ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষীদের ‘কঠোর নিরাপত্তা’ ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে সারারাত আগরতলা শহর দাপিয়ে বেড়াল এক ‘অনুপ্রবেশকারী’। ‘অনুপ্রবেশকারী’কে সুস্থ স্বাভাবিক রেখে বুঝিয়ে-সুজিয়ে বাগে আনতে কালঘাম ছুটল বন-কর্তাদের। ‘ত্রিপুরার অতিথি’ মর্যাদা দিয়ে আপাতত এই অনুপ্রবেশকারীকে লোকালয় থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জম্মুইজলা জঙ্গলের দিকে। আজ সে সংলগ্ন কিল্লা জঙ্গলে পৌঁছে গিয়েছে। খাওয়াদাওয়াও করেছে। অনুপ্রবেশকারী এই ‘অতিথি’র নিরাপত্তার দায়িত্বে আপাতত রাজ্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের ২০-২৫ জনের একটি দক্ষ দল।
এই অনুপ্রবেশকারীটি একটি স্ত্রী হাতি। সাকিন কাঁটাতারের ও পারে বাংলাদেশ। ত্রিপুরা বন দফতরের চিফ ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন সনাতন তালুকদার জানান, হাতিটি যাতে লোকালয়ে ফের চলে এসে কোনও ক্ষয়ক্ষতি না করে, সে দিকে বনকর্মীরা সদাসতর্ক রয়েছেন। জানা গিয়েছে সে গর্ভিণী।
আখাউড়া সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের ধারণা, বাংলাদেশের কোনও এলাকা থেকে পোষা হাতিটি এ পারে চলে এসেছে। রবিবার রাত তিনটে নাগাদ আখাউড়ার সীমান্ত অতিক্রম করে সোজা চলে আসে আগরতলায়। সীমান্ত এলাকার বিএসএফ জওয়ানেরা দেখতে পেয়ে প্রথমে তাকে তাড়া করেন। বেশ কিছুটা দৌড়নোর পর হাতিটি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। স্থানীয় পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। তাঁরাও হাতিটিকে বাগে আনতে না পেরে রাজ্য বন দফতরকে খবর পাঠান। ততক্ষণে আলো ফুটে হয়ে কিছু লোকজনও জড়ো হয়ে গিয়েছে। সন্ত্রস্ত হয়ে হাতিটি আখাউড়ার রাস্তা ধরে শহরের দিকে চলে আসে। ততক্ষণে বনকর্মীরাও এলাকায় উপস্থিত। তাঁদের তৎপরতায় হাতিটি শহরের দক্ষিণে বিশ্রামগঞ্জ হয়ে সিপাহিজলার জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যায়। লোকালয়ের কোনও ক্ষয়ক্ষতি অবশ্য করেনি সে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে জম্পুইজলা জঙ্গলের দিকে সে এগিয়ে যায়।
বন দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা দেবাশিস চক্রবর্তী জানান, জঙ্গলে হাতিটি যাতে ‘নিখোঁজ’ না হয়ে যায়, সে জন্যও বনকর্মীরা দল দিনরাত নজর রাখছেন। হাতিটি ‘গর্ভবতী’ হওয়ায় বাড়তি খেয়াল রাখতে হচ্ছে। ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে এটি ‘পোষা’ হাতি। সিপাহিজলা চিড়িয়াখানা থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মাহুতদেরও ডাকা হয়েছে। তবে তাদের ডাকাডাকিতে সে ঠিকমতো সাড়া দিচ্ছে না। দেবাশিসবাবুর অভিমত, হাতিটির নিজস্ব মাহুত ছাড়া তাকে বাগে আনা খুবই কঠিন। বিএসএফের মাধ্যমে ও পার বাংলার মাহুতদের সঙ্গেও তাই যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। |