মাওবাদী দমনেও অর্থ মকুব করার দাবি মমতার
মাওবাদী সমস্যা মোকাবিলার দায় শুধু রাজ্যের নয়। সেই দায়িত্ব সমান ভাবে ভাগ করে নিক কেন্দ্রও। আজ দিল্লিতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে কেন্দ্রকে ফের এই বার্তা দিল পশ্চিমবঙ্গ। সেই সঙ্গে আরও একটা বিষয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের তরফে এ দিন স্পষ্ট করে দেওয়া হল। রাজ্যের দাবি না মানা হলে আগামিদিনে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়া করবে পশ্চিমবঙ্গ।
তীব্র আর্থিক সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে মাওবাদী মোকাবিলায় মোতায়েন আধা সামরিক বাহিনীর খরচ দেওয়া রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়ে ওই অর্থ মকুবের দাবি জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এর পাশাপাশি আজ মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনে রাজ্যের তরফে মাওবাদী অধ্যুষিত জেলাগুলিতে কেন্দ্রীয় সুসংহত পরিকল্পনা রূপায়ণ করার ক্ষেত্রে অর্থ সাহায্য প্রায় দশ গুণ বাড়ানোর দাবিও জানানো হয়েছে। দিল্লিতে এই বৈঠকে পূর্ব ঘোষণা মতোই গরহাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর লিখিত বক্তৃতা সম্মেলনে পাঠ করেন রাজ্যের প্রতিনিধি তথা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। বৈঠক শেষে অমিতবাবুর দাবি, মাওবাদী সমস্যা মোকাবিলায় রাজ্য যে পথে এগোচ্ছে, তার প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বারো ভুঁইয়া
(উপরে বাঁ দিক থেকে) মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে রমণ সিংহ, অশোক গহলৌত, ভূপিন্দর সিংহ হুডা,
পৃথ্বিরাজ চহ্বাণ, শিবরাজ সিংহ চৌহান, অখিলেশ যাদব, জয়ললিতা, নীতীশ কুমার,
প্রেম কুমার ধুমল, তরুণ গগৈ, ওমর আবদুল্লা, নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, আজকের বৈঠকে অকংগ্রেসি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা সার্বিক ভাবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের অধিকারের হস্তক্ষেপের বিষয়টি বৈঠকে তুলে ধরবেন, সেটাই প্রত্যাশিত ছিল। এবং যে হেতু এই বিষয়টি নিয়ে অতীতে বেশ কয়েক বার তৃণমূল সরব হয়েছে, তাই আজকের বৈঠকে মমতা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মুখ খুললে রাজনৈতিক ভাবে বাড়তি ফায়দা পেয়ে যেত বিরোধীরা। মমতা বিরোধীদের সেই সুযোগ দিতে রাজি নন। সব দিক বিবেচনা করেই তাই আজকের বৈঠকে অনুপস্থিত থেকেছেন তিনি। যদিও সুকৌশলে বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যের প্রতিবাদ স্পষ্ট করে জানাতে পিছপা হননি তিনি।
তবে এই মুহূর্তে সংঘাতের রাস্তা এড়াতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে ইউপি তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব কোন পথে এগোতে চাইছেন, তা দেখেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে চাইছেন মমতা। তা ছাড়া গত সপ্তাহেই যোজনা কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে যোজনা বরাদ্দ আদায় করেছেন তিনি। বর্তমানে রাজ্যের বেহাল আর্থিক দশা শোধরাতে কেন্দ্রের সাহায্য যে প্রয়োজন, তা বিলক্ষণ জানেন মমতা। তাই রাজ্যের দাবির প্রেক্ষিতে কেন্দ্র কী অবস্থান নেয়, তা দেখে তবেই সুর চড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিনের বৈঠকে তাঁর বয়ানে বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করায় রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকে ৪২৩ কোটি টাকা দিতে হবে। অবিলম্বে ওই অর্থ মকুব করুক কেন্দ্র।” মমতার যুক্তি, মাওবাদী সমস্যা কোনও একটি রাজ্যের কাছে আর পাঁচটা সাধারণ আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা নয়। এর সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা জড়িয়ে রয়েছে। তাই মাওবাদী মোকাবিলায় কেন্দ্র যখন কোনও রাজ্যে আধা-সামরিক বাহিনী নিয়োগ করে, তখন সেই রাজ্যের কাছেই তার খরচ মেটানোর জন্য অর্থ চাওয়া যুক্তিহীন।
