আজ এশিয়া কাপ ফাইনাল
বিশ্বজয়ীদের নীরব প্রস্থানের মধ্যে বাংলার ক্রিকেট-স্বপ্নের গর্জন
বুধবার রাতে এশিয়া কাপ ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা হোটেলে ঢুকছেন। বাইরেটায় উপচে পড়া সমর্থকদের ভিড়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছে। কখনও তাদের মুখে সাকিব-আল-হাসানের নাম। কখনও তামিম ইকবালের নাম। আর ভারতীয় ক্রিকেটারদের অনেকে তখন রিসেপশনে নেমে এসে নিজেদের বিল মেটাচ্ছেন। একটা টিম বন্দিত হতে হতে ঢুকছে। আর একটা টিম নিঃশব্দে বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, একটা টিম যেন এশীয় ক্রিকেটে চেক-ইন করছে। আর একটা টিম চেক-আউট।
একটা টিম এই প্রথম কোনও বড় টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলছে। যেখানে তারা ছিটকে দিতে পেরেছে ভারত আর শ্রীলঙ্কার মতো টিমকে। উৎসবের রাতে ভেসে যাচ্ছে গোটা দেশ। রাস্তায়-রাস্তায় আজও দেখা গেল লোকে আনন্দ করছে। সাকিবদের নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছে। প্রার্থনা করছে, ফাইনাল জিতে যাও। আর সেই উৎসবের রং, উচ্ছ্বাস ভুলে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পরের দিন তাদের ক্রিকেটারেরা প্র্যাক্টিসে পৌঁছে যাচ্ছে কাপ-জেতার আরও বেশি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ চোখমুখ নিয়ে।
স্বস্তির ফেরা: একশোর একশো পকেটে। মুম্বইয়ে নিজের বাড়ির দিকে সচিন তেন্ডুলকর। বুধবার। ছবি: পিটিআই।
বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বলে গেলেন, “আমরা দারুণ সেলিব্রেশন করেছি। পরপর দু’টো বড় ম্যাচ জেতার আনন্দ তো আছেই। কিন্তু আমরা সবাই এটাও মনে রাখার চেষ্টা করছি যে, আরও বড় একটা ম্যাচ রয়েছে কাল। আমরা চাইব ফাইনালটা জিততে যাতে আবার আমরা উৎসব করতে পারি।” বললেন, গতকাল শ্রীলঙ্কা ইনিংস শেষ হওয়ার পর মাশরাফি মর্তুজার ভোকাল টনিকের কথা। “মাশরাফি ভাই এমন একজন প্লেয়ার যে খেলুক বা না খেলুক, ড্রেসিংরুমে থাকলেই মনোবল চাঙ্গা করে দেবে। সাধারণত ব্রেকে আমরা ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলি। কিন্তু কাল শ্রীলঙ্কা ইনিংস শেষ হওয়ার পর মাঠে গোল হয়ে দাঁড়িয়েই কথা বলেছিলাম। সেখানে কথা বলে মাশরাফি ভাই।”
একটা টিম ওয়ান ডে-তে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর মতো বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়েছে। বিশ্বকাপ থেকে ভারতকে ছিটকে দেওয়ার মতো অঘটন ঘটিয়েছে। কিন্তু কোনও দিন পরপর ফেভারিটদের হারিয়ে ক্রিকেটের কোনও গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল খেলেনি। অন্য টিমটা দু’বারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। আর কয়েক দিনের মধ্যে কাপ-জয়ের বর্ষপূর্তি হতে যাচ্ছে। অথচ কী নিঃশব্দে, নিভৃতে প্রস্থান ঘটছে তাদের! বছর ঘুরতে না ঘুরতেই কপিলের বিশ্বকাপজয়ীদের সঙ্গে ধোনিদের বিশ্ববিজয়ীদের কত তফাত। আজও ২৫ জুনের আগমন মানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কপিলের দৈত্যদের স্মরণ করা। লর্ডসের ব্যালকনিতে কাপ হাতে কপিলের সেই ছবি। সেখানে ধোনিদের প্রথম অ্যানিভার্সারির আগে-আগে এসে পড়েছে তিক্ত সব কাটাছেঁড়া। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় উপর্যুপরি বিপর্যয়। ঢাকায় এসে এশিয়া কাপ ফাইনালের আগেই বিদায়।
কাপ-জয়ের মধুচন্দ্রিমা কোথায়, সংসারে বরং ভাঙন আর বিতর্কের আগুন। কেউ মনে রাখার মতো মেজাজেই নেই যে, কপিলের বিশ্বকাপজয়ী টিমও ফিরে এসে দেশের মাটিতে পাঁচ ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ০-৫ দুরমুশ হয়েছিল। হোটেল থেকে চেক-আউটের সময় ভারতীয় দলের এক সদস্যের বলে যাওয়া কথাগুলো হোবার্ট আর ঢাকার পরিস্থিতিকে সবথেকে ভাল তুলে ধরছে। “সে দিন মালিঙ্গা চার উইকেট নিয়ে আমাদের ছিটকে দিল। কাল বোলিংটাই করতে পারল না! আমরা ছিটকে গেলাম!”
