গত ছ’দিনে পাঁচ জন। আর চলতি বছরের হিসাব ধরলে গত চার মাসে খেজুরির হেঁড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ কলমদানে দিঘা-কলকাতা রাজ্যসড়কের ইড়িঞ্চি সেতুর কাছে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে পনেরো জনের। বলাবাহুল্য আহতের সংখ্যাটা আরও বেশি। পূর্ব মেদিনীপুরের সৈকত শহর দিঘার পথে এই জায়গায় বারবার দুর্ঘটনার কারণ যে ‘বিপজ্জনক বাঁক’ তা মেনে নিয়েছেন সকলেই। কিন্তু এত প্রাণহানির পরেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি পুলিশ-প্রশাসন। ‘করছি, করব’পুরনো বুলিই আওড়াচ্ছে সকলে।
গত রবিবার দুপুর ১টা নাগাদ দিঘা থেকে কলকাতা ফেরার পথে ট্রাকের সঙ্গে গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিন পর্যটকের। দিন ছ’য়েক আগে এই ইড়িঞ্চি সেতুর কাছেই ট্রাক-গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার দুই বাসিন্দার। জখম হয়েছিলেন আরও ৭ জন। ওই সেতুর কাছে কলকাতা-দিঘা রাজ্যসড়ক ধনুকের মতো বেঁকে গিয়েছে। তার উপরে রাস্তার ধারে সামাজিক বনসৃজনের গাছ থাকায় উল্টো দিক থেকে কোনও গাড়ি আসছে কি না, বোঝা যায় না দূর থেকে। গাড়ির গতি বেশি থাকলে নিয়ন্ত্রণ করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। এর ফলেই একই জায়গায় বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মত স্থানীয় বাসিন্দাদের। |
কাঁথি মহকুমা বাস পরিবহণ শ্রমিক সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শিবরাম মাইতির কথায়, ‘‘যে সব গাড়িচালকেরা নিত্য এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন, তাঁরা সতর্ক থাকেন। কিন্তু বহিরাগত গাড়িচালকেরা রাস্তার এই ধরনের সঙ্গে পরিচিত না হওয়ার ফলেই বারবার দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।” একই বক্তব্য পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক সৌমেন মাইতির। গাছপালা কাটার পাশাপাশি ইড়িঞ্চি ব্রিজের দু’দিকে সতর্কতামূলক বোর্ড এবং বাঁকের মুখে রাস্তায় ডিভাইডার বসানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু ‘বধ্যভূমি’ বলে পরিচিত এই জায়গায় নিদেনপক্ষে একটা সতর্কতামূলক বোর্ডও এতদিনে ঝোলানো হয়নি কেন?
উত্তরে সেই দায় এড়ানোর পালা চলছে প্রশাসনে।
গাছপালা ও বাঁকের জন্য সমস্যা হচ্ছে মেনে নিলেও একশ্রেণির চালকদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মত খেজুরি ১ ব্লকের উন্নয়ন আধিকারিক অরুময় ভট্টাচার্যের। বিডিও-র বক্তব্য, “রাস্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি পূর্ত দফতরের দেখার কথা। রাস্তার দু’ধারে গাছপালা কেটে দৃষ্টিপথ বাড়ানোর জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন বলেন, “ইড়িঞ্চি সেতুর কাছে ট্রাফিক পুলিশ রাখা হবে। রোড ডিভাইডার, স্পিড ব্রেকার বসানোর জন্য পূর্ত দফতরকে বলা হয়েছে। বনসৃজনের গাছপালাও ছেঁটে বা কেটে ফেলা হবে।”
কিন্তু এতদিন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?
পূর্ত দফতরের তমলুক ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শশাঙ্ক দাসের দাবি, “অবিভক্ত মেদিনীপুরে ওই রাস্তা তৈরি করেছিল খড়্গপুর ডিভিশন। এখনও তা হস্তান্তর হয়নি। ফলে রাস্তা সংক্রান্ত কাজকর্ম করার এক্তিয়ার নেই তমলুক ডিভিশনের।”
দায় ঠেলাঠেলি চলবেই। ‘পরিবর্তনে’র রাজ্যেও পরিস্থিতির পরিবর্তন বড়ই দুরাশা। |