ইস্টবেঙ্গল-৪ (পেন, টোলগে-২, রবিন)
চিরাগ ইউনাইটেড-৩ (সানডে-হ্যাটট্রিক)
|
ইস্টবেঙ্গলের প্রধান গেটের বাইরে সাংবাদিকদের জন্য যে ‘নো এন্ট্রি’-র অদৃশ্য বোর্ড ঝুলছিল, সেটা এখনও খোলেননি ট্রেভর জেমস মর্গ্যান। ব্রিটিশ কোচের ফতোয়া চলছেই।
আই লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের দরজার সামনে অবশ্য ‘নো এন্ট্রি’-র সাইন বোর্ড লাগাতে দিলেন না লাল-হলুদ ফুটবলাররা। পুরো হাট করে খোলা না থাকলেও, লড়াই চলছে। রবিবার যুবভারতীতে চিরাগ কেরলকে কোনও রকমে হারিয়ে এখনও আশার আলো জ্বালিয়ে রাখল ইস্টবেঙ্গল।
কিন্তু সেই আলোয় ডেম্পো-বধের আশা কি দেখা যাচ্ছে? অন্তত সোমবারের ম্যাচ দেখার পরে খোদ ইস্টবেঙ্গল অন্দরমহলে সেই প্রশ্ন উঁকি-ঝুঁকি মারতে শুরু করে দিয়েছে। চিরাগের মতো একটা দল যারা অবনমনের লড়াই করছে, তাদের হারাতেই কাল ঘাম ছুটে গেল লাল-হলুদ ব্রিগেডের। তা হলে মারগাওয়ে শুক্রবার মহা ম্যাচে কি হাল হবে টোলগেদের? এত দিন আত্মবিশ্বাসের পতাকা নিয়ে যিনি একা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, সোমবার তাঁর গলাতেও বিষাদের সুর। ম্যাচের পরে মর্গ্যান বললেন, “ডেম্পোর সঙ্গে ছ’পয়েন্টের এত বড় পার্থক্য মুছে ফেলা বেশ কঠিন। আমরা কোনও রকমে ঝুলে রয়েছি। যখন তখন পড়ে যেতে পারি।” |
তোমারে সেলাম: চতুর্থ গোলের পর পেনের বুটে চুমু রবিনের। সোমবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস । |
ন’বছর অপেক্ষার পরে ইস্টবেঙ্গলের আই লিগ জেতার স্বপ্ন বাস্তবে আবার সত্যি হয় কি না, সে তো সময় বলবে। তবে মাঠের বাইরের বিভিন্ন বিষয়ে মর্গ্যানের মনোযোগ বেড়ে যাওয়ায়, মাঠের ভিতরের পরিবেশে কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রভাব ফেলতে শুরু করে দিয়েছে। এতটাই যে সেটার আঁচ টের পাওয়া গেল সোমবারের ম্যাচেও। দেখে মনে হল, সাংবাদিকদের মাঠ থেকে তাড়ানোর ব্যস্ততায় ঠিক ভাবে অনুশীলনেই মন দিতে পারেননি মর্গ্যান। যার ফলে বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের ভাঙাচোরা দলের বিরুদ্ধে ছন্দহীন, বিশ্রী ফুটবল উপহার দিল ইস্টবেঙ্গল। সবচেয়ে ছন্নছাড়া অবস্থা রক্ষণের। ওপারা আর গুরবিন্দরের মধ্যে কোনও বোঝাপড়াই নেই। মর্গ্যানের দুই নির্ভর যোগ্য স্টপারের ব্যর্থতার সুযোগ নিয়েই চিরাগের সানডে হ্যাটট্রিক করে বেরিয়ে গেলেন। মর্গ্যান নিজেও বললেন, “এত খারাপ ফুটবল খেলা সত্ত্বেও যে তিন পয়েন্ট এসেছে, এটাই অনেক।’’ এ সবের মধ্যে আবার ইস্টবেঙ্গলের জন্য খারাপ খবর হল, ডেম্পো ম্যাচে উগা ওপারাকে পাওয়া যাবে না। তাঁকে ছাড়াই মঙ্গলবার সকালে গোয়া উড়ে যাচ্ছে মর্গ্যান-ব্রিগেড।
রক্ষণের ব্যর্থতা ঢেকে গেল স্ট্রাইকারদের তৎপরতায়। টোলগে-রবিন এক সঙ্গে জ্বলে উঠলেন। বাড়তি পাওনা পেন ওরজির নিঁখুত ফুটবল। এই ত্রিমূর্তির সৌজন্যেই মশাল নিভিয়েও নেভাতে পারলেন না বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। ম্যাচ শুরুর আধ ঘণ্টার মধ্যে পেন এবং টোলগের গোলে ইস্টবেঙ্গল ড্যাং ড্যাং করে এগিয়ে গেলেও, সানডের হ্যাটট্রিকের ওপর ভর করে অঘটন প্রায় ঘটিয়েই দিয়েছেন চিরাগ কোচ। অবশেষে রবিন-টোলগের যুগলবন্দিতে অতি-গুরুত্বপূর্ণ লাইফলাইন পেল মর্গ্যান। বিশ্বজিৎ বললেন, “চেষ্টা করেছিলাম, পারলাম না। দিনটা ইস্টবেঙ্গলের ছিল। কী করা যাবে?”
চিরাগকে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকায় কোনও উন্নতি হল না ইস্টবেঙ্গলের। ডেম্পো, মোহনবাগান এবং চার্চিলের পরে ২৩ ম্যাচে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে চারেই থেকে গেল তারা। যদিও তারা কম ম্যাচ খেলেছে। এখন শুক্রবারের ডেম্পো ম্যাচের ওপরই নির্ভর করছে, আই লিগে ফাস্ট বয় না হোক, ‘সেকেন্ড বয়ের’ জায়গাটা নিশ্চিত করতে পারেন কি না মর্গ্যান।
ইস্টবেঙ্গল
সন্দীপ, নির্মল, সৌমিক, ওপারা, গুরবিন্দর, হরমনজিৎ (পাইতে), মেহতাব, সঞ্জু, পেন, টোলগে (এডমিলসন), রবিন (বলজিৎ) |