সরকারি প্রকল্পের কথা প্রচারের জন্য মুসলিম ইমামদের আড়াই হাজার টাকা করে মাসোহারা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। এ বার মুসলিম মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে সাইকেল দেওয়ার কথা ঘোষণা করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসা এবং সাধারণ স্কুল, দু’ক্ষেত্রের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির মুসলিম ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়া হবে। তবে রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর সূত্রে খবর, শুধুমাত্র মুসলিম দরিদ্র ছাত্রীদেরই সাইকেল দেওয়া হবে। সেই কারণে, পড়ুয়াদের পারিবারিক আয়ের একটি উর্ধ্বসীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও উর্ধ্বসীমা কী হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি।
এ রাজ্যে পড়ুয়াদের সাইকেল দেওয়ার রীতি অবশ্য নতুন নয়। এর আগে বছর দুই আগে অনগ্রসর শ্রেণির ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। মহাকরণের এক কর্তার কথায়, “মুসলিম এলাকায় অনেক দূরে দূরে স্কুল। অনেক ক্ষেত্রেই পায়ে হেঁটে পড়ুয়াদের স্কুলে যেতে হয়। এর ফলে মুসলিম ছাত্রীদের ক্ষেত্রে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ছে। সে কারণেই মুসলিমদের মধ্যে স্কুলছুটের সংখ্যা কমাতেই এই প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।” ওই কর্তা জানান, প্রথম বছরে কেবল নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়া হবে। পরের বছর থেকে শুধু নবম শ্রেণির ছাত্রীরাই এই সুবিধে পাবে।
মহাকরণে ওই কর্তা জানিয়েছেন, নয়া এই প্রকল্পের খরচ যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়, তার জন্য ইতিমধ্যেই আর্জি জানিয়েছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার প্রাথমিক ভাবে শুধুমাত্র দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের জন্যই ৫০ শতাংশ অর্থ দিতে রাজি হয়েছে। পরের বছর নতুন করে নবম শ্রেণির জন্য ওই সুবিধে পেতে ফের আর্জি জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা।
তবে সংখ্যালঘু দফতর সূত্রে খবর, কেন্দ্র টাকা না দিলেও কয়েক মাসের মধ্যেই নয়া এই প্রকল্প চালু করে দেবে রাজ্য। পরে কেন্দ্র অর্ধেক টাকা দিলে এই প্রকল্পের যে অর্থ বেঁচে যাবে, তা অন্য উন্নয়নমূলক কাজে খরচ করা হবে।
বছর ঘুরলেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে সংখ্যালঘুদের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা করে ওই নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের পায়ের তলার মাটিকেই শক্ত করার চেষ্টা করছেন বলে মনে করা হচ্ছে। দফতর সূত্রে খবর, সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে পড়ুয়াদের হাতে সাইকেল পৌঁছতে আরও মাস ছয়েক লেগে যাবে। তত দিনে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দামামা বেজে যাবে।
সংখ্যালঘু দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই সাইকেল বিলি খাতে টাকা খরচের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়ে অর্থ দফতরে ফাইল পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পর দফতরের পক্ষ থেকে মাদ্রাসা পর্ষদ ও ডাইরেক্টর অফ স্কুল এডুকেশনের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ওই সব ক্লাসে পাঠরত মুসলিম মেয়েদের তালিকা চাওয়া হবে। তার পরেই জেলা ভিত্তিক সাইকেলের টাকা বরাদ্দ করা হবে। তবে কোনও ক্ষেত্রেই নগদ টাকা মেয়েদের হাতে দেওয়া হবে না। দেওয়া হবে সাইকেল। |