এমনিতে ঢাকায় ভারতকে নিয়ে আবেগ বুঝে ওঠা খুব কঠিন ব্যাপার। সচিন নিরানব্বইতে আটকে গেলে হাততালি, সেঞ্চুরি করলেও জয়ধ্বনি। তবে এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, সৌরভের আমলে এখানে ভারতীয় ক্রিকেট দল যে রকম সমর্থন পেত, সেটা অনেক কমেছে। তার একটা কারণ যদি সৌরভের অনুপস্থিতি হয়, অন্য কারণ ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সম্পর্ক। প্রকাশ্য রেষারেষির পর্যায়ে না গেলেও ডালমিয়ার আমলের সেই সৌহার্দ্যের হাওয়া আর নেই। সদ্য হওয়া বিপিএলেই যেমন বাংলাদেশের ক্রিকেট কর্তারা খুব চেয়েছিলেন, কয়েক জন ভারতীয় ক্রিকেটারকে ছাড়া হোক। অন্তত সৌরভের মতো প্রাক্তন কাউকে। ভারতীয় বোর্ড সৌরভ কী, কলকাতা নাইট রাইডার্স যাঁকে গত বার লক্ষ্মীরতন শুক্লকে বসিয়ে প্রায় প্রত্যেকটা ম্যাচ খেলিয়েছে সেই রজত ভাটিয়াকে পর্যন্ত ছাড়েনি। কয়েকটি বৈঠকে ভারতীয় বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এত উত্তেজিত সব কথাবার্তা হয়েছে যে, কারও কারও মনে হয়েছিল এশিয়া কাপ খেলতে এলে ভারত যতটা না সমর্থিত হবে তার চেয়ে বেশি ধিকৃত হবে। তাঁদের মতে, সচিন এবং তাঁর শততম সেঞ্চুরির মায়াবী আকর্ষণ না থাকলে গ্যালারিতে এই সমর্থনটাও এ বার থাকে না। এই যেখানে প্রেক্ষাপট, সেখানে বুঝতে অসুবিধে থাকে না ভারতকে ছিটকে দিয়ে ফাইনালে যাওয়ার রং উৎসবেরই হবে। আক্ষেপের সানাই ততটা বাজবে না।
ক্রিকেটমহলে যদিও বিলাপ চলছে সচিনদের বিদায় নিয়ে। তার সবথেকে বড় কারণ আর একটা ভারত-পাক ম্যাচ ফস্কে যাওয়া। ইউনিস খান যেমন এ দিন বলে গেলেন, “ভারতের সঙ্গে ফাইনাল খেলতে পারলে সেটা অবশ্যই অন্য রকম অনুভূতি হত। ভারত-পাক ম্যাচ সব সময়ই স্পেশ্যাল। কিন্তু বাংলাদেশ এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচ থেকেই ভাল খেলেছে। আমাদের সঙ্গে প্রথম ম্যাচেই ওরা যে রকম লড়াই করেছিল সেটা দেখে বুঝে যাই এই টুর্নামেন্টে ওরা অনেক দূর যেতে পারে।” সঈদ আজমলকে নিয়ে প্রশ্ন করা হল। প্রাক্তন পাক অধিনায়ক বললেন, “আজমলকে বুঝতে হবে এটা জীবনের অঙ্গ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে এলে মানেই তোমাকে চাপ সামলানোর কৌশল জানতে হবে।” খোঁচা দিতেও ছাড়লেন না, “প্রত্যেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের জীবনে চাপ আছে। সচিন তেন্ডুলকরেরও আছে। বাংলাদেশ ম্যাচে ও শততম সেঞ্চুরি পেল। কিন্তু ওর টিম হেরে গেল।”
ঢাকার রাস্তায় আনন্দ-উৎসব দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেও কি কেউ আন্দাজ করতে পেরেছে সাকিব-আল-হাসানরা এশিয়া কাপ ফাইনাল খেলবেন? আর সচিন তেন্ডুলকর মুম্বই ফেরার বিমান ধরবেন? আবার মনে হচ্ছে, তিরাশির ২৫ জুন কপিলের দৈত্যরা বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলবে সেটাই বা কে ভাবতে পেরেছিল? লর্ডসে হারার দশ বছরের মধ্যে অস্তমিত হয় ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট সূর্য। আর কখনও তারা বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেনি। বরং তিরাশিতে তাদের যারা হারিয়েছিল, তারা দু’দু’বার কাপ ফাইনাল খেলে। ২০০৩-এ রানার্স। ২০১১-তে চ্যাম্পিয়ন। এশিয়া কাপ অবশ্যই বিশ্বকাপ নয়। এখানে মাত্র চারটে টিমের লড়াই। কিন্তু উপমহাদেশীয় ক্রিকেটের ভরকেন্দ্রে একটা জোরালো কম্পন অন্তত ঘটিয়ে রাখল।
রিখটার স্কেলে সেই কম্পনের মাত্রা কত এখনও মাপা যাচ্ছে না। ধরা পড়বে একমাত্র বৃহস্পতিবার মীরপুরের মাঠে ফাইনালের পর!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.