সাত পাকে বাঁধা পড়লেন ওঁরা। সানাইয়ের মাঙ্গলিক সুরে শুভদৃষ্টি থেকে সিঁদুরদান, মালাবদল থেকে মিষ্টিমুখ- সব কিছুই হল প্রথা মেনে।
এটাই তো চেয়েছিলেন আড়শা থানার খুকড়ামুড়া গ্রামের তরুণী মঙ্গলা মাহাতো। তবে তফাৎ একটাই। বাড়ির উঠোনের বদলে বুধবার বিয়ের আসর বসেছিল পুরুলিয়া জেলা সংশোধনাগারে। পাত্র ওই গ্রামেরই যুবক কাঞ্চন মাহাতো। অভিযোগ, বিয়ের প্রতিশ্রতি দিয়ে তিনি মঙ্গলার সঙ্গে অবাধ মেলামেশা করেও পরে তাঁকে বিয়ে করতে রাজি হননি। উপায় না পেয়ে মঙ্গলা শেষে পুলিশের দ্বারস্থ হন। তারপর আইন-আদালতের দীর্ঘ লড়াই। শেষে সেই চার হাত এক হল। শেষ পর্যন্ত সেই চার হাত এক হল। |
পুরুলিয়া জেলা আদালতের সরকারি কৌঁসুলি পঙ্কজ গোস্বামী জানান, অভিযুক্ত যুবক মঙ্গলাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সহবাস করেছিলেন। পরে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। গর্ভপাত করেন। কিন্তু কাঞ্চন তাঁকে আর বিয়ে করতে রাজি হননি। শেষে মঙ্গলা ২০১০ সালের মে মাসে আড়শা থানায় কাঞ্চনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগে পুলিশ কাঞ্চনকে গ্রেফতার করে। তদন্ত শেষে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগে আদালতে চার্জশিট দেয়। এরপরেই কাঞ্চন মত পরিবর্তন করেন।
পুরুলিয়া জেলা সংশোধনাগারের সুপার বিদ্যুৎ রায় বলেন, “কাঞ্চন নিজের ভুল বুঝতে পেরে মঙ্গলাকে বিয়ে করতে চান। সংশোধানাগারের আধিকারিক ব্রততী বিশ্বাসের মাধ্যমে তিনি বিচারকের কাছে সেই আবেদন জানান।” সরকারি কৌঁসুলি জানান, জেলা দায়রা বিচারক সমরেশপ্রসাদ চৌধুরী অভিযুক্তের আবেদন মজ্ঞুর করেন। বিচারকের নির্দেশেই এ দিন সংশোধনাগারের মধ্যেই দু’জনের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল।
আনুষ্ঠানিক বিয়ের পরে আইনি বিবাহও হল। জেলা নিবন্ধকের উপস্থিতিতে বিবাহ-নিবন্ধনের খাতায় স্বাক্ষর করলেন নব দম্পতি। মেয়ে-জামাইকে আশীর্বাদ করে মঙ্গলার মা রোদনাদেবী বললেন, “কয়েক বছর মেয়েটার উপর যা ঝড় গেল! আজ ওর ইচ্ছা পূরণ হল দেখে মন ভরে গেল। সব দুঃখ দূর হয়ে গেল।” বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন কাঞ্চনের মা সুসারিদেবীও। বললেন, “মঙ্গলাকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিয়েছি। বিয়ের পর সুপারের ঘরে পাশাপাশি চেয়ারে বসে বর-কনে হাসিমুখে পরস্পরকে মিষ্টিমুখও করালেন। কেমন লাগছে? দু’জনেই এক সঙ্গে বললেন, “ভাল।”
মঙ্গলাকে অবশ্য এ দিন স্বামী ছাড়াই বাড়ি ফিরতে হল।. সরকারি কৌঁসুলি বলেন, “বিয়ের শংসাপত্র আদালতে জমা দেওয়ার পরে আদালতই কাঞ্চনকে ছাড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।” |