উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলে বাইসনের সংখ্যা কমাতে ভিনরাজ্যে ওই বন্যপ্রাণীদের স্থানান্তরের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে উদ্যোগী হয়েছে বন দফতর। বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের জলদাপাড়া, বক্সা, গরুমারা সহ বিভিন্ন বনাঞ্চলে বাইসনের সংখ্যা বেড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এতে মাঝেমধ্যেই জঙ্গল থেকে বাইসন লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। বাড়িঘর, ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি বাসিন্দাদের জখম হবার ঘটনাও প্রায় রুটিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভিন রাজ্যের বনাঞ্চলে বাইসন পাঠানোর প্রস্তাব নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন বন কর্তারা। রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, “রাজ্যে বাইসনের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গিয়েছে। রাজ্যের অন্যত্র বাইসনদের স্থানান্তর সম্ভব নয়। এতে ভিন রাজ্যে স্থানান্তরের কথা ভাবতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ওই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। বন্যপ্রাণ দফতরের পিসিসিএফকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।” তবে বনকর্তাদের ভাবনা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে বন্যপ্রাণ ও পরিবেশপ্রেমী মহলে। কোচবিহার নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার স্টাডি গ্রুপের সম্পাদক অরুপ গুহ বলেন, “বাইসনের হৃদযন্ত্র দুর্বল। এতে তাদের বাইরে পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ। এর বদলে জঙ্গলে মাংসাসী প্রাণীদের সংখ্যা বাড়াতে পারলে বাইসনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।” উত্তরবঙ্গের গরুমারায় সাত শতাধিক এবং জলদাপাড়ায় প্রায় দেড় হাজার বাইসন রয়েছে। অন্য বনাঞ্চল মিলিয়ে ওই সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। বছর পাঁচেক আগেও সংখ্যাটি ছিল অর্ধেক। বাইসনের সংখ্যা কমাতে বাম জমানায় তৎকালীন বনমন্ত্রী বিদেশের উদাহরণ টেনে কালিংয়ের কথা জানিয়েছিলেন। বনমন্ত্রী জানান, বাইসনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জঙ্গলে সমস্যা হচ্ছে। ঘাসের রক্ষনাবেক্ষণে বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া-সহ বিভিন্ন দেশের মত এ দেশে বন্যপ্রাণীর কালিং সম্ভব নয়। বন দফতরের কয়েকজন আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে বাইসনদের জন্মনিয়ন্ত্রণের কথাও চিন্তা করা হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়িত করা অসম্ভব বোঝার পর অন্য রাজ্যে স্থানান্তরের বিষয়টি দেখা হচ্ছে। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) সীতাংশু বিকাশ মন্ডল বলেন, “গত ৫ বছরে উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলে বাইসন সংখ্যা দ্বিগুন বেড়েছে। ফিল্ড অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করে তা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কেন্দ্রে পাঠানো হবে।” |