পাঁচ বছর পর ইউরোপের দুই বড় দলের সাক্ষাত। তা-ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে। মিউনিখে মঙ্গলবার বায়ার্ন মিউনিখ বনাম রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো না আর্জেন রবেন? ফ্রাঙ্ক রিবেরি না করিম বেঞ্জিমা? শেষ হাসি কে হাসবেন, তার থেকেও বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে দু’দলের উত্তেজনাপূর্ণ ইতিহাস। ন’বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়ালের সঙ্গে চার বারের চ্যাম্পিয়ন বায়ার্নের লড়াই তাই শুধুই ফুটবল ম্যাচ নয়।
ইউরোপের দুই ক্লাবের দেখা হওয়া মানেই ঝামেলা। কখনও মারামারি। বিপক্ষের উদ্দেশে কটুক্তি। কখনও দর্শকের হাতে রেফারির হেনস্থা। কখনও খেলা বন্ধ করে টিমের ‘ওয়াক আউট’। কোনও মশলাই বাদ ছিল না। তাই সারা বিশ্বের নজর আজ মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারিনায়। |
|
|
স্কিলের টক্করে মুখোমুখি। সেমিফাইনালের প্রস্তুতি সি আর
সেভেন এবং রবেনের। সোমবার। ছবি: রয়টার্স ও এপি |
|
রিয়াল কোচ হোসে মোরিনহো তাঁর রক্ষণ সাজাতে পারেন আরবেলোয়া, রামোস, পেপে এবং মার্সেলোকে নিয়ে। ডিফেন্সিভ স্ক্রিন খেদিরা ও আলোন্সো। দি’মারিয়ার সঙ্গে অ্যাটাকিং মিডিও রোনাল্ডো, ওজিল। এক ফরোয়ার্ড বেঞ্জিমা। দিয়ারা ও কার্ভালহোকে পাচ্ছেন না মোরিনহো। দুই জার্মান তারকা ওজিল ও খেদিরা খেলতে নামছেন জার্মানির ক্লাবের বিরুদ্ধেই। উল্টো দিকে বায়ার্ন কোচ জাপ হেঙ্কেসেরও এক স্ট্রাইকার গোমেস। মাঝমাঠে রিবেরি, মুলার, রবেন, গুস্তাভো, সোয়াইনস্টাইগার। ডিফেন্সে লাম, বোয়াতেং, ব্যাডস্টাবার, আলাবা।
১৯৭৫-৭৬-এর ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ চারের খেলায় মাদ্রিদে রিয়ালের রোবের্তো মার্তিনেজের নাক ভাঙে বায়ার্ন কিপার শেপ মেয়ারের সঙ্গে সংঘর্ষে। এক রিয়াল-সমর্থক মাঠে ঢুকে রেফারি এবং বায়ার্ন তারকা গার্ড মুলারকে আক্রমণ করে। সেই ম্যাচ তো বটেই, সেই বছর চ্যাম্পিয়নশিপও জেতে বায়ার্ন। ১১ বছর পরের সেমিফাইনালে রিয়ালের খুয়ানিতো লাথি মারেন বায়ার্নের লোথার ম্যাথাউসকে। ’৮১-তে সান্তিয়াগো বের্নাবৌতে এক প্রদর্শনী ম্যাচে বায়ার্নের পুরো দল মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যায়। কারণ, তাদের এক ফুটবলার দর্শকদের দিকে অশ্লীল ইঙ্গিত করে লাল কার্ড দেখেছিলেন।
তিক্ততা জারি রয়েছে এখনও। হেঙ্কেসকে রিয়াল তাড়িয়ে দিয়েছিল ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন করার পরেও। আবার বায়ার্ন তারকা রবেনকেও স্পেনীয় ক্লাবটি ছেড়ে দিয়েছিল প্রেসিডেন্টের পছন্দ নয়, এই যুক্তিতে। প্রাক্তন বায়ার্ন অধিনায়ক ও ক্লাবের ডিরেক্টর ফ্রাঞ্জ বেকেনবাউয়ার রিয়াল কোচ মোরিনহো সম্পর্কে এক বার বলেছিলেন, “মোরিনহো অভদ্র এবং অশিক্ষিত।” তবে জার্মান ক্লাবটির বর্তমান কোচ জাপ হেঙ্কেস পরিস্থিতি হালকা করার চেষ্টায়। তাঁর মতে, “মোরিনহো ইউরোপের অন্যতম সেরা কোচ। যে দেশের ক্লাবেই গেছে সাফল্য পেয়েছে।” দু’দলের ফুটবলারদের অতীত তিক্ততাকেও দূরে সরিয়ে রাখতে চান তিনি। তাঁর কথায়, “এখন ফুটবল অনেক বদলে গিয়েছে। অনেক ক্যামেরা থাকে মাঠে। তা ছাড়া রেফারি তো থাকছেনই সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করতে।”
রিয়ালের সঙ্গে পাঁচ বছর দেখা না হলেও বায়ার্নের সঙ্গে মোরিনহোর লড়াইয়ের স্মৃতি মধুর নয়। ২০১০-এ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে মোরিনহোর ইন্টারের কাছেই হেরেছিল বায়ার্ন। আবার ঘরের মাঠে রিয়ালের বিরুদ্ধে বায়ার্নের রেকর্ড অসাধারণ। ন’বারে একটা ড্র। বাকি আট বারই হেরেছে রিয়াল। রোনাল্ডোরা ইতিহাস পাল্টাতে পারেন কিনা সেটাই দেখার। |