ইতিমধ্যেই তিনি বলেছেন, “সরকারে এসে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তার ৯০% কাজই করে ফেলেছি।” সোমবার, সরকারের বর্ষপূর্তির মাসখানেক আগে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন “সরকারের কাজের যদি বিচার করতে হয়, তা হলে আমরা ১০০-তে ১০০ পাব!”
গত বছর ২০ মে মমতার নেতৃত্বে শপথ নিয়েছিল রাজ্য মন্ত্রিসভা। সে হিসেবে দেখতে গেলে তাঁর সরকারের বর্ষপূর্তি আগামী ১৯ মে। এখনও বাকি ৩৩ দিন। তবে বছর ঘোরার পর বা তার অব্যবহিত আগে মুখ্যমন্ত্রী কী বলবেন, তা তাঁর এ দিনের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট।
গত ১১ মাসে মুখ্যমন্ত্রী বারবারই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে জানিয়েছেন, তাঁরা ‘ঝড়ের গতিতে’ কাজ করছেন। ক্ষমতায় আসার আগে যা-যা বলেছিলেন, তার অধিকাংশ কাজই শেষ! প্রশাসনের মতে, সরকারের বর্ষপূর্তিতে তার পূর্ণ খতিয়ান পেশ করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বস্তুত, নতুন সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম হল সরকারের ‘সাফল্যে’র খতিয়ান দিয়ে পুস্তিকা প্রকাশ। এর আগে সরকারের ১০০ দিন এবং ২০০ দিন উপলক্ষেও একই রকমের পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছে। এ বার বর্ষপূর্তির পুস্তিকার সঙ্গে অবশ্য গত দু’টি পুস্তিকার তফাৎ থাকছে। বর্ষপূর্তির পুস্তিকায় নতুন সরকারের বিভিন্ন দফতরের ‘সাফল্যে’র খতিয়ানের পাশাপাশিই আগের দু’বছরের কাজের হিসাবের (বামফ্রন্ট সরকারের শেষ দু’বছর) তুলনামূলক বিচারও থাকবে। এ জন্য প্রতিটি দফতরের সচিবদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে গত তিন বছরের কাজের খতিয়ানও চাওয়া হয়েছে।
ক্ষমতায় এসে গত ১১ মাসে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বহু ঘোষণা করেছে নতুন সরকার। এর মধ্যে আগের সরকারের আমলে শুরু-হওয়া কিছু প্রকল্পও রয়েছে। সেগুলির কাজ শেষের পর তার উদ্বোধন করেছে এই সরকার। পাশাপাশি, নতুন করে কিছু কাজও শুরু হয়েছে। পাহাড়-চুক্তি স্বাক্ষর, মাওবাদী নেতা কিষেণজির মৃত্যু, সুচিত্রা মাহাতো, জাগরী বাস্কের মতো মাওবাদী নেত্রীদের আত্মসমর্পণ করার ঘটনার ফলে জঙ্গলমহলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়েছে সরকার। চার জেলায় পুলিশ কমিশনারেট গঠন-সহ কয়েকটি পদক্ষেপও করা হয়েছে।
কিন্তু সরকারের পক্ষে প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১১-১২ সালের আর্থিক বছরে সরকারের কোনও দফতরই পরিকল্পনা খাতের পুরো অর্থ খরচ করতে পারেনি। সরকারে এসে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী, তা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলেই জানিয়েছে প্রশাসনের একাংশ। শিল্পক্ষেত্রে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এলেও রাজ্যে নতুন কোনও বড় শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভাবনা এখনও সে ভাবে স্পষ্ট নয়। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা-সহ আর্থিক-সামাজিক ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে গত এক বছরে, প্রশাসনের একাংশের কাছে যা চিন্তার বিষয়। পাশাপাশি, প্রতিশ্রুতি থাকলেও সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ’ বন্ধ যায়নি বলেই অনেকের মত।
চলতি সপ্তাহেই রাজ্যের বিভিন্ন মন্ত্রী ও সচিব, তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ সার্ভিস ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ডব্লিউবিসিএস (এগ্জিকিউটিভ) অফিসারদের নিয়ে তিনটি পৃথক বৈঠক করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনটি বৈঠকই হবে টাউন হলে। আগামী বুধবার মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকটি করবেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০ এপ্রিল, শুক্রবার চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে (বৈঠকটি ডাকা হয়েছে তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ সার্ভিস ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে) গত এক বছরে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল কতটা ফিরল, অবস্থা ফেরাতে কী করা উচিত, ঘোষিত প্রকল্প রূপায়ণ এবং ডাক্তারদের দায়বদ্ধতা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনা করার কথা বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর। শনিবার, ২১ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করবেন রাজ্যের ডব্লুউবিসিএস (এগ্জিকিউটিভ) অফিসারদের সঙ্গে। রাজ্যে এই শ্রেণির অফিসারের সংখ্যা প্রায় ১৭০০। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সংগঠনটি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠক ডেকেছে। তবে অন্য সংগঠনের সদস্যদেরও তাতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, সুষ্ঠু প্রশাসন চালাতে সচিব পর্যায়ের অফিসারদের পাশাপাশি ওই অফিসারদের ভূমিকাও যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, সে কথাই তাঁদের বলতে চান মুখ্যমন্ত্রী। |