সম্পাদকীয় ২...
জনসংস্কৃতি
কাহিনিকার অ্যালান সিলি। বঙ্গানুবাদে কাহিনিটির শিরোনাম: রাজ কপূর কী ভাবে আমার প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন। গল্প অনুযায়ী, জনৈক ব্যক্তি (লেখক স্বয়ং হইতে পারেন) তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণকালে এক বার দুর্বৃত্তের পাল্লায় পড়েন। অতঃপর তিনি গোত্রপরিচয়ে ভারতীয় জানিবার পরে কথায় কথায় রাজ কপূরের প্রসঙ্গ উঠে এবং সেই উল্লেখই পরিশেষে তাঁহার পরিত্রাণের কারণ হয়। সোভিয়েতে রাজ কপূর, তাঁহার সমাজবাদের বলিউডি সংস্করণটি-সহ, তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। অ্যালান সিলি-র কাহিনিটি নিছক কল্পনা কি না, সেই প্রশ্ন অন্য, কিন্তু অন্য ভাবে দেখিলে ইহার ভিতরে একটি গভীরতর সত্য আছে। কারণ, জনপরিসরে সংস্কৃতির ভিতর একটি আন্তর্দেশীয় চলাচল বিদ্যমান। এই গতায়াতকে নিছক কাঁটাতারের সীমায় বাঁধা সম্ভব নহে। সুতরাং, নয়াদিল্লির সহিত ইসলামাবাদের সম্পর্ক যথেষ্ট সুমধুর না হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানে দিলীপকুমার তথা ইউসুফ খানের জন্মভিটা সংরক্ষণে উদ্যোগী হয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। আর এক কিংবদন্তি চিত্রতারকা রাজ কপূরের জন্মভিটাটিও সংরক্ষণের উদ্যোগ হইয়াছে। অবশ্যই একটি কারণ, তাঁহারা ভূমিপুত্র। তাঁহাদের কৃতিত্বে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল গর্ববোধ করিতেই পারে। দিলীপকুমার পাকিস্তানের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মানে ভূষিতও বটেন। প্রশ্নটি এই পর্যন্ত আসিয়া থামে না অবশ্য। যে দেশে ভারত-বিদ্বেষ বিশেষ রাখঢাক করিয়া রাখিবার বস্তু নহে, সেই দেশে ভারতের দুই চিত্রতারকাকে লইয়া এমন উন্মাদনা কেন?
উত্তর জানে জনসংস্কৃতি। জনসংস্কৃতি জানে যে, মুম্বই তথা বলিউড-এর সিনেমা বস্তুটি এমন একটি সাংস্কৃতিক পণ্য যাহা যাবতীয় কড়াকড়িকে অগ্রাহ্য করিয়া সীমারেখার উভয় পার্শ্বেই জনপ্রিয়তা লাভ করিয়াছে। উপমহাদেশীয় জনতার যে মানসিক নৈকট্য, কোনও সিনেমা বা কোনও চিত্রতারকাকে লইয়া দুই দেশের জনতার উন্মাদনার ভিতর তাহাই ফলিয়া উঠে। কারণ, সীমান্তের উভয় পারেই জনতার যে নির্মিত আত্মপরিচয়, তাহার ভিতর রাজ কপূর বা দিলীপকুমার ঢুকিয়া আছেন। ‘অস্মিতা’টি, নিশ্চিত ভাবেই, বহুমাত্রিক। কখনও, কোনও বিশেষ অভিপ্রায়বশত, সীমান্তের উভয় পারেই তাহাকে বিশেষ কোনও খোপে পুরিয়া ফেলিবার আয়োজন হয়। কিন্তু, পাকিস্তানে দিলীপকুমার বা রাজ কপূরের জন্মভিটা সংরক্ষণের সংবাদই প্রমাণ, অস্তিত্বের এই বহুকৌণিক আদলটিকে সম্পূর্ণ বিদায় করা কঠিন। কতটা কঠিন, তাহা পাকিস্তানে দিলীপকুমার বা ভারতে প্রয়াত নুসরত ফতে আলি খান-এর জনপ্রিয়তাই প্রমাণ করে। সীমান্তরেখাকে কাঁটাতার দিয়া বাঁধা যায়। কিন্তু, জনসংস্কৃতিকে বাঁধা কঠিন। ওয়াগা-র ন্যায় রাষ্ট্রনির্ধারিত এবং সুনির্দিষ্ট করিডর ছাড়াই তাহার সংলাপ এ পার হইতে অন্য পারে ছড়াইয়া পড়ে। তাহা প্রার্থিতও বটে। এই জন্য প্রার্থিত যে তাহার ফলে ‘অস্মিতা’র বিষাক্ত একমাত্রিকতাকে প্রতিরোধ করিবার একটি উপায় পাওয়া যায়। পরিণামে, মনের প্রসারটি রুদ্ধ হয় না। অন্তত, তেমন একটি সম্ভাবনা তৈয়ারি হয়। সীমান্ত যদি শ্বাসরোধী ফাঁসের ন্যায় গণমনে চাপিয়া বসে, তখনই সংকট। দিলীপ কুমারের জন্মভিটা দেখাইয়া দিল, কিছু কিছু পরিসরে, এখনও, কোনও বৈরিতা আসে নাই। নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ কথাবার্তা চলিতে থাকুক। তাহাতে উত্থানপতন, বাস্তবের দাবি মানিয়া, থাকিবে। হাস্য করিবেন দুই দেশের জনতা। আবহে হয়তো লতা মঙ্গেশকর বা নুসরত ফতে আলির গান বাজিবে। হাসিটি দীর্ঘজীবী হউক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.