মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় ‘পথে নামা’র ডাক দিলেন বিশিষ্টদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, রঙ্গ-চিত্র প্রচারের ‘অপরাধে’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের উপরে আক্রমণ ও তাঁকে গ্রেফতার-সহ নানা ঘটনায় মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর সরকার বা প্রধান শাসকদলের ‘হস্তক্ষেপ’ দেখা যাচ্ছে। যা বাঞ্ছনীয় নয়। এর প্রতিবাদে এখনই সরব না হলে ‘বিপদ’ বাড়তে পারে।
সোমবার কলেজ স্ট্রিটের স্টুডেন্টস হলে এক মানবাধিকার সংগঠন আয়োজিত গণ-কনভেনশনে উপস্থিত হতে না-পারলেও চিঠি পাঠিয়ে ওই বক্তব্য জানিয়েছেন মহাশ্বেতা দেবী, শঙ্খ ঘোষ, অশোক মিত্র এবং তরুণ সান্যাল। রঙ্গ-চিত্র কাণ্ডে আক্রান্ত অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জুটা)-র সম্পাদক পার্থপ্রতিম বিশ্বাসও ওই কনভেনশনে বক্তৃতা করেন।
‘পরিবর্তন-পন্থী’ মহাশ্বেতা দেবী লিখেছেন, ‘আজ কেন মনে হচ্ছে গণতন্ত্রের অধিকারের ব্যাপারটা আগের মতোই বিপন্নতার দিকে যাচ্ছে?’। তবে একইসঙ্গে তিনি এ-ও লিখেছেন, ‘নির্বাচিত সরকার যাতে দীর্ঘদিন থাকে, সে জন্য আমার কলম দিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা অবশ্যই করব। ... সরকারও যেন সহানুভূতিশীল হয়। এর অন্যথা হলে প্রতিবাদের রাস্তা নিতে হবে। তা আমি চাই না।’ শঙ্খবাবুর লিখিত বক্তব্য, ‘প্রতিবাদের কণ্ঠকে কখনও স্তব্ধ করা যায় না। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা’। অশোকবাবু লিখেছেন, ‘এখনও যদি আমরা সর্বস্তরে প্রতিবাদী মানুষদের জড়ো করে পথে নামতে দ্বিধা করি, তা হলে অন্ধকারের যুগই আমাদের ললাটলিখন হতে বাধ্য’।
প্রতিবাদে সরব রাজনৈতিক শিবিরও। এ দিন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, “ওই অধ্যাপকের কাছে রাজ্য সরকারের ক্ষমা চাওয়া উচিত! সম্মানের সঙ্গে তাঁকে কলঙ্ক থেকে মুক্তি দেওয়া উচিত।” হাওড়ার বাউড়িয়ায় দলীয় পদযাত্রায় সামিল হয়ে কংগ্রেসের সাংসদ মৌসম বেনজির নূর বলেছেন, “মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রাজ্য সরকার খর্ব করছে। এটা একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়।” একই মত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যেরও।
পিডিএস, সমাজবাদী মঞ্চ এবং এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও-ও এ দিন ওই বিষয়ে নানা কর্মসূচিতে সামিল হয়েছে। রঙ্গ-চিত্র কাণ্ডে অধ্যাপককে আক্রমণ ও গ্রেফতার, মিছিলকারীদের উপরে ‘সমাজবিরোধীদের হামলা’র প্রতিবাদে এবং গ্রন্থাগারে নির্দিষ্ট সংবাদপত্র রাখার ‘ফতোয়া’ প্রত্যাহারের দাবিতে এ দিন শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে পিডিএস। মিছিলের শেষে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সংক্ষিপ্ত সভায় একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে পিডিএস নেতৃত্ব বলেন, বামফ্রন্টকে পরাস্ত করে নতুন সরকার গঠনের লড়াইয়ে যাঁরা সামনের সারির ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদের অনেকেই এখন সরকার এবং সরকার পরিচালনাকারী দলের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন ‘অগণতান্ত্রিক’ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সৈফুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে আগামী ২০ এপ্রিল মৌলালি যুবকেন্দ্রে একটি কনভেনশন করবে পিডিএস। সমাজবাদী মঞ্চের তরফে পান্নালাল সুরানা এ দিনই কলকাতায় এসে বলেন, সংবাদপত্রের উপরে ‘ফতোয়া’-সহ নানা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে ২০ তারিখ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় চাওয়া হয়েছে।
এই প্রশ্নে ২৬ তারিখ সমাজবাদী মঞ্চ রাজ্যপালের কাছেও যাবে। বিষয়গুলির প্রতিবাদেই এ দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ডিএসও। |