেদের দুর্দশার কথা জানিয়ে আসছে পুরোহিত সম্প্রদায়। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। এত দিনে ইমামদের জন্য সরকার ভাতা ঘোষণা করায় পুরোহিতেরাও আশার আলো দেখছেন। সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকে সেই আশারই কথা জানালেন ‘সর্বভারতীয় পুরোহিত ও চতুষ্পাঠী টোল জীবন জীবিকা বাঁচাও কমিটি’র সভাপতি পণ্ডিত নিতাই চক্রবর্তী।
পুরোহিতেরা চান, সরকার সকলের দিকেই নজর দিক। নিতাইবাবুর বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মসজিদের ইমামদের ভাতা দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেছেন এবং তা ঘোষণাও করেছেন। একই ভাবে গরিব পুরোহিতদের জন্যও তিনি নিশ্চয় কিছু করবেন বলে আশা করছে পুরোহিত সম্প্রদায়। কী চান পুরোহিতেরা? |
সাংবাদিক বৈঠকে পুরোহিতরা। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী। |
পুরোহিতদের ওই কমিটির দাবি, তাদের সদস্যদের জন্যও ভাতার ব্যবস্থা হোক। সেই সঙ্গে বৃদ্ধ পুরোহিতদের অবসরকালীন ভাতা এবং সব পুরোহিতের স্বাস্থ্য বিমার ব্যবস্থা হোক। অর্থের অভাবে বহু মন্দির, মঠ ও টোল ধুঁকছে। ওই সব প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে সরকারি অনুদানের দাবিও জানিয়েছে কমিটি। নিতাইবাবু জানান, রাজ্যের প্রায় ৪০ হাজার পুরোহিত চূড়ান্ত আর্থিক সঙ্কটে কোনও রকমে জীবন ধারণ করছেন। অত্যন্ত ত্যাগ স্বীকার করে তাঁরা মানুষের মঙ্গলের জন্য পুজোপাঠ করে চলেছেন। কিন্তু অনেক পুরোহিতের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, নিজের বা পরিবারের কারও অসুখ করলে ডাক্তারও ডাকতে পারেন না। তিনি বলেন, “আমরা ২০০৮ সাল থেকে সরকারের কাছে আমাদের করুণ অবস্থার কথা জানিয়ে আসছি। কিন্তু আগের সরকার কিছুই করেনি। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দুর্দশার কথা জানাব আমরা।” মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের জন্য কিছু করবেন বলে কমিটির সভাপতির আশা।
ইমামদের জন্য সরকারি ঘোষণায় পুরোহিতেরা আশান্বিত হলেও বিজেপি কিন্তু ইমামদেরই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অনড়। ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য সরকারকে বোঝাতে বিশিষ্টজনদের একাংশের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। এ দিন তিনি জানান, তাঁদের দল ১১৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানাচ্ছে, তাঁরা যেন ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্যে ইমাম ভাতা চালু হতে না-দেন। তাঁদের বক্তব্য, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট সরকারের নানা ‘অন্যায়’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের একাংশ ইতিমধ্যেই নতুন সরকারেরও বেশ কিছু ‘অগণতান্ত্রিক’ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। একই ভাবে ইমাম-ভাতার বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনেদের সরব প্রতিবাদ চাইছে বিজেপি। |