গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার কলঙ্ক মোছার পর আরএসএস যখন নরেন্দ্র মোদীকে গুজরাতের পরিধির বাইরেও জাতীয় রাজনীতিতে বড় ভূমিকায় দেখতে চাইছে, সেই সময় আজ রাজধানীতে অ-কংগ্রেসি নেতাদের একজোট করতে সক্রিয় হলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী।
গোধরা-পরবর্তী হিংসার মামলায় ‘ক্লিনচিট’ পাওয়ার পর থেকেই মনমোহন সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন মোদী। যে আরএসএস এত দিন ‘রুষ্ট’ ছিল তাঁর ভূমিকায়, তারাও আজ পরোক্ষে মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের পক্ষে সওয়াল করছে। সঙ্ঘের মুখপত্র পাঞ্চজন্য-তে মোদীর তারিফ করে বলা হয়েছে, তাঁর মধ্যে জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ, দৃঢ়তা ও জনসেবার ভাবনা রয়েছে। দেশের জনতা গুজরাতের বাইরে জাতীয় স্তরে মোদীর ভূমিকার অপেক্ষায় রয়েছে। আদালত ‘ক্লিনচিট’ দেওয়ার পরে সঙ্ঘের এমন সমর্থন পেয়ে উজ্জীবিত মোদী আজ বিজ্ঞান ভবনের বৈঠকের মাঝেই ছুটে যান তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার কাছে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কও সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন তার আগেই। |
যদিও বিজ্ঞান ভবনের কাছেই তামিলনাড়ু ভবনে এই বৈঠকের পিছনে একক ভাবে শুধু মোদীর নয়, বিজেপি নেতৃত্বেরও ভিন্ন কৌশল রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম যখন বিজ্ঞান ভবনে বসে অ-কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের ক্ষোভ প্রশমণের চেষ্টা করছেন, সেই সময় একটা সমান্তরাল বৈঠকের আয়োজন করে কংগ্রেসকে পাল্টা বার্তা দিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। বোঝানোর চেষ্টা করলেন, খোদ ইউপিএ শরিকরাই যখন দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে মনমোহন সরকারের থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে, সেই সময়েই অ-কংগ্রেসি দলগুলির সঙ্গে জোট বেঁধে শক্তিশালী হচ্ছে বিজেপি তথা এনডিএ।
এই একান্ত বৈঠকের পরে মোদী বা জয়ললিতা কোনও মন্তব্য করেননি। তবে অরুণ জেটলি দলের কৌশল ব্যাখ্যা করেছেন রাজস্থানে। তিনি বলেন, “জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র হোক কিংবা বিএসএফ বা আরপিএফের হাতে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া, নানান বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে মনোভাব নিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন অ-কংগ্রেসি দলগুলি। এই অ-কংগ্রেসি দলগুলির উদ্বেগের শরিক বিজেপিও। এই বিষয়গুলিতে সংসদের ভিতরে-বাইরে সরব হওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”
বিজেপি সূত্রের খবর, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা শরদ পওয়ারের মতো ইউপিএ শরিকদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বাড়ছে। সামনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। বিজেপি ইতিমধ্যেই শরিক ও অ-কংগ্রেসি দলগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। যাতে একজোট করে কংগ্রেসকে চাপে রাখা যায়। কিছু দিন আগেই চেন্নাইয়ে গিয়েও জয়ললিতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেটলি।
লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এনডিএ-কে প্রসারিত করার কাজটিও সারতে চায় বিজেপি। জয়ললিতা অনেক দিন ধরেই ‘বন্ধুত্বের’ হাত বাড়িয়ে রেখেছেন। সেই বন্ধুত্ব আরও নিবিড় করতেও জয়ললিতার সঙ্গে লাগাতার নানান বিষয়ে আলোচনা করছেন বিজেপি নেতারা। নবীন পট্টনায়ক কিংবা মমতার মতো এনডিএ-র পুরনো শরিকদেরও ফিরে পেতে চাইছে বিজেপি। মমতার সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্কে যত চিড় ধরছে, বিজেপিও তত তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যসভা নির্বাচনে মমতা যখন বিমল গুরুংদের পাশে পেতে চাইছিলেন, লালকৃষ্ণ আডবাণীর পরামর্শে দার্জিলিঙের সাংসদ যশোবন্ত সিংহ তখন মোর্চা নেতৃত্বকে শুধু এই বার্তাই দিয়েছিলেন যে, তাঁরা যেন এমন কিছু না করেন যাতে কংগ্রেসের সুবিধা হয়। সম্প্রতি ব্যঙ্গচিত্র বিতর্কেও মমতার সমালোচনা করেননি বিজেপি নেতারা।
সঙ্ঘের ‘আশীর্বাদ’ পেয়ে এনডিএ-র বাইরে এই অ-কংগ্রেসি দলগুলিকে একজোট করতে মোদীও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে শুরু করলেন আজ। মোদী জানেন, জাতীয় স্তরে ‘বড়’ ভূমিকায় উঠে আসতে হলে তাঁকে এনডিএর ছাতার তলায় আরও অনেক দলকে টেনে আনতে হবে লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে। সে কারণেই অ-কংগ্রেসি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের মন জয় করার কাজে নেমে পড়েছেন মোদী। আগামী মাসেই জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র নিয়ে বৈঠকে সরকারকে সরাসরি কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আর একটি সুযোগ পাবেন এই মুখ্যমন্ত্রীরা। তার আগে আজ আলাদা ভাবে বৈঠক করে সেই বিষয়টিও ঝালিয়ে নিলেন মোদী-জয়ললিতারা। |