এখানেই থেমে না থেকে যে ভাবে মাওবাদী অধ্যুষিত জেলাগুলিতে কেন্দ্র চাল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, তার তীব্র বিরোধিতা করেছেন মমতা। নির্বাচনের আগে তৃণমূলের প্রতিশ্রুতি ছিল, জঙ্গলমহল এলাকার বসবাসকারীদের খাদ্য সুরক্ষা দেবে নতুন সরকার। রাজ্যের অভিযোগ, বিপিএল তালিকা অনুসারে কেন্দ্রের কাছ থেকে যে চাল রাজ্যের পাওয়ার কথা, তা হঠাৎই কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক। অবিলম্বে ওই সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে কেন্দ্রের কাছে আজ দরবার করেছে রাজ্য। এ ছাড়া উন্নয়নের মাপকাঠিতে পিছিয়ে থাকা তিনটি জেলা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় কেন্দ্রের সুসংহত প্রকল্পের কাজ চালু রয়েছে। ওই ধরনের জেলাগুলিতে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণের জন্য বছরে ৩০ কোটি টাকা দিয়ে থাকে কেন্দ্র। কিন্তু রাজ্য সরকারের মতে, সার্বিক ভাবে পিছিয়ে থাকা জেলাগুলিতে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে গেলে ওই সাহায্য দশ গুণ বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করা উচিত। অমিতবাবুর দাবি, মাওবাদী অধ্যুষিত প্রায় সমস্ত রাজ্যই এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে। একই সঙ্গে বৈঠকে পেশ হওয়া বিএসএফ আইনের সংশোধনী প্রস্তাবেও আপত্তি জানিয়েছে রাজ্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, চিদম্বরম রাজ্যগুলির আপত্তি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
এ দিনের বৈঠকে রাজ্যের তরফে পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ২৩ জন মাওবাদী নেতা অস্ত্র ত্যাগ করে মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন। সরকার এদের সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের প্রশ্নে যে দায়বদ্ধ, তা-ও কেন্দ্রকে জানিয়েছেন মমতা। গত এক বছরে জঙ্গলমহলে হিংসা কমেছে বলে দাবি করার পাশাপাশি এলাকার প্রায় দশ হাজার যুবককে নিরাপত্তারক্ষী (পাঁচ হাজার হোম গার্ড ও পাঁচ হাজার কনস্টেবল) হিসেবে নিয়োগের বিষয়টিও রাজ্যের তরফে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “মাওবাদী মোকাবিলায় রাজ্যের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। ওই সাফল্য ধরে রাখতে গেলে কেন্দ্রীয় সাহায্য প্রয়োজন। সেই বার্তাই আজ রাজ্যের পক্ষ থেকে কেন্দ্রকে দেওয়া হয়েছে।”
মাওবাদী সমস্যার পাশাপাশি জাল নোট নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথাও আজ বৈঠকে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যে জাল নোট রুখতে ইতিমধ্যেই সিআইডি-র একটি বিশেষ শাখা গড়া হয়েছে। তার পাশাপাশি এ দিন মমতা কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন করেন, যে এলাকাগুলিতে জাল নোট বেশি পাওয়া যাচ্ছে (মূলত সীমান্ত এলাকা) সেখানকার স্থানীয় ব্যাঙ্কে জাল নোট চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ যন্ত্র বসানো হোক। প্রয়োজনীয় প্রায় একশো আইপিএস অফিসার না থাকায় প্রশাসন চালাতে গিয়ে তিনি যে সমস্যায় পড়ছেন, তা মেটাতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন মমতা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.