অনেক দিন ধরেই ছোটখাট বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছিল। প্রায় তিন বছর ধরে খননকার্য চালানোর পরে অবশেষে প্রত্নতত্ত্ববিদরা হরপ্পা সভ্যতার আরও একটি জনপদের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। গুজরাতের কচ্ছের পশ্চিমে খিরসারা অঞ্চলে মাটির তলা থেকে যে সব উদ্ভিজ্জ উপাদান পাওয়া গিয়েছে ‘বীরবল সহানি ইনস্টিটিউট অফ প্যালিওবোটানি’-র গবেষকেরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, সেগুলির বয়স খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ২৬০০ থেকে ২২০০ বছর আগে। অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে গড়ে উঠেছিল এই সভ্যতা।
এই অঞ্চলের পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে খারি নদী। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের বডোদরা মণ্ডলের অধীক্ষক জীতেন্দ্র নাথ জানান, পাশেই নদী থাকায় কাঁচামাল পাওয়া অনেক সহজ হত। সেই সঙ্গে এই অঞ্চলে খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য থাকায় এই জনপদ গড়ে ওঠে। বেশ কিছু খোঁড়ার যন্ত্রপাতি, শামুকের খোলের টুকরো পাওয়া গিয়েছে এখান থেকে। এ ছাড়াও, সোনা ও শাঁখ দিয়ে তৈরি বালা, বিভিন্ন ধরনের পাথরের মালা, নানা রঙের পাথর বসানো সামগ্রীও পাওয়া গিয়েছে। এই ধরনের পাথরের মালা হরপ্পা সভ্যতার অন্য শহর থেকেও আগে মিলেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মূলত বাণিজ্যের উদ্দেশেই এগুলো ব্যবহার করা হত।
ভুজ থেকে উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার দূরের খিরসারায় পাওয়া গিয়েছে বেশ কয়েকটি চৌকো, তিন কোণা পাথরের তৈরি শিলমোহর। এর মধ্যে কিছু শিলমোহরের মধ্যে লম্বা লম্বা খোদাই করা চিহ্ন রয়েছে, যা হরপ্পা সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্কের প্রমাণ বলে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন। এই জনপদের জীবনযাত্রার মানও যথেষ্ট আধুনিক ছিল। জীতেন্দ্র নাথ জানিয়েছেন, খিরসারার খননস্থল থেকে একটা গুদামঘরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে। তার দেওয়াল দু’টো স্তরে তৈরি ছিল। স্তর দু’টোর মধ্যে যে ফাঁক ছিল, তা হাওয়া চলাচলের জন্য ব্যবহার করা হত। আর বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সেই গুদামঘরের দেওয়াল কাঠ বা তার মতোই কোনও ছিদ্রযুক্ত উপাদানে তৈরি, যাতে বাইরে থেকে হাওয়া চলাচল বজায় থাকে ও ঘরের ভিতরের জিনিসপত্র সুরক্ষিত থাকে।
দেওয়াল ঘেরা এই জনপদের প্রাচীর বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছিল। শহরের কিছু এলাকায় বাড়ির গঠনে সূক্ষ্ম কারুকাজও রয়েছে। |