এখন যে সংবাদপত্রগুলিকে গ্রন্থাগারে ‘রাখার যোগ্য’ এবং ‘মুক্ত চিন্তার’ সহায়ক বলে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বেছে নেওয়া হয়েছে, তার প্রায় সবগুলিই অবশ্য সরকার তথা শাসক দল তৃণমূলের ‘অনুগত’ বা ‘সমর্থক’ হিসেবেই পরিচিত। তালিকার প্রথম নাম ‘সংবাদ প্রতিদিন’ যার সম্পাদক এবং সহযোগী (অ্যাসোসিয়েট) সম্পাদক দু’জনেই তৃণমূলের রাজ্যসভা সদস্য। তালিকায় থাকা হিন্দি দৈনিক ‘সন্মার্গ’ এবং উর্দু দৈনিক ‘আখবর-ই-মশরিক’-এর সম্পাদকেরাও কয়েক দিন আগেই তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছেন। সরকারের বাছাই-তালিকায় ‘সকালবেলা’ নামের আরও একটি বাংলা দৈনিক এবং ‘আজাদ হিন্দ’ নামের একটি উর্দু দৈনিক স্থান পেয়েছে। যে গোষ্ঠী ওই দু’টি সংবাদপত্রের পরিচালক, ঘটনাচক্রে ‘সংবাদ প্রতিদিনে’র সহযোগী সম্পাদকই সেই গোষ্ঠীর ‘মিডিয়া সি ই ও’। বাকি আর যে তিনটি বাংলা দৈনিক রাখার ‘ছাড়পত্র’ মিলেছে, সেগুলি যথাক্রমে ‘খবর ৩৬৫ দিন’, ‘একদিন’ এবং ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’।
এই নির্দেশের খবর জানাজানি হতেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। রাজনীতিকরা তো বটেই, মুখ খোলেন বিশিষ্ট জনেরাও। সাধারণ ভাবে কেউই সরকারের এই ‘অগণতান্ত্রিক’ মনোভাব সমর্থন করতে পারেননি। মঙ্গলবার বিধানসভায় এ নিয়ে একই সুরে সরব হন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এবং সরকারি দল কংগ্রেসের বিধায়ক অসিত মিত্র। পরে সাংবাদিক সম্মেলনে সূর্যবাবু বলেন, “যাবতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত নড়বড়ে করে দেওয়ার চেষ্টা করছে এই রাজ্য সরকার।” অসিতবাবুও বলেন, “এই ধরনের নির্দেশ গণতান্ত্রিক বন্দোবস্তে আঘাত হানে।” সমালোচনা করে বিবৃতি দেয় সিপিআই-র যুব সংগঠন।
বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে পাঠক মহলেও। এমন একটি লিখিত নির্দেশ পেয়ে হতচকিত বিভিন্ন সরকারি গ্রন্থাগারের কর্মীরা। শিলিগুড়িতে জেলা গ্রন্থাগারের কর্মী সুজিত চক্রবর্তী বলেন, “পাঠকদের ক্ষোভ কী ভাবে সামাল দেব, জানি না।” উত্তর দিনাজপুর জেলা গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান প্রতুলচন্দ্র কর্মকারও বলেন, “ওই বিজ্ঞপ্তি কার্যকর হলে পাঠকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছি।” পশ্চিমবঙ্গ গ্রন্থাগার কর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ সরকার জানান, “বাম আমলে গ্রন্থাগারে সিপিএমের দৈনিক মুখপত্র রাখা নিয়ে লিখিত সরকারি নির্দেশ থাকত না। এ বার রাস্তায় নেমে আন্দোলন ছাড়া পথ নেই।”
যাঁর দফতরের জারি করা নির্দেশ নিয়ে এত আলোড়ন, সেই গ্রন্থাগারমন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরী মঙ্গলবার দিনভর ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। তাঁর অফিস এবং বাড়িতে ফোন করলে বলা হয়, “মন্ত্রীর গলা খারাপ। তিনি কথা বলতে পারবেন না।” ফোনে পাওয়া যায়নি দফতরের সচিব রিনচেন টেম্পোকেও। তবে মহাকরণের খবর, এই ধরনের নির্দেশ ‘লিখিত ভাবে’ কেন বার হল, তা জানতে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। তথ্য দফতরকে বিষয়টি জানতে বলা হয়েছে